
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ। আন্দোলনকারীরা দাবি করেছেন, ছাত্রলীগের হামলায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। সোমবার বিকাল ৩টার পর এই ঘটনা শুরু হয়।
ঘটনাস্থলে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে ছাত্রলীগ ধাওয়া দেয় আন্দোলনকারীদের। পরে কোটা আন্দোলনকারীদের ভিসি চত্বর, নীলক্ষেত ও ফুলার রোড হয়ে শহীদ মিনারের দিকে পাঠিয়ে দেয় ছাত্রলীগের কর্মীরা। এরপর ছাত্রলীগ রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নেয়।
গতকাল রবিবার রাত থেকেই ক্যাম্পাসে উত্তেজনা চলছে। কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিবাদে আন্দোলনকারীরা মধ্যরাতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এসময় ছাত্রলীগও সতর্ক অবস্থান নিয়েছিল। পরে দুই পক্ষই রাতে নিজ নিজ ঠিকানায় ফিরে যায়। তবে সোমবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে চলছিল থমথমে পরিস্থিতি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ও ছাত্রলীগ। বেলা সোয়া ১২টা থেকে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। পরে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ মিছিল নিয়ে হল পাড়ায় দিকে যান। বিজয় একাত্তর হলে গিয়ে ঢুকতে চাইলে হলের ওপর থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জুতা নিক্ষেপ করে। এতে দুই গ্রুপের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়।
এরপর আন্দোলনকারীদের মধ্যে যারা রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান করছিলেন তারাও যোগ দেন। এদিকে মধুর ক্যান্টিনের সামনে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের একটি অংশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হল, জিয়াউর রহমান হল, বিজয় একাত্তর ও জসীমউদদীন হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর একসঙ্গে হামলা করে। এরপর হলপাড়ায় থেমে থেমে মারামারি এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগের পাশাপাশি যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের জড়ো হতে দেখা যায়। এছাড়া মহানগর ছাত্রলীগ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছে।
বিজয় একাত্তর হলের সামনে ইটপাটকেল ও লাঠির আঘাতে আহত হন মাহমুদুল হাসান (২৩), একুশে হলের ইয়াকুব (২১), শহীদুল্লাহ হলের রাকিব (২৪) ও মাসুদ (২৩)। তারা সবাই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানা গেছে।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয় আসিফ মাহমুদ লিখিত বক্তব্যে দাবি করেন, ছাত্রলীগের হামলায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এছাড়া হলপাড়ায়, রেজিস্ট্রার ভবন, এসএম হল ও টিএসসিতে আটকে আছেন নারী শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগের হামলায় আহত আরও ২০ থেকে ২৫ জন ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা নিতে গেছেন। ঢাকা মেডিক্যালের ইমার্জেন্সির সামনে ছাত্রলীগ হামলা করেছে বলেও জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
আন্দোলনকারীরা-‘কে রাজাকার কে রাজাকার, তুই রাজাকার, তুই রাজাকার', প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে, লাখো শহীদের রক্তে কেনা, দেশটা কারো বাপের না, চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার', তুমি নই, আমি নই, রাজাকার রাজাকার, ভয় দেখিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না' ইত্যাদি স্লোগান দিকে থাকেন।
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন থেকে আসা বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রবিবার রাত ১০টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে মধ্যরাতে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। সেখানে জড়ো হয়ে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী নানা স্লোগান দেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অবমাননা করা হয়েছে দাবি করে মধ্যরাতে প্রায় দুই ঘণ্টা ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এর ধারাবাহিকতায় আজ দুপুরে আবার বিক্ষোভ ডাকেন তারা।