আজও ৬ জেলায় কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ৮

আজও ৬ জেলায় কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ৮

ঢাকা, ২১ মে (জাস্ট নিউজ) : দেশের বিভিন্ন স্থানে র‌্যাব ও পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আজও ৮ জন নিহত হয়েছেন। রবিবার দিবাগত রাতে রাজশাহী, টাঙ্গাইল, চুয়াডাঙ্গা, নরসিংদী, যশোর ও ঝিনাইদহে এসব ঘটনা ঘটে।

যশোর
রবিবার দিবাগত রাতে যশোরে আরো তিনটি লাশ পড়েছে। এরা সবাই মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। পুলিশের ভাষ্য, মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে গোলাগুলিতে এই তিনজন নিহত হন। ঘটনাস্থল সদর উপজেলার খোলাডাঙ্গা ও মণ্ডলগাতির মাঝামাঝি স্থান এবং তরফনওয়াপাড়া।

এর আগে শনিবার দিবাগত রাতে গুলিতে নিহত হন এক যুবক। আর শুক্রবার দিবাগত রাতে অভয়নগরে র‌্যাবের সঙ্গে ‘কথিত’ বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন তিন মাদক ব্যবসায়ী।

কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজমল হুদা, এসআই অরুণকুমার দাস এবং উপশহর ক্যাম্পের ইনচার্জ আবদুর রহিমের ভাষ্যমতে, গভীর রাতে সদর উপজেলার খোলাডাঙ্গা ও মন্ডলগাতির মাঝামাঝি ফাঁকা জায়গায় দুই দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের খবর পায় পুলিশ। ঘটনাস্থলে পুলিশ ফোর্স গেলে অস্ত্রধারীরা পালিয়ে যায়। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ আর দুটি শাটারগান ও দুই রাউন্ড গুলির খোসা।

অন্যদিকে, একই ধরনের কাহিনি ঘটে সদর উপজেলার তরফ নওয়াপাড়া গ্রামের জনৈক নওয়াব আলীর মেহগনিবাগানে। সেখানে হাজির হয়ে পুলিশ দুটি লাশ দুটি পিস্তল, দুই রাউন্ড তাজা গুলি, গুলির খোসা এবং ৪০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে।

লাশ তিনটি সোমবার ভোর চারটা থেকে সাড়ে চারটার মধ্যে জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত ডাক্তার কল্লোল কুমার সাহা বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের সবার মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়।
হাসপাতালের কর্মচারীরা জানিয়েছেন, গুলিতে নিহত তিন ব্যক্তির বয়স ৩৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এদের একজনের গায়ে লাল স্যান্ডো গেনজি ও চেক লুঙি, একজনের গায়ে জাম রঙের হাফ হাতা গেনজি ও সাদা থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট এবং অন্যজনের খালি গা ও পরনে চেক লুঙি রয়েছে।

ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নরেন্দ্রপুর এলাকার র‌্যাবের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ছব্দুল মন্ডল (৪৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। তিনি নরেন্দ্রপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি নাইন এমএম পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, ১০০ বোতল ফেনসিডিল, ১৫০ পিস ইয়াবা ও একটি হেলমেট উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে র‌্যাব।

ঝিনাইদহ র‌্যাব-৬ এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক এএসপি গোলাম মোর্শেদের ভাষ্যমতে, রবিবার দিনগত রাত ১.৩০টার সময় র‌্যাব-৬ এর একটি টহল দল নরেন্দ্রপুর গ্রামের মাঠে চেকপোষ্ট বসিয়ে টহলে ছিল। এ সময় মাদকের চালান নিয়ে ছব্দুল মন্ডল ও তার সহযোগীরা মটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছিল। র‌্যাব সদস্যরা এ সময় তাদের চ্যালেঞ্জ করলে মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। র‌্যাব ও পাল্টা গুলি ছোড়ে। উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলিতে ছব্দুল মন্ডল নিহত হন। বাকি ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। এসময় র‌্যাব ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি নাইন এমএম পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, ১০০ বোতল ফেনসিডিল, ১৫০ পিস ইয়াবা ও একটি হেলমেট উদ্ধার করে।

কালীগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমান খান বলেন, বন্দুকযুদ্ধে নিহতের লাশ কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে। তিনি আরো জানান, সোমবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে।

রাজশাহী
রাজশাহীতে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ লিয়াকত আলী ম-ল (৩৮) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, দুই রাউন্ড গুলি, একটি মোটরসাইকেল এবং ৮২৩ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে র‌্যাব।

রবিবার দিবাগত মধ্যরাতে বেলপুকুর থানার ক্ষুদ্র জামিরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত লিয়াকত পুঠিয়া উপজেলার নামাজ গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম জব্বার আলী।

র‌্যাব-৫, রাজশাহীর উপঅধিনায়ক মেজর এএম আশরাফুল ইসলাম বলেন, ক্ষুদ্র জামিরা গ্রামের একটি আম বাগানে মাদকদ্রব্য বিক্রি হচ্ছে এ তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের একটি বিশেষ দল সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে সংঘবদ্ধ মাদক ব্যবসায়ীরা র‌্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। আত্মরক্ষার্থে র‌্যাব সদস্যরাও এ সময় পাল্টা গুলি ছুড়লে মাদক ব্যবসায়ীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে লিয়াকতকে আহত অবস্থায় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মেজর আশরাফ জানান, লিয়াকতের বিরুদ্ধে রাজশাহী এবং নাটোরের বিভিন্ন থানায় ৮ থেকে ১০টি মামলা রয়েছে। র‌্যাবের ওপর হামলা এবং অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের হবে বলেও জানান তিনি।

চুয়াডাঙ্গা
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। নিহত সেই মাদক বিক্রেতার নাম জনাব আলী (৩২)। নিহত জনাব আলী উথলী গ্রামের আমতলা পাড়ার জামাত আলীর ছেলে। বন্দুকযুদ্ধের সময় জীবননগর থানার ৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

রবিবার দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে উপজেলার উথলী গ্রামের সন্যাসীতলা মাঠের মধ্যে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি শর্টগান, দু’টি কার্তুজ, ৩টি রামদা এবং ১ বস্তা ভারতীয় ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে। জীবননগর থানা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মিলন হোসেন, কনস্টেবল ওয়ালিদ রহমান এবং কনেস্টবল জুয়েল হোসেন আহত হয়।

জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ রহমান জানান, বন্দুকযুদ্ধে নিহত জনাব আলীর বিরুদ্ধে জীবননগরসহ বিভিন্ন থানায় অন্তত ১১টি মাদক মামলা রয়েছে। বন্দুকযুদ্ধের পর ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি শর্টগান, দু’টি কার্তুজ, ৩টি রামদা এবং ১ বস্তা ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে।

টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। মৃত সেই মাদক বিক্রেতার নাম আবুল কালাম আজাদ।

রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে র‌্যাব-১২ এর এক মাদক বিরোধী অভিযানকালে এ ঘটনা ঘটে। র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এএসপি মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ঘাটাইল এলাকায় মাদক বিরোধী অভিযানকালে মাদক বিক্রেতারা র‌্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। আত্মরক্ষার্থে র‌্যাব সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছুঁড়লে মাদক বিক্রেতা আবুল কালাম আজাদ গুলিবিদ্ধ হন।

তিনি আরো বলেন, পরে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ম্যাগজিন, তিন রাউন্ড গুলি, ১৫শ পিস ইয়াবা এবং একশ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে।

নরসিংদী
নরসিংদী জেলায়ও পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তির বিস্তারিত পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/০৯২৯ঘ.)