নভেম্বরেও দুর্ঘটনায় পড়েছিল ইমাদ পরিবহনের বাসটি

নভেম্বরেও দুর্ঘটনায় পড়েছিল ইমাদ পরিবহনের বাসটি

মাদারীপুরের শিবচরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়া ইমাদ পরিবহনের বাসটি (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৩৩৪৮) চার মাস আগেও দুর্ঘটনায় পড়েছিল। গত ১৭ নভেম্বর গোপালগঞ্জের গোপীনাথপুরে থেমে থাকা ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কায় বাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে পুলিশ সদস্যসহ তিনজন নিহত হন। সেই মামলায় বাসটি জব্দ হয়েছিল। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও ইমাদ পরিবহন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত ১৯ জানুয়ারি দুর্ঘটনা কবলিত বাসটির ফিটনেস সনদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সার্ভারে সার্চ করে দেখা যায়, বাসটি সাসপেন্ড রয়েছে। অর্থাৎ, বাসটির নিবন্ধন ও চলাচলের অনুমতি স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও বিআরটিএ এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে বাসটি কীভাবে চলছিল- এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি।

অনুমতিহীন বাস কীভাবে চলছিল জানতে চাইলে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার স্বীকার করেছেন, এনফোর্সমেন্ট (আইন প্রয়োগে) দুর্বলতা রয়েছে।

তিনি বলেন, দেশে দেশে লাখ লাখ যানবাহন চলে। কোন গাড়ির চলাচলের অনুমতি নেই- তা ধরা বিআরটিএর পক্ষে কঠিন। তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইমাদ পরিবহনের ওই বাসটির গত ১৭ নভেম্বরের দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বিআরটিএ’র ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ। তিনি জানান, মাদারীপুরের হতাহতের ঘটনায় পুলিশ মামলা করবে। বাসটি রাজধানীর উত্তরা সার্কেলে নিবন্ধিত। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষও মামলা করবে।

আজ রোববার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর এলাকায় ইমাদ পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে এখন পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন।

ইমাদ পরিবহনের মালিক হাবিবুর রহমান শেখের বাড়ি গোপালগঞ্জে। তিনি থাকেন সৌদি আরবে। তার হয়ে ওয়াহিদুল ইসলাম টুলু মিয়া ওই কোম্পানিটি পরিচালনা করেন। তার দাবি, বাস চলাচলের অনুমতি স্থগিত করা হয়নি। সার্ভার থেকে ব্লক করায় ফিটনেস হালনাগাদ করতে পারেননি তারা। রোববার সকালে চাকা ফেঁটে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

ওয়াহিদুল ইসলাম আরও দাবি করেন, ১৭ নভেম্বরের দুর্ঘটনায় বাসের কোনো দোষ ছিল না। ১৬ দিন পর আদালত থেকে জামিনে বাস বুঝে পান তারা। বাসের সব কিছুই ঠিক ছিল।

গত বছরের দুর্ঘটনার দু'দিন পর (১৯ নভেম্বর) সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় বাসটি দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ‘ক্রেন দিয়ে সড়ক থেকে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া বাসটি সরিয়ে নেওয়ার পর যান চলাচল শুরু হয়।’ তবে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া ওই বাসটি কীভাবে জব্দ অবস্থা থেকে ছাড়া পেয়ে মেরামত করে আবার যাত্রী পরিবহনে ফিরছে- এর জবাব নেই বিআরটিএ’র কাছে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছে, ২০২২ সালে সড়কে ছয় হাজার ৭৪৯ দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ৯৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা গত ৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানায়, ২০২২ সালে সাত হাজার ৭১৩ জনের প্রাণ গেছে সড়কে, যা আগের বছরের চেয়ে ২২ শতাংশ বেশি।

তবে পুলিশের বরাতে বিআরটিএ জানিয়েছে, ২০২২ সালে পাঁচ হাজার ২০০ দুর্ঘটনায় চার হাজার ৬৩৮ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় সড়কে মৃত্যু প্রায় ৯ শতাংশ কমেছে।