বাংলাদেশের জন্য ভিসা নীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সুশীল সমাজের প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশের জন্য ভিসা নীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সুশীল সমাজের প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে উৎসাহিত করতে ভিসা নীতির ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি জে ব্লিঙ্কেন। নতুন এই নীতির অধীনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশিকে ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপে সক্ষম হবে দেশটি। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক তথা সর্বমহলে বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সচেতন মহলেও এটি এখন আলোচনার মুখ্য বিষয়। এ নিয়ে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন দেশটির সুশীল সমাজ।

এই পদক্ষেপকে 'সঠিক পথে অগ্রসর হওয়া' বলে বর্ণনা করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ডেপুটি চিফ অফ মিশন এবং দেশটি থেকে প্রকাশিত মাসিক প্রকাশনা ‘সাউথ এশিয়া পারসপেক্টিভস’-এর এডিটর এ্যাট লার্জ জন এফ ড্যানিলোভিজ। তবে, 'ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা একটি মূল চ্যালেঞ্জ হবে' সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে করা এক মন্তব্যে এমনটি স্বীকার করে নিয়ে জন লিখেছেন, ওদের নামকরণে সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। উক্ত বিধিনিষেধ ওইসব ব্যক্তিদের পরিবারের নিকটস্থ সদস্যদের জন্যও প্রযোজ্য হবে উল্লেখ করে আরেকটি মন্তব্যে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, অন্যান্য সমমনা দেশগুলোও একই ধরনের পন্থা অনুসরণ করে অনুরূপ বিধিনিষেধ আরোপ করবে।

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এর এশিয়া এবং বাংলাদেশ বিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা জিওফ্রে ম্যাকডোনাল্ড লিখেছেন, (এই পদক্ষেপ) বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ক্রমবর্ধমান চাপ। স্টেট ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করেছে যে এটি "বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত" যেকোনো বাংলাদেশির উপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করবে। গত ৩রা মে (এই সিদ্ধান্ত) বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়ে দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত, ওয়াশিংটন ডিসির থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠান উড্রো উইলসন সেন্টার এর সিনিয়র পলিসি স্কলার এবং সাউথ এশিয়া পারসপেক্টিভস-এর এডিটর উইলিয়াম বি মাইলামের নেতৃত্বাধীন, ওয়াশিংটন ভিত্তিক অধিকার সংগঠন রাইট টু ফ্রিডম এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নতুন ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চাইছেন তাদের প্রতি সমর্থন জানাতে এবং দেশটিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সেক্রেটারি অফ স্টেট এন্টনি ব্লিঙ্কেন যে রকম ঘোষণা দিয়েছেন সে রকম প্রচেষ্টাকে আমরা সমর্থন করি। বাংলাদেশের অনেক বন্ধুদের মতো আমরাও ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের সাথে এটা লক্ষ্য করেছি যে ঢাকার বর্তমান সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমিত করেছে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য রাজনৈতিক বিরোধীদের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করেছে।

আসছে সপ্তাহ এবং মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র এবং সমমনা অংশীদারদের জন্য এটি প্রদর্শন করা গুরুত্বপূর্ণ হবে যে তারা বাংলাদেশে বিগত দুটি গভীর ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন চক্রের পুনরাবৃত্তি এড়াতে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক। আজকের ঘোষণাটি সঠিক পথে (অগ্রসর হতে) একটি পদক্ষেপ।

ওদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার লিখেছেনঃ সেক্রেটারি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রচারে নতুন ভিসা নীতি অনুমোদন করেছেন। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে বিশ্বাস করা যে কোনো ব্যক্তির উপর আমরা এখন থেকে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবো।