দুদক সচিবের হাতে তদন্ত কর্মকর্তাদের বদলির ক্ষমতা, টিআইবির উদ্বেগ

দুদক সচিবের হাতে তদন্ত কর্মকর্তাদের বদলির ক্ষমতা, টিআইবির উদ্বেগ

দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান, তদন্তে নিয়োজিত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক ও সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের পদায়ন ও বদলির ক্ষমতা কমিশনের সচিবের হাতে ন্যস্ত করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। শনিবার এই সংস্থার এক বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, দুদক সচিব কর্তৃক জারিকৃত ডেলিগেশন অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল পাওয়ার (প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ) বিষয়ক কার্যালয় আদেশে অনুসন্ধান ও তদন্তে নিয়োজিত উপপরিচালক ও সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের পদায়ন ও বদলির ক্ষমতা দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের হাত থেকে সরিয়ে সচিবের হাতে ঢালাওভাবে ন্যস্ত করা হয়েছে। গত ১৮ ডিসেম্বর আদেশটি জারি করা হয়।

ওই আদেশের ফলে দুর্নীতি প্রতিকারে কমিশনের ক্ষমতা পদদলিত হওয়ার ভয়ানক শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে এই আদেশ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।

বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী দুদকের নির্বাহী ক্ষমতা চেয়ারম্যান ও তার নেতৃত্বে কমিশনারদের হাতে অর্পিত এই প্রতিষ্ঠানের মূল ম্যান্ডেট সংক্রান্ত ওই নির্বাহী ক্ষমতা ঢালাওভাবে সচিবের হাতে অর্পণের এই গুরুত্বপুর্ণ সিদ্ধান্তটি কী প্রক্রিয়ায়, কোন যুক্তিতে হলো? কমিশনের ক্ষমতা খর্ব হবার শঙ্কার বিষয়টি কতোটা বিবেচিত হয়েছে? সিদ্ধান্তটি কি কমিশন কর্তৃক সজ্ঞানে গৃহীত, নাকি এতোদিন 'নখদন্তহীন বাঘ' হিসেবে কথিত এই গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাকে বাস্তবে রূপান্তর করার এক অশুভ প্রয়াসের ফসল- এমন প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক।'

তিনি আরও বলেন, এসব প্রশ্নের যৌক্তিক উত্তর পাওয়া জরুরি, বিশেষ করে কমিশন কেন নিজের হাতে থাকা ওই ক্ষমতাসহ আরও কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ এখতিয়ার সচিবের তথা আমলাতন্ত্রের হাতে নিরঙ্কুশভাবে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো? সেটিরও স্পষ্টীকরণ প্রয়োজন।

সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও বিভাগের দৃষ্টান্ত অনুসরণের যে ব্যাখা গণমাধ্যমে দুদকের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে তাতে দুদক যে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান নয় তা অনুধাবনে ব্যর্থতার পরিচায়ক উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান এই অশুভ কার্যালয় আদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

টিআইবি বলেছে, ওই আদেশে শুধু উপপরিচালক ও সহকারী পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নই নয়, এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের বলে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের চাকরি স্থায়ী ও নিয়মিতকরণ, চলতি দায়িত্ব প্রদান, ভাতা ও ছুটি, পেনশন, পিআরএল এবং মামলার সাজার প্রেক্ষিতে পুরস্কার ইত্যাদি সকল ক্ষমতা আমলাতন্ত্রের হাতে অর্পিত হয়েছে। দুদক এখন পুরোপুরিভাবে প্রাক্তন ব্যুরোতে সম্পূর্ণভাবে রূপান্তরিত হওয়ার ক্ষেত্রে আর কিছুই বাকি থাকলো না।

ওই আদেশের ছ অনুচ্ছেদের ৪ নং সিদ্ধান্ত অনুযায়ি অনুযায়ি যে রূপ ঢালাওভাবে দুদক আইনের ১৬ ধারার আওতাভুক্ত সকল এখতিয়ার বাস্তবায়নের পূর্ন ক্ষমতা সচিবের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাতে ওই আইনের ৩ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ি দুদকের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হওয়ার জনপ্রত্যাশার কফিনের শেষ পেরেক ছাড়া আর কিছুই নয়। টিআইবি আদেশটিকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূণ্য সহনশীলতার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে পদদলিত করার হতাশাব্যঞ্জক দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচনা করেছে।