বজ্রপাতে হবিগঞ্জে ৬ জনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিহত ২৭

বজ্রপাতে হবিগঞ্জে ৬ জনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিহত ২৭

ঢাকা, ৯ মে (জাস্ট নিউজ) : কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাতে হবিগঞ্জে ৬ জনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৭ জন নিহত ও ১৮ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী, সুনামগঞ্জ, নীলফামারী ও কিশোরগঞ্জে দুইজন করে মারা গেছে। এদিকে ময়মনসিংহের ভালুকায় প্রাইমারী স্কুলে বজ্রপাতে ৬ শিক্ষার্থীসহ সাতজন আহত হয়েছে। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

হবিগঞ্জের চার উপজেলায় বজ্রপাতে অন্তত ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরো ৯ জন। লাখাই, মাধবপুর, বানিয়াচং ও নবীগঞ্জে এসব বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রাজশাহীর তানোর উপজেলায় বজ্রপাতে তিনজন নিহত হয়েছেন। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার দুবইল ও বাতাসপুর গ্রামের এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো দুইজন। নিহতরা হলেন- বাতাসপুর গ্রামের কৃষক আনসার আলী (৩০), দুবইল পূর্বপাড়ার কিশোর সোহাগ আলী (১৬) ও চকরতিরামপুরের এলিনা মুরমু (৩৫)। আহতরা হলেন- বাতাসপুর গ্রামের আনন্দ সাহা (৩২) ও লিটন চন্দ্র সাহা (৩০)।

উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির উপ-সহকারী প্রকৌশলী এনামুল হক জানান, সকালে বৃষ্টির সময় বজ্রপাত হয়। এ সময় মাঠে ধান কাটাতে গিয়ে উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের বাতাসপুর গ্রামের লোকমান আলীর ছেলে আনসার আলী বজ্রপাতে মারা যান। আহত হন একই গ্রামের অনিল সাহার ছেলে আনন্দ শাহা ও হিরেন সাহার ছেলে লিটল শাহা।

অপরদিকে, প্রায় একই সময় উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের দুবইল গ্রামের পূর্বপাড়ার সামসুদ্দীনের ছেলে সোহাগ আলী (১৬) মাঠে গভীর নলকুপে কাজ করছিল। এসময় বজ্রপাতে ঘটনা স্থলে মারা যায় সে। আর ধান কাটার সময় বজ্রপাতে মারা যান এলিনা মুরমু।

তানোর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা শওকাত আলী বলেন, বজ্রপাতে তিনজন মারা গেছেন। খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী (ভূমি) কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে পাঠানো হয়। নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য ২০ হাজার টাকা ও ৩০ কেজি করে চাল সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তানোর থানার ওসি রেজাউল ইসলাম জানান, লাশ স্বজনরা নিয়ে গেছেন।

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার উদাখালি ইউনিয়নের পূর্ব ছালুয়া গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মহর আলী (৩৫) উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের কাবিলপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদ মিয়ার ছেলে।

সুনামগঞ্জের হাওরে পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় দুই কৃষক নিহত হয়েছেন। বুধবার দুপুরে জেলার শাল্লা উপজেলার কালিয়াকুটা ও ধর্মপাশা উপজেলার কাইল্যানি হাওরে এই ঘটনা ঘটে।

শাল্লা উপজেলার কালীকুটা হাওরে নিহত হয়েছেন কৃষক আলমগীর হোসেন (২৩)। তিনি উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের ইদ্রিস আলীর (যুক্তি মিয়া) ছেলে। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে কালিয়াকুটা হাওর থেকে বাড়িতে আসার সময় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন।

এদিকে ধর্মপাশায় বজ্রপাতে জুয়েল মিয়া (১৮) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। জুয়েল মিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের দুর্বাকান্দা গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে। বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার কাইল্যানি হাওরে এ ঘটনা ঘটে।

জুয়েল মিয়া কাইল্যানি হাওরে ধান কাটছিলেন। এসময় আকস্মিক বজ্রপাত হলে জুয়েল মিয়া গুরুতর আহত হন। তার সঙ্গে থাকা শ্রমিকরা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে।

অপরদিকে একই সময়ে ধর্মপাশা সদর ইউনিয়নের বাহুটিয়াকান্দা গ্রামে বজ্রপাতে দিলহজ (২৪) নামের এক কৃষক ধান মাড়াইয়ের সময় আহত হয়েছে। দিলহজ বাহুটিয়াকান্দা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাবিবুল্লাহ জুয়েল বলেন, ‘পৃথক ব্রজপাতের ঘটনায় ২ জন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।’

কিশোরগঞ্জের নিকলী ও পাকুন্দিয়া উপজেলায় বজ্রপাতে দুইজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন- নিকলী উপজেলার ছাতিরচর ইউনিয়নের পরিষদপাড়া গ্রামের শাহ জালাল (২৪) ও পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়ন পরিষদের আশুতিয়া গ্রামে দিপালী রানী বর্মণ (৩৫)

সুখিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হামিদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, শাহ জালাল হাওরের জমি থেকে ইঞ্জিন চালিত ট্রলি দিয়ে ধান আনার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান। আর রান্না ঘরে কাজ করার সময় বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন দিপালী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে মো. হাবিবুর রহমান (৪৭) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি মৌলভীর চরের মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে। বুধবার উপজেলার চর আমখাওয়া ইউনিয়নের মৌলভীর চরে এ ঘটনা ঘটে বলে নিহতের স্বজন শহীদুল হক জানান।

তিনি বলেন, হাবিবুর কৃষিশ্রমিকদের সঙ্গে বাড়ির কাছেই ধান কাটতে যান। হঠাৎ বজ্রবৃষ্টি শুরু হলে তিনি ধানকাটা বাদ দিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হন। পথে বজ্রপাত হলে তিনি সংজ্ঞা হারান। স্থানীয়রা তাকে প্রথমে সানন্দবাড়ি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এবং পরে পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ময়মনসিংহের সদর উপজেলায় বজ্রপাতে আলাল উদ্দিন (৬০) নামে একজন নিহত হয়েছেন। এ সময় মুক্তাগাছায় আটজন আহত হন। বুধবার দুপুরে উপজেলার চর নীলক্ষীয়ায় বজ্রপাতে আলা উদ্দিন মারা যান নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মাহমুদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, বাড়ি থেকে বের হয়ে আলাল উদ্দিন গরু আনতে যাচ্ছিলেন। এসময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

নীলফামারীর জলঢাকায় বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- আসমা বেওয়া (৫০) ও নুর আমিন (৪৫)। বুধবার সকালে তাদের মৃত্যু হয়। জলঢাকা থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমান জানান, উপজেলার বালাগ্রাম ইউনিয়নের ঢুকঢুকি শালনগ্রাম গ্রামের মৃত ইসলাম উদ্দিনের স্ত্রী আসমা বেওয়া বাড়ির বারান্দায় বসে থাকলে হঠাৎ বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। অন্যদিকে একই ঘটনায় কাঠালী ইউনিয়নের উত্তর দেশীবাই গ্রামের মৃত ছফর উদ্দিনের ছেলে নুর আমিন ঘরের বারান্দা থেকে ধান আনতে গেলে মৃত্যু হয়।

মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলায় বুধবার বজ্রপাতে এক শিশুশিক্ষার্থীসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ১২ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বজ্রপাতে নিহতরা হলেন- উপজেলার বাচামারা ইউনিয়নের হাসাদিয়া গ্রামের কৃষক ইয়াকুব আলী শেখ (৪৮) এবং উপজেলার কলিয়া ইউনিয়নের তালুকনগর গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম ওরফে অন্তর (১২)। সে স্থানীয় তালুকনগর উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল।

আহত শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জানান, বেলা দেড়টার দিকে তালুকনগর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাওয়ার জন্য (টিফিনের) ছুটি দেওয়া হয়। এ সময় বৃষ্টি না হলেও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। বেলা পৌনে ২টার দিকে বিদ্যালয়টির আঙিনায় মাঠের এক পাশে দোকানদারের কাছ থেকে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী চানাচুর ও বিস্কুট কিনে খাচ্ছিল। এ সময় আকস্মিক বিকট শব্দে বজ্রপাত হলে ১৩ শিক্ষার্থী আহত হয়। এর মধ্যে মুমূর্ষ অবস্থায় সাইফুল ইসলামকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১০ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুর রহমান।

এ দিকে সকালে দৌলতপুরের বাচামারা ইউনিয়নের হাসাদিয়া গ্রামে বজ্রপাতে কৃষক ইয়াকুব আলী শেখ নিহত হয়েছেন।

বাচামারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ জানান, সকালে হাসাদিয়া গ্রামে বাড়ির পাশে ধানখেতে আগাছা পরিষ্কার করছিলেন। সকাল ৯টার দিকে বজ্রপাতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর বজ্রপাতে সমতুল্লাহ (৫০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছেন। এছাড়াও শাকিল মিয়া (১৫) নামে এক স্কুলছাত্র আহত হয়েছে। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের পানাগাড়ি চরে ও সকাল ১১টার দিকে খাস রাজবাড়ি চরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সমতুল্লাহ পানাগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ও আহত শাকিল খাস রাজবাড়ি গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে।

কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম জানান, পানাগাড়ি চরে নিজের ক্ষেতে কাজ করছিলেন কৃষক সমতুল্লাহ। এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হওয়ায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। অপরদিকে সকাল ১১টার দিকে খাসরাজবাড়ি হাইস্কুলে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে ঝলসে যায় স্কুলছাত্র শাকিল। তাকে উদ্ধার করে কাজিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জে সোনারগাঁয়ের জামপুরের তিলাবো গ্রামে বজ্রপাতে কুলফী আক্তার (৮) নামে এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত কুলফী বাছাবো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির ছাত্রী।

এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের তিলাবো গ্রামের শাহ কামালের মেয়ে কুলফী আক্তার ও সহপাঠি নাইম, পরাগ বাড়ির পাশে খেলাধুলা করছিল। নাইম ও পরাগ বাড়িতে চলে যায়। পরে কুলফী আক্তার একা খেলা করে। এ সময় বজ্রপাতের ঘটনা ঘটলে কুলফী আক্তার আহত হয়। তাকে স্থানীয় নয়াপুর এলাকায় একটি ক্লিনিকে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

(জাস্ট নিউজ/একে/১৭৪৬ঘ.)