‘বন্দুকযুদ্ধ’ অব্যাহত, আজও নিহত ১১

‘বন্দুকযুদ্ধ’ অব্যাহত, আজও নিহত ১১

ঢাকা, ২৮ মে (জাস্ট নিউজ) : আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে আজও দেশের বিভিন্ন স্থানে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১১ জন নিহত হয়েছেন।

রবিবার দিবাগত রাতে রাজধানীর মিরপুর, চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ, নাটোর, ঝিনাইদহ, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা ও কুমিল্লাতে এসব বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।

নাটোর: নাটোরের সিংড়া উপজেলার ভাগনগরকান্দি এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে কখিক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে।

রবিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এসময় র‌্যাবের ২ সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি রিভলবার ও বেশ কিছু ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।

ন্যাটোরের র‌্যাব-৫ সিটিফি-২ কোম্পানি কমান্ডার মেজর শিবলি মোস্তফা এ ঘটনা নিশ্চিত করেন। তবে নিহত ব্যক্তির নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি।

রাজধানী: রাজধানীর মিরপুরে রূপনগর এলাকায় ডিবি পুলিশের (পশ্চিম) সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক অজ্ঞাত ব্যক্তি (৪০) নিহত হয়েছেন।

রূপনগর থানা উপ-পরিদর্শক মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, রূপনগর ট-ব্লক এলাকায় সরকারি কর্মচারীদের জন্য নির্মাণাধীন ভবনে মাদক ব্যবসায়ীরা অবস্থান করছে, এমন খবর পেয়ে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল রাত তিনটার দিকে সেখানে যায়। অবস্থা বেগতিক বুঝে মাদকব্যবসায়ীরা গুলি ছোঁড়ে পুলিশদের উদ্দেশ্য করে। গোয়েন্দা পুলিশের দলটিও পাল্টা গুলি ছুঁড়লে একজন নিহত হন। নিহত ব্যক্তির নাম জানা যায়নি। তার কাছ থেকে একটি পিস্তল ও ইয়াবা উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল জানিয়েছে, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে জরুরি বিভাগে আনা হয়। ভোর চারটার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কুমিল্লা: কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নুরু (৫৫) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে ৫০ কেজি গাঁজা, একটি রিভলভার ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

রবিবার দিবাগত রাত ১টা ৫০ মিনিটে উপজেলার গলিয়ারা-লক্ষ্মীপুর গ্রামের মাঝখানে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত নুরু জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা রয়েছে যারমধ্যে একটি অস্ত্র ও ১০টি মাদক মামলা। সদর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সদর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের টিম গলিয়ারা-লক্ষ্মীপুর গ্রামের সীমান্তে যায়। এসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে মাদক ব্যবসায়ীরা। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি করলে নুরু গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হন।

অপরদিকে, কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বারে পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এনামুল হক দোলন (৪০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।

রবিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটে উপজেলার পশ্চিম জিংলাবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশের দাবি, নিহত এনামুল একজন মাদক ব্যবসায়ী। তারা ঘটনাস্থল থেকে ১০ কেজি গাঁজা, ১০০ পিস ইয়াবা, একটি পাইপগান, একটি কার্তুজ ও কার্তুজের খোসা উদ্ধার করা হয়। এসময় এসআই যুবরাজ বিশ্বাস ও দুই কন্সটেবল আহত হয়েছেন।

পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের টিম পশ্চিম জিংলাবাড়ি এলাকায় গেলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে মাদক ব্যবসায়ীরা। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি করলে এনামুল হক দোলন গুলিবিদ্ধ হয়। এসময় একজন এসআইসহ ৩ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। আহত অবস্থায় দোলনকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

চাঁদপুর: চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আবু সাঈদ বাদশা ওরফে লাল বাদশা নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।

রবিবার দিবাগতে মধ্যরাতে ফরিদগঞ্জের গুপ্টি ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

লাল বাদশা ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের আবদুর রশিদ ছৈয়ালের ছেলে। তার বিরুদ্ধে ১০টি মাদকের মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, পুলিশের একটি দল অভিযানে বের হয়ে ফরিদগঞ্জের গুপ্টি ব্রিজ এলাকায় গেলে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের উপর হামলা ও গুলি চালায়। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এতে বাদশা গুলিবিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় তাকে ফরিদগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে ১১১ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ১টি এক নলা বন্দুক, ৪ রাউন্ড গুলি ও ১টি ককটেল উদ্ধার করেছে পুলিশ।

মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিম পৌরসভায় নিজেদের মধ্যে ‘গোলাগুলি’তে সুমন বিশ্বাস (৩৬) নামে এক মাদক ব্যাবসায়ী নিহত হয়েছেন।

রবিবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে পৌরসভার নয়াদীঘিরপাথর এলাকার মুড়মা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সুমন ওই এলাকার বাবুল বিশ্বাসের ছেলে।

মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি তদন্ত গাজী সালাউদ্দিন জানান, মীরকাদিম পৌরসভার মুড়মা এলাকায় দুই গ্রুপ মাদক ব্যাবসায়ীদের মাঝে ‘গোলাগুলি’র ঘটনা ঘটে। এতে প্রতিপক্ষের গুলিতে সুমন বিশ্বাস ওরফে কানা সুমন নিহত হয়। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে সুমনের মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। এসময় তার সঙ্গে থাকা একটি দেশীয় অস্ত্র (ছুরি) ও বিপুল পরিমাণে ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, নিহত সুমন মাদকসহ ২০ থেকে ২৫টি বিভিন্ন মামলার আসামি।

সোমবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সাংবাদিকদের বিস্তারিত অবহিত করবেন বলেও জানান তিনি।

ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় দুদল মাদক ব্যবসায়ীর গোলাগুলিতে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। রবিবার দিবাগত রাত ২টার কিছু পরে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের পাশে জাড়গ্রাম নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশ নিহতের নাম-পরিচয় জানাতে পারেনি।

ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক শেখ জানান, রাত ২টার দিকে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের পাশে জাড়গ্রাম এলাকায় দুদল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে সেখান থেকে অজ্ঞাত পরিচয় যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থল থেকে ১টি পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলি, ২০ বোতল ফেন্সিডিল ও ১টি কার্তুজ উদ্ধার করা হয় বলেও জানায় তিনি।

পিরোজপুর: পিরোজপুরে পৃথক কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ওহিদুজ্জামান (৩৫) ও মিজানুর রহমান (৩৪) নামে দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।
নিহত মাদক ব্যবসায়ী ওহিদুজ্জামান নেছারাবাদ উপজেলার দক্ষিণ কৌরিখাড়া গ্রামের মৃত আ. রহমানের ছেলে।

পিরোজপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিএম আবুল কালাম আজাদ জানান, রবিবার দুপুরে পিরোজপুর পৌরসভার উত্তর কৃষ্ণ নগর এলাকা থেকে ওহিদুজ্জামানকে পিরোজপুর ডিবি পুলিশের একটি দল গ্রেফতার করে। তার দেয়া তথ্যানুযায়ী রাত পৌনে ১টার দিকে সদর উপজেলার কলাখালী ইউনিয়নের টোনা ব্রিজ সংলগ্ন কৈবর্তখালী গ্রামে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে গেলে ওহিদুজ্জামানের সঙ্গীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে। এসময় অহিদুজ্জামানকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে তারা। পরে ডিবি পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে ডিবি পুলিশ পাল্টা গুলি চালায়। এসময় মাদক ব্যবসায়ী ওহিদুজ্জামান পালাতে গেলে গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এসময় ডিবি পুলিশের এএসআই আল-আমিন ও ডিবি পুলিশ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে একটি পাইপগান, ৫ রাউন্ড গুলি, দুটি বগি দা, ১৭৫টি ইয়াবা ট্যাবলেট, ৫০ গ্রাম গাঁজা, অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম ও মাদক সেবনের সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। তার বিরুদ্ধে মাদক, সন্ত্রাসী, অস্ত্র মামলাসহ মোট ৮টি মামলা রয়েছে।

মঠবাড়িয়া থানার ওসি গোলাম ছরোয়ার জানান, রোববার দিবাগত রাতে মঠবাড়িয়া উপজেলার বড়মাছুয়া গ্রামের হাওলাদার বাড়ি এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতির খবর পেয়ে থানা-পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। রাত পৌনে ২টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর ডাকাতেরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। দুই পক্ষের গোলাগুলিতে মিজানুর রহমান গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হন।

এ সময় মঠবাড়িয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাজহারুল আমিন, উপপরিদর্শক নজরুল ইসলাম, তসলিমুর রহমান ও নূর আমিন, সহকারী উপপরিদর্শক ইয়ার আলী ও আবুল হাসান আহত হন। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দেড় কেজি গাঁজা, ৫৫ পিচ ইয়াবা বড়ি ও চারটি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে। মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ডাকাতি ও মাদকের ছয়টি মামলা রয়েছে।

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার বাঁকালে অজ্ঞাত পরিচয় দুই ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

পুলিশের দাবি তারা মাদক ব্যবসায়ী। মাদক ভাগাভাগি নিয়ে নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি করে নিহত হয়েছে ওই দুজন।

সোমবার ভোরে সাতক্ষীরা ভোমরা সড়কের বাঁকালের আগুনপুর গ্রামে রাস্তার পাশ থেকে ওই লাশ দুটি উদ্ধার করে পুলিশ। সদর থানার উপপরিদর্শক প্রবীর কুমার দাস জানান, ভোরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে দুজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। লাশ দুটির দেহে একটি করে গুলির চিহ্ন রয়েছে। তাদের পরনে ছিল লুঙ্গি ও গেঞ্জি। মাত্র ১০ গজের ব্যবধানে পড়ে থাকা লাশ দুটির পরিচয় জানাতে পারেনি কেউ।

তিনি বলেন, পাশেই পাওয়া গেছে একটি ওয়ান শুটারগান ও ১০৫ বোতল ফেনসিডিল। এ ছাড়া মদের খালি বোতলও পাওয়া গেছে।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তারা মাদকের ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। নিজেদের মধ্যে গোলাগুলির এক পর্যায়ে দুজন নিহত হন। ময়না তদন্তের জন্য লাশ দুটি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/০৯৪০ঘ.)