‘বন্দুকযুদ্ধ’ অব্যাহত, আজও নিহত ১০

‘বন্দুকযুদ্ধ’ অব্যাহত, আজও নিহত ১০

ঢাকা, ২৯ মে (জাস্ট নিউজ) : আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে আজও দেশের বিভিন্ন স্থানে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১০ জন নিহত হয়েছেন।

সোমবার দিবাগত রাতে রাজধানীর দক্ষিণখান, কুমিল্লা, ব্রাহ্মনবাড়িয়া, যশোর, ঠাকুরগাঁও, কুষ্টিয়া ও ময়মনসিংহে এসব বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।

রাজধানী: রাজধানীর দক্ষিণ খানে পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সুমন ওরফে খুকু সুমন নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাত পোনে একটায় এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে ১ হাজার পিছ ইয়াবা ট্যাবলেট ও একটি ওয়ান সুটার গান পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের ভালুকায় পুলিশের সাথে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মিজান (৪৫) নামের একজন নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি নিহত মিজান শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও একাধিক ডাকাতি মামলার আসামি।

সোমবার দিবাগত রাত সোয়া দুইটার দিকে উপজেলার পাড়াগাঁও চটনপাড়া সামাদ ফকির বাড়ীর পাশে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে ডিবি পুলিশ। বন্দুকযুদ্ধ শেষে মাদকও উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।

ডিবির ওসি আশিকুর রহমান জানান, কিছু মাদক ব্যবসায়ী ভালুকা উপজেলার ওই এলাকায় মাদক ভাগাভাগি করছে। এমন খবরে জেলা ডিবি পুলিশ ভালুকা মডেল থানা পুলিশকে নিয়ে সেখানে অভিযান চালায়। এসময় মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপসহ এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁরে। এসময় পুলিশও আত্মরক্ষার্থে গুলি ছুঁড়ে। এক পর্যায়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে গেলে মিজান নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এসময় ভালুকা থানার ওসি তদন্ত আবুল কালাম আজাদ, এএসআই শাহ আলম আহত হন। আহত পুলিশ সদস্যদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। ঘটনাস্থল হতে ১০০ গ্রাম হেরোইন, তিনটি গুলির খোসা, ১টি রামদা, ১টি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান ডিবির ওসি আশিকুর।

ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলায় পুলিশের সাথে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হারুন (৪৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার ভোর রাতে উপজেলার শীতলপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত হারুন হরিপুর উপজেলার শীতলপুর এলাকার মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে বলে জানা যায়।

পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে উপজেলার শীতলপুর এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় হারুনসহ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী পুলিশের উপস্থিতি বুঝতে পেরে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এসময় পুলিশ মাদক ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য করে পাল্টাগুলি গুলি চালায়। উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি গুলি বর্ষণের ফলে হারুন (৪৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী ঘটনাস্থলে নিহত হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে মর্গে পাঠায়।

হরিপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় মাদক ব্যবসায়ীরা হামলা করলে পুলিশও পাল্টা হামলা করে ও হারুন নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়। হারুনের বিরুদ্ধে হরিপুর থানায় মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে।

যশোর: যশোর শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া এলাকায় মধ্যরাতে আবারো গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।

পুলিশের দাবি, এরা মাদকের কারবারি করে। সোমবার দিনগত রাত তিনটার পর চাঁচড়া রায়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এই ঘটনা ঘটে।

ভোর পৌনে চারটার দিকে পুলিশ কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম লাশ দুটি জেনারেল হাসপাতালে আনেন। হতভাগ্য ওই দুই ব্যক্তির মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আগের কয়েকটি ঘটনার মতো এদেরও মাথার খুলি উড়ে গেছে গুলিতে। এর আগে মধ্যরাতে ডাকাতি করার সময় গণপিটুনির শিকার হয়ে যশোর-মাগুরা মহাসড়কে এক ব্যক্তি নিহত হন বলে পুলিশ জানায়।

এসআই মঞ্জুরুল বলেন, চাঁচড়া এলাকায় দুইদল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলি হচ্ছে বলে খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে হাজির হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সশস্ত্র মাদক বিক্রেতারা পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থল তল্লাশি করে দুটি মরদেহ মেলে।

হাসপাতালে উপস্থিত ব্যক্তিরা বলছেন, নিহত দুইজনের মাথার খুলি উড়ে গেছে গুলিতে। এদের একজনের গায়ে লাল গেঞ্জি ও চেক লুঙি, আরেকজনের পরনে চেক লুঙি রয়েছে। দুইজনের বয়সই চল্লিশের কোঠায়।

জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত ডাক্তার শফিউল্লাহ সবুজ জানান, হাসপাতালে আনার আগেই গুলিবিদ্ধ ওই দুই ব্যক্তি মারা গেছেন।

কুষ্টিয়ায়: কুষ্টিয়ায় দৌলতপুরে পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী মোকাদ্দেশ হোসেন (৩০)ও ফজলুর রহমান টাইটেল (৩৫) নিহত হয়েছেন।

পুলিশের দাবি এ ঘটনায় তাদর ৪ সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ অস্ত্র, গুলি ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে বলে দাবি করেছে।

সোমবার দিবাগত ৩টার দিকে দৌলতপুরের শিয়ালা মাঠে এ ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে।

দৌলতপুর থানার (ওসি) শাহ দারা খান জানান, মাদক দ্রব্য ক্রয় বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে একদল মাদক ব্যবসায়ী দৌলতপুরের শিয়ালা মাঠে অবস্থান করছে এমন গোপন সংবাদ পেয়ে দৌলতপুরে থানা পুলিশের একটি টহল দল ঘটনাস্থলে অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য কর গুলি ছোড়ে। জবাবে পুলিশ ও পাল্টা গুলি চালালে ‘বন্দুকযুদ্ধে দুই মাদক ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হলে তাকে উদ্ধার করে দৌলতপুর হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশ জানতে পারে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত মোকাদ্দেশ হোসেন ও ফজলুর রহমান টাইটেল শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। এরা পুলিশের তালিকাভূক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৪ পুলিশ সদস্য আহত হলে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

ঘটনাস্থল থেকে ১টি বন্দুক, ২ রাউন্ড গুলি, একটি পিস্তলের ম্যাগজিন ও ২৭০ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত মাদকব্যবসায়ী মোকাদ্দেশ হোসেন দৌলতপুর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ এলাকার মৃত রেজাউল হকের ছেলে ও ফজলুর রহমান টাইটেল একই উপজলার প্রাগপুর গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে।

কুমিল্লা: কুমিল্লার মুরাদনগরে পুলিশের সাথে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আরো দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন পুলিশের তিন কর্মকর্তা। সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় উপজেলার নবীপুর পূর্ব ইউনিয়নের গুঞ্জর বেঁড়িবাধের পাশে ভাই ভাই ব্রিকস ফিল্ডের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- বাখরনগরের শহীদ মিয়ার ছেলে মো: বাতেন (৩৪) ও কৈয়ার পাথর এলাকার আবদুস সামাদের ছেলে লিটন ওরফে কানা লিটন (৩৬)। বন্দুকযুদ্ধের পর পুলিশ একটি পাইপগান, একটি কার্তুজ, একটি বড় ছোরা (চাকু) ও ৪শ’ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে।

মুরাদনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ইয়াছিন গাজী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, নিহত বাতেনের বিরুদ্ধে ৮টি এবং নিহত লিটনের বিরুদ্ধে ৭টি মাদক মামলা রয়েছে।

তিনি জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মুরাদনগর সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনাকালে বন্দুকযুদ্ধের সময় তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। আহতরা হলেন- এসআই মোজাম্মেল হোসেন, এএসআই রোকন, এএসআই মাসুদুর রহমান।

বন্দুকযুদ্ধকালে পুলিশ ৫৩ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেছে বলেও জানান তিনি। পরে ঘটনাস্থল থেকে বাতেন ও লিটনকে আহত অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় মাদক ও ডাকাতিসহ আট মামলার আসামি জনি মিয়ার (৩০) গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি কার্তুজ, ২টি ছোরা, ১টি চাপাতি উদ্ধার করেছে পুলিশ।

সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে পৌর শহরের খালাজোড়া এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত জনি কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার খাইয়ার গ্রামের ফিরোজ মিয়ার ছেলে।

দিকে, পুলিশের দাবি ডাকাতির মালামাল ভাগাভাগির বিরোধে সহযোগীদের গুলিতে জনি নিহত হয়েছেন।

আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন তরফদার জানান, রাতে ডাকাতির মালামাল ও মাদক ব্যবসার বিরোধকে কেন্দ্র করে জনি ও তার সহযোগীদের মধ্যে ‘গোলাগুলি’র ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পৌঁছে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জনির মরদেহ উদ্ধার করে।

নিহত জনির বিরুদ্ধে মাদক, ডাকাতি, ও চোরাচালানসহ আখাউড়া ও অন্যান্য থানায় ৮টি মামলা রয়েছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান ওসি মোশারফ।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/০৯৩১ঘ.)