লক্ষ্মীপুর ছাত্রলীগ নেতা জসিম হত্যায় ৮ আসামির মৃত্যুদণ্ড

লক্ষ্মীপুর ছাত্রলীগ নেতা জসিম হত্যায় ৮ আসামির মৃত্যুদণ্ড

লক্ষ্মীপুরে ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাছান জসিমকে গুলি করে হত্যার দায়ে ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। সোমবার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আমিনা ফারহিন এই রায় দেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- আলী হোসেন বাচ্চু, মো. মোস্তফা, মো. খোকন, আবুল হোসেন, মোবারক উল্যা, কবির হোসেন রিপন, জাফর আহম্মদ ও হিজবুর রহমান স্বপন। মেহেদী হাছান জসিম চন্দ্রগঞ্জ কফিল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তিনি সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের মফিজ উল্যার ছেলে। রায়ের সময় ৭ আসামি আদালতে উপস্থিত থাকলেও হিজবুর রহমান স্বপন পলাতক রয়েছেন।

মামলার এজাহার সূত্র জানায়, সদর উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের মফিজ উল্যার সঙ্গে একই বাড়ির মোবারক উল্যা ও আলী হোসেন বাচ্চুদের জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এর জের ধরে আসামিরা ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি মফিজ উল্যাহ ও তার পরিবারের সদস্যদের মারধর করে। এ ঘটনায় থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। এরপর থেকে মফিজের মামলাটি প্রত্যাহার করার জন্য হুমকি দেয় আসামিরা। মামলা প্রত্যাহার না করলে হত্যা করা হবেও হুমকি দেওয়া হয়।

এজন্য মফিজ ও তার পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে না যেতে পেরে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আত্মগোপনে থাকতেন।

একপর্যায়ে প্রতিপক্ষ মোবারকদের করা মামলাটি উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. নুরনবী তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে মফিজের ছেলে হাসান জসিমের নাম বাদ দেওয়ায় মোবারকরা চরম ক্ষিপ্ত হয়। এই কারণে ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাছান জসিম ১০ই ফেব্রুয়ারি রাতে সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের রাধাপুর গ্রামে আত্মীয় গোলাম মাওলার বাড়িতে আত্মগোপনে যায়। জসিমের সঙ্গে তার বড় ভাই আবদুল হাই ও গোলাম মাওলার ভাই মাসুদ একই কক্ষে ঘুমিয়ে ছিল। ওইদিন গভীর রাতে আসামিরা জানালার গ্রিল ভেঙে ঘরে ঢুকে। এসময় তারা জসিমের বুকে গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে জসিমকে উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন মেহেদী হাছান জসিম এর বাবা মফিজ উল্যাহ বাদী হয়ে সদর থানায় মোবারকসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো ১০-১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

সর্বশেষ ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এতে সাক্ষ্য-প্রমানে মোবারক উল্যা, আলী হোসেন বাচ্চু, অজি উল্যা, কবির হোসেন রিপন, হিজবুর রহমান স্বপন, আবুল কাশেম, সফিক উল্যসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এরমধ্যে আসামি আবুল কাশেম, সফিক উল্যা, আমির হোসেন ও অজি উল্যা মারা গেছেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে প্রায় ১১ বছর পর আজ আদালত রায় প্রদান করেন।

মামলার বাদী মেহেদী হাছান জসিমের বাবা মফিজ উল্যা বলেন, আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে। এই মামলায় দীর্ঘদিন পর রায় হয়েছে। রায়ে ৮ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। এতে মামলার রায়ে আমি সন্তুষ্ট। তবে দ্রুত রায় বাস্তবায়ন করার দাবী জানান তিনি।

লক্ষ্মীপুর জজকোর্টের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাছান জসিম হত্যা মামলায় ১২ আসামির বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করে। এরমধ্যে ৪ জন মারা গেছেন। অন্য ৮ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায়ের সময় ৭ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। দণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি হিজবুর রহমান স্বপন পলাতক রয়েছেন। তবে এই রায়ে বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষ সন্তষ্ট প্রকাশ করেছেন।