সুস্থ যুবককে ঢাকার মিন্টো রোডে ‘জিজ্ঞাসাবাদ’, পরে মৃত্যু

সুস্থ যুবককে ঢাকার মিন্টো রোডে ‘জিজ্ঞাসাবাদ’, পরে মৃত্যু

ঢাকা, ১২ মে (জাস্ট নিউজ) : বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল যখন গাড়িচালক আশরাফ আলীকে ধরে নিয়ে যায়, তখনো দিব্যি সুস্থ তিনি। কিন্তু ঢাকার মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে এক দিন ‘জিজ্ঞাসাবাদ’ করার পরই তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেওয়ার তিন ঘণ্টা পর তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর শরীরজুড়ে ছিল আঘাতের চিহ্ন। স্বজনেরা বলছেন, ডিবি পুলিশের মারধরেই আশরাফের মৃত্যু হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬ মে বিকেলে আশরাফের মৃত্যুর পর তাঁর পরিচয়, কোথা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এসব বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে চাননি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। উল্টো হাসপাতালে ভর্তির সময় আশরাফের পরিচয় গোপন করতে নাম লেখা হয় ‘আসলাম’। এ ছাড়া ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ বলে চিকিৎসকের কাছ থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার চেষ্টা চলে। কিন্তু আশরাফের শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকায় ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায়।

জানা যায়, গাড়িচালক আশরাফের (৪২) বাড়ি জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার চরপাকের দহন গ্রামে। ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। তাঁর তিন স্ত্রী। ছোট স্ত্রীকে নিয়ে গাজীপুরের মির্জাপুরের পশ্চিম ডগরি এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকতেন। ‘ডেকর ওয়েট প্রসেসিং লিমিটেড’ নামের একটি কোম্পানির কাভার্ড ভ্যান চালাতেন তিনি। ৪ মে মধ্যরাতে আশরাফ, তাঁর স্ত্রী রিপা ও দুই সন্তানকে ওই বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি। আশরাফ একসময় আশুলিয়া এলাকায় ডিবির তথ্যদাতা (সোর্স) হিসেবেও কাজ করতেন বলে স্বজনেরা জানান। তুলে নিয়ে যাওয়ার ৩৮ ঘণ্টার মধ্যেই মারা যান আশরাফ।

হেফাজতে থাকা অবস্থায় সুস্থ আশরাফের হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর ডিবির যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন প্রথম আলোকে বলেন, নিয়ামুল নামের কাতারপ্রবাসী এক নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবারের কাছে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়েছিলেন আশরাফ। মুঠোফোন নম্বর ধরে তদন্তের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করতে আশরাফ ও তাঁর স্ত্রীকে তাঁরা ডেকে আনেন। একপর্যায়ে আশরাফ অসুস্থ বোধ করেন। তখন তাঁর স্ত্রী ডিবিকে জানান, আশরাফ হার্নিয়া রোগী। হাসপাতালে নেওয়ার পর একপর্যায়ে তিনি মারা যান।

মৃত ব্যক্তির শরীরে আঘাতের চিহ্নের বিষয়ে আবদুল বাতেন বলেন, আপনি বললে তো হবে না। ময়নাতদন্ত হবে। সেখান থেকে জানা যাবে কী হলো।’ হাসপাতালে ভর্তির সময় আশরাফের নাম কেন ‘আসলাম’ লেখা হলো, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, তাঁর আসল নাম কী আপনারা জেনে নিন।

নিয়ামুল নিখোঁজের ঘটনাটি তদন্ত করছিলেন ঢাকা মহানগর ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মাহমুদ নাসের। আশরাফের বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

ময়নাতদন্তের পর আশরাফের লাশ তাঁর ভাই আবদুর রশিদের কাছে হস্তান্তর করেন ডিবির সদস্যরা। আশরাফের শরীরের আঘাতের চিহ্নের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সারা শরীরে মাইরের দাগ ছিল। এ রকম মারলে কেউ বাঁচার কথা না। সুত্র: প্রথম আলো।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৭৩৭ঘ.)