যারা নিয়ন্ত্রণ করবেন তাদের মধ্যেও মাদকসেবী!

যারা নিয়ন্ত্রণ করবেন তাদের মধ্যেও মাদকসেবী!

ঢাকা, ৩০ মে (জাস্ট নিউজ) : কারা কর্মকতা ও কারারক্ষীসহ ৭০ জনকে মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয়েছে৷ তাদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তদন্ত চলছে৷ এছাড়া তিনজন মাদক নিয়ন্ত্রন কর্মকর্তাও মাদকসহ আটক হয়েছেন৷

ওই ৭০ জনের মধ্যে তিন জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত এবং তিন জনকে অন্য শাস্তি দেয়া হয়েছে৷ বিভিন্ন সময় কারাকর্মকর্তা ও কারারক্ষীদের বিরুদ্ধে কারাবন্দিদের মাদকদ্রব্য সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে৷

ডিআইজি (প্রিজন, ঢাকা) তৌহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা গত এক বছর ধরে কারাগারে মাদক সরবরাহ, ব্যবহার ও ব্যবসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি৷ গত মার্চে আমরা শরিয়তপুরের তিন কারারক্ষী সালাউদ্দিন, পলাশ হোসেন এবং ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে ইয়াবা সেবনের অভিযোগ পাই৷ অভিযোগ পাওয়ার পরই আমরা তাদের সাসপেন্ড (সাময়িক বরখাস্ত) করি৷ এরপর বিভাগীয় তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হলে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়৷’’

এর বাইরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কারারক্ষী রায়হান উদ্দিন ও আশরাফুল ইসলামকে মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বদলি করা হয়৷

এখন জেলা কারাগারের জেলার, ডেপুটি জেলার ও কারারক্ষীসহ ৭০ জনের বিরুদ্ধে মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তদন্ত হচ্ছে বলে জানান তৌহিদুল ইসলাম৷ তাদের মধ্যে কেউ মাদক সরবরাহ, কেউ সেবন এবং কেউবা সরাসরি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র কারণে এই ৭০ জনকে এরইমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে৷

গত মার্চে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার মোহাম্মদ মমিনুল ইসলামকে ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়৷

মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে দেশের ৬৪ জেলার ১০০ জন কারাকর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত বছর থেকে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান কারা ডিআইজি তৌহিদুল ইসলাম৷

এদিকে কারা ডিআইজি (বরিশাল) সগীর মিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মাদকের সঙ্গে জড়িত কারা কর্মকর্তা এবং কারারক্ষীদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে৷ যে তিন জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে, তাদের বিভাগীয় মামলার ভিত্তিতে বরখাস্ত করা হয়৷ বিভাগীয় আরো অনেক মামলা আছে মাদকের অভিযোগে৷ সেগুলোও দ্রুত নিস্পত্তি করা হবে৷ এসব ব্যাপারে জিরো টলারেন্স দেখানোর নির্দেশ আছে৷’’

আর এআইজি প্রিজন আব্দুল্লাহ আল মামুন ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘প্রত্যেক বিভাগের ডিআইজি প্রিজনদের এই ব্যবস্থাগুলো দ্রুত নেয়ার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷’’

এদিকে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সারাদেশে মাদক নিয়ন্ত্রণ, মামলা এবং তদন্তের দায়িত্বে নিয়েজিত৷ তবে তারা সরাসরি কারাগারে এই মাদক ব্যবসার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয় না৷ তারা মূলত এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেয়৷ ঢাকা মেট্রোর উপ পরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মাদক মামলায় যারা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে আবার আমাদের হাতে আটক হয়, তাদের কাছ থেকে কারাগারে মাদক ব্যবসার তথ্য পাই আমরা৷ সেই তথ্য অনুযায়ী কারাগারে কারাবন্দিরা সহজেই মাদক পায়৷ আর কারাগারের এক শ্রেণির কর্মকর্তা, কর্মচারী এর সঙ্গে জড়িত৷’’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীও মাদকের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ আছে৷ আমরা তাদের তালিকা করে ব্যবস্থা নিচ্ছি৷ এরইমধ্যে একজন ইন্সপেক্টরকে (মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের) মাদকসহ হাতেনাতে আটক করে কারাগারে পাঠিয়েছি৷ মোট তিনজনকে এভাবে আটক করা হয়েছে৷ আমরা তালিকা যাচাই-বাছাই করছি৷ আমরা তথ্য প্রমাণসহ তাদের ধরতে চাই৷’’

বুধবার আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে গত ১৫ দিনে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ১১৯ জন নিহত হয়েছেন৷ আসক এই বিচার বহির্ভূত হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করেছে৷

বিবৃতিতে আরো বলা হয়,‘‘স্বল্প সময়ে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যু কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ সরকার থেকে বারবার ‘বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হওয়ার কথা বলা হলেও গণমাধ্যম ও নিহতদের স্বজনরা ঘটনার ভিন্ন চিত্র তুলে ধরছেন৷ গণমাধ্যমে ইতোমধ্যে এ অভিযানে পুলিশের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে বন্দুকযুদ্ধ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বা টাকা নিয়েও বন্দুকযুদ্ধে দেওয়ার অভিযোগ এসেছে৷ টেকনাফের পৌরসভার ওয়ার্ড কমিশনার একরামুল হক বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর জানা যাচ্ছে যে, মাদক ব্যবসার সাথে তিনি জড়িত ছিলেন না৷’’

এদিকে বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা বলার পর ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্সা বার্নিকাট সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের প্রত্যেকের আইনের সুযোগ পাওয়ার অধিকার আছে৷ বিনা বিচারে একজন মানুষ মারার অর্থ হচ্ছে ওই পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে যাওয়া৷’’

তিনি বলেন, ‘‘মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স আমরাও চাই৷ তবে অভিযুক্ত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা উচিত বলে আমরা মনে করি৷ মূল অপরাধী এবং এর উৎস বন্ধ করা দরকার৷ মাদকের উৎস বন্ধ না করে এ অভিযান পরিচালনা করলে তা সফল হবে কিনা তা নিয়ে আমরা সন্দিহান৷’’ সৌজন্যে : ডয়চে ভেলে।

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২৩৫৬ঘ.)