ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের ওয়েবিনার

দলীয় সরকারের চেয়ে তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়, তা প্রমাণিত

দলীয় সরকারের চেয়ে তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়, তা প্রমাণিত

নির্বাচন কেবল একদিনের বিষয় নয়, নির্বাচন একটা প্রক্রিয়া। ভুয়া নির্বাচন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, সংবিধানবিরোধী। দলীয় সরকারের চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে তুলনামূলকভাবে ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তা প্রমাণিত। মঙ্গলবার (২৩ মে) ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত 'সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন: রাজনীতির জন্যে কী ইঙ্গিত?' শীর্ষক বিশেষ ওয়েবিনারের আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা এসব মন্তব্য করেন।

মূল বক্তব্যে লেখক ও স্থানীয় শাসন বিশেষজ্ঞ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, এখন সবাই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছেন, কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় মানুষ কি অবাধে ভোট দিতে পারবেন? এখনতো নির্বাচনে ঘর থেকে বের হওয়ার প্রয়োজন হয় না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে কাউন্সিলর পদে প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে তারা কিছু ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসতে পারবেন। কিন্তু, সে সংখ্যক ভোটার এই পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচন হলে ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। মানুষের কাছে যেতে, মানুষকে সংগঠিত করতে বিরোধী দলগুলো ব্যর্থ হচ্ছে বলেও তিনি মনে করেন।

সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান বলেন, মানুষ যে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে তাতো পরিসংখ্যানই বলছে, এটাই বাস্তবতা। ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে বিরোধীদের বাধা দেওয়ার সক্ষমতা ছিল না, এবার তারা সেটা পারবে কিনা তা সামনেই দেখা যাবে। মানুষ জেগে না উঠলে কিছুই হবে না।

তবে, শহিদ খানের বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করে আরেক আলোচক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, এই সরকারের আমলে বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মামলা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেও জনগণ বারবার জেগে উঠেছে।

বিরোধী দলগুলোর গত এক বছরের সমাবেশগুলোতে ব্যাপক জনগণের উপস্থিতিও সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। আসিফ নজরুল বলেন, ভুয়া নির্বাচন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, সংবিধানবিরোধী। মানুষের সামনে ভালো বিকল্প নেই, এমন কথা বললে জনগণের ভোটাধিকারের প্রতি নিষ্ঠুরতা করা হয়। দলীয় সরকারের চেয়ে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে তুলনামূলকভাবে ভালো নির্বাচন হয় তা প্রমাণিত৷ ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিয়তটাই মূলকথা।

ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে যেই ইভিএম বাতিল করা হলো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সেই ইভিএম ব্যবহার করে নির্বাচন কমিশন বুঝিয়ে দিলো তারা এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় 'কেয়ার' করে না। নির্বাচন মানে শুধু ভোটের দিন নয়, নির্বাচন একটা প্রক্রিয়া। 'বিএনপি ভালো বিকল্প নয়' যারা এমন মন্তব্য করেন তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিএনপি যা খুশি করুক, বিএনপি নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই, বিএনপি'র জন্য মানুষ কি নিজেদের ভোটাধিকার পাবে না? রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্র থাকলো কি থাকলো না, তা দিয়ে কি দেশের আইনের শাসন নির্ধারিত হবে? স্থানীয় সরকার নির্বাচনে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, জাতীয় নির্বাচন কেমন হবে।

বিশিষ্ট সাংবাদিক মনির হায়দারের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত উক্ত ওয়েবিনারের সমাপনী বক্তব্যে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ–এর শিক্ষক জাহেদ উর রহমান বলেন, থাইল্যান্ডে জান্তা সরকার মূলত সবকিছু চালালেও সে দেশে ভালো নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলছেন না। পাকিস্তানের বর্তমান সরকার, সেনাবাহিনী ইমরান খানের প্রচন্ড বিরোধী হলেও ইমরান খান নির্বাচন চাইছেন, নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন না। সে দেশে জাতীয় নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলেও বর্তমান সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলছে না। যতদিন না আমরা অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারবো, ততোদিন আমরা গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে ক্ষুধার্ত মানুষের মতো হয়ে থাকবো।