উচ্ছেদ অভিযানে যাওয়া কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের হুমকি পুলিশের

উচ্ছেদ অভিযানে যাওয়া কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের হুমকি পুলিশের

রাজধানীতে নির্মাণাধীন একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্স উচ্ছেদ করতে অভিযানে গিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কর্মকর্তারা। এ সময় ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের বাধায় তাঁরা উচ্ছেদ অভিযান না করেই ফিরে যান। পুলিশ সদস্যরা সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারেরও হুমকি দেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রাজধানীর আসাদগেট মোড়ে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে নির্মাণাধীন ওই স্থাপনা উচ্ছেদ করতে যান ডিএনসিসির কর্মকর্তারা। তখন তাঁরা পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে উচ্ছেদ না করেই ফিরে যেতে হয় কর্মকর্তা–কর্মচারীদের।

উচ্ছেদ অভিযানে যাওয়া উত্তর সিটির কর্মকর্তাদের অভিযোগ, পুলিশের সদস্যরা উচ্ছেদের কাজে তাঁদের শুধু বাধা–ই দেননি, তাঁদের গ্রেপ্তার করার এবং উচ্ছেদ অভিযানে ব্যবহৃত ডাম্প ট্রাক ও পে-লোডার জব্দ করে ডাম্পিংয়ে পাঠানোর হুমকিও দিয়েছেন।

উত্তর সিটির উপপ্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মফিজুর রহমান জানান, গতকাল সোমবার আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদসহ তাঁরা মোহাম্মদপুরের আসাদগেট থেকে একটি সভা শেষে ফিরছিলেন।

এ সময় তাঁরা দেখতে পান, আসাদগেটে সড়ক বিভাজকের মধ্যে ট্রাফিক পুলিশের বসার জন্য এক কক্ষের ঘর করেছে। পাকা ওই ঘর তৈরির কাজ চলছে। বিষয়টি দেখে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা নেমে পুলিশ সদস্যদের বলেন, এটি নির্মাণের আগে কেন তাঁরা অনুমতি নেননি।

মফিজুর রহমান বলেন, এ সময় পুলিশের সদস্যরা আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীরকে বলেন, তাঁরা মেয়রের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন। পরে মোতাকাব্বীর তাৎক্ষণিক উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়ে পরে আবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে পর দিন (মঙ্গলবার) ভোররাতে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।

সিটির কর্মকর্তারা বলেন, সিটি কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ সকালে পে-লোডার, ডাম্প ট্রাক প্রস্তুত করে অভিযানে যান উত্তর সিটির কর্মকর্তারা। এ সময় সেখানে তিন থেকে চারজন পুলিশ সদস্য ছিলেন। তাঁরা মুঠোফোনে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের ডেকে আনেন। পুলিশের কর্মকর্তারা এসেই বলতে শুরু করলেন, ‘ওদের অ্যারেস্ট করেন, পে-লোডার ডাম্পিংয়ে নিয়ে যান।’

সিটি কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, পুলিশের সদস্যরা তাঁদের উদ্দেশ্য করে বলেন, তাঁরা ভোররাতে আসছে চুরি করতে, তাঁরা কি এখানে উচ্ছেদ করতে আসছে? উচ্ছেদ করতে আসার আগে কেন পুলিশকে জানায়নি। তাঁরা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এগুলো করছেন। তাঁদের সবাইকে গ্রেপ্তার করেন।

সিটির কর্মকর্তারা বলেন, বিষয়টি তাৎক্ষণিক আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদকে জানানো হলে তিনি পুলিশের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি অভিযান না করে সবাইকে চলে যেতে বলেন। পরে তাঁরা সকাল সাড়ে সাতটার দিকে সেখান থেকে চলে যান।

মোতাকাব্বীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, আসাদ অ্যাভিনিউয়ে সড়ক বিভাজকে আসাদের যে স্মৃতি ফলক আছে, সেটি নির্মাণাধীন পুলিশ বক্সের কারণে আড়াল হয়ে গেছে। সকালে এটি ভাঙতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। সেখানে উপপ্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মফিজুর রহমান ছিলেন। তাঁকে পুলিশ গ্রেপ্তারের হুমকি দেয়।

আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি নিয়ে পরে তিনি ডিসি ট্রাফিকের (তেজগাঁও) .... সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বললেন, তাঁরা এটি ভাঙতে দেবেন না। এটি কমিশনারের বিষয়। এর বেশি কিছু তিনি বললেন না।

অভিযোগ প্রসঙ্গে ডিসি ট্রাফিক শাহেদ আল মাসুদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এখানে হুমকির কিছু নেই। আসাদগেটে নির্মাণ নয়, ট্রাফিক পুলিশ বক্স সংস্কার করা হয়েছে। আর কোনো স্থাপনা ভাঙতে হলে তো ম্যাজিস্ট্রেটসহ কিছু প্রক্রিয়া আছে। হুট করে কেউ এসে একটা ঘর ভেঙে দিয়ে গেল, এভাবে তো সম্ভব নয়। তাঁর ভাষায়, যথাযথ প্রক্রিয়ায় ডিএমপি কমিশনারকে জানালে তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটিই হবে। হুট করে সকালবেলায় ভাঙচুরের কোনো সুযোগ নেই।