ঢাবি লেদার ইনস্টিটিউটে নিয়োগ

১৬ লাখ টাকা ভাগাভাগির কল রেকর্ড ফাঁস, এসেছে ছাত্রলীগের ৫ নেতার নাম

১৬ লাখ টাকা ভাগাভাগির কল রেকর্ড ফাঁস, এসেছে ছাত্রলীগের ৫ নেতার নাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে মেশিন অপারেটর পদে দুইজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি একটি কল রেকর্ড ফাঁস হওয়ার পরে এ অভিযোগ উঠেছে। ওই কল রেকর্ডে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক পাঁচ নেতার নাম জড়িত।

কল রেকর্ডের কথোপকথনে জানা যায়, গত ১৯ মার্চ ইনস্টিটিউটে মেশিন অপারেটর পদে রানা এবং আব্দুল্লাহ আল মামুন লিমন নামে দুইজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই নিয়োগে দুই প্রার্থীর কাছ থেকে ৮ লাখ করে মোট ১৬ লাখ টাকা নেন ছাত্রলীগের ওই পাঁচ নেতা।

অভিযুক্তরা হলেন- ঢাবি লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহফুজুর রহমান ফাহাদ, সাধারণ সম্পাদক খবির হোসেন সুমন, হাজারিবাগ থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবুল হাসনাত বাহার, লেদার ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি মুইন মুহতাদিউল হক রাহাত এবং সাধারণ সম্পাদক রেদোয়ানুল হক।

এদের মধ্যে আবুল হাসনাত বাহার নিজ কার্যালয়ে রাহাত বাদে অন্য তিনজনকে ভাগের ৩ লাখ ২০ হাজার করে টাকা দেন। রাহাতের টাকা বাহার নিজের কাছে রেখে দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রাহাত গত বুধবার রাতে রাসেলকে ফোন দেন।

সমকালের হাতে আসা ফোনালাপের অডিও রেকর্ডটি ১ মিনিট ৮ সেকেন্ডের। এতে রেদোয়ানুল হকের উদ্দেশে রাহাতকে বলতে শোনা যায়, ‘তোমাদের কী হইছে, এটা আমাকে খুলে বলো তো?’

উত্তরে রাসেল বলেন, ‘‘আমাকে বাহার ভাই ফোন দিয়েছিলেন। ফোন দিয়ে উনি আমাকে বলছেন, ‘অফিসে আয়।’ সবাইকে ফোন দিয়ে উনি ডাকছেন। এরপর সবাই সেখানে যাওয়ার পর আপনাকে (রাহাত) ফোন দিয়েছিলেন উনি। আপনাকে ফোন দেওয়ার পর উনি সেখানে টাকা ভাগ করেছেন।’’

কীভাবে টাকা ভাগ করা হয়েছে- রাহাত জানতে চাইলে রাসেল বলেন, ‘টাকা পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে।’ বিষয়টি নিশ্চিত হতে রাহাত আবার জিজ্ঞাসা করেন, ‘১৬ লাখ টাকাই পাঁচ ভাগ করা হয়েছে?’ নিশ্চিত করে রাসেল বলেন, ‘হ্যাঁ, পাঁচ ভাগ করছে। মানে সবাইকে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। আর আপনারটা (রাহাত) বাহার ভাইয়ের কাছে রাখা আছে।’

এরপর কাকে কাকে টাকা দেওয়া হয়েছে সেটা বর্ণনা করে রাসেল বলেন, ‘আমাকে (রাসেল), মাহফুজ ভাইকে, সুমন ভাইকে, আপনাকে (রাহাত) এবং বাহার ভাইও ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা করে পেয়েছেন।’ রেকর্ডিংয়ের শেষ দিকে রাহাতকে বলতে শোনা যায়, ‘আচ্ছা, ১৬ লাখকে পাঁচ ভাগ করলে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকাই তো হয়।’

তবে বিষয়টির সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা। অভিযোগের বিষয়ে আবুল হাসনাত বাহার বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।’

মাহফুজুর রহমান ফাহাদ বলেন, ‘রাজনীতিতে অনেকেই অনেককে ফাঁসানোর চেষ্টা করে। এখানে এমনটাই হয়েছে হয়তো। আমি তো এখন পদে নেই। আমি কীভাবে নিয়োগ বাণিজ্য করব? আমি এ বিষয়ে জানি না।’

খবির হোসেন সুমন বলেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’

মুইন মুহতাদিউল হক রাহাত বলেন, ‘রেকর্ডটা শুনলে বোঝা যাবে যে, আমি নিয়োগ বাণিজ্য কিংবা টাকা ভাগাভাগির সঙ্গে জড়িত নই। এই ঘটনা শোনার পর আমি রাসেলের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাই। রেকর্ডে পরিষ্কারভাবে বলাও আছে যে, তারা টাকা পাঁচ ভাগ করেছে। আমাকে না জানিয়ে সভাপতি হিসেবে আমার নামে নাকি তারা টাকা ভাগ করেছে। আমার নামের ভাগের টাকাটা বাহার নিয়েছেন। আমি এই বিষয়ে কিছু জানি না। যদি জানতাম তাহলে এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িতও হতাম না।’ এ সময় তিনি নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত নন বরং বাকিরা জড়িত বলে দাবি করেন।

রেদোয়ানুল হক রাসেল বলেন, ‘এই অভিযোগ সঠিক নয়। উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে আমার নামে এ ধরনের কথা ছড়ানো হচ্ছে।’ রেকর্ডিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রেকর্ডের ওই ব্যক্তি আমি নই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, ‘অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লেদার ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমিও এ ধরনের একটা কথা শুনেছি। এই ধরনের নিয়োগ পরীক্ষা সাধারণত বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মাধ্যমে হয়। এখানে অযোগ্য লোকেদের ঢোকার কোনো সুযোগ নেই। এরপরও নিয়োগপ্রার্থীদের সঙ্গে কে লেনদেন করেছে সেটা আমার জানা নেই।’

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টা দুঃখজনক। আমি যতদূর শুনেছি, দক্ষ এবং যোগ্য লোকেরাই নিয়োগ পেয়েছেন। এরপরও কোনো ধরনের অনিয়ম ও আর্থিক লেনদেনের ঘটনা ঘটে থাকলে আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।’-সমকাল