‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত কামুরকে ধরে নিয়ে হত্যার অভিযোগ পরিবারের

‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত কামুরকে ধরে নিয়ে হত্যার অভিযোগ পরিবারের

গাজীপুর, ৩ জুন (জাস্ট নিউজ) : গাজীপুর শহরে ভাদুন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত কামাল ইসলাম ওরফে কামুর (৩২) পরিচয় ও ঠিকানা পাওয়া গেছে। এর আগে পুলিশ নিহত ব্যক্তির নাম বলেছিল- কামরুল খান ওরফে কামু। পরে জানা যায় যে, কামরুল খান ওরফে কামু নামে এক ব্যক্তি বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে বন্দি রয়েছ্নে। ফলে সৃষ্টি হয় বিভ্রান্তি। তাহলে নিহত ব্যক্তি কে? তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না।

জানা গেছে, নিহত কামাল ইসলাম ওরফে কামু গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার উলুখোলা-রায়েরদিয়া (গাইনীপাড়া) গ্রামের মৃত সিরাজ খানের ছেলে। তিনি একই এলাকার ইতালি প্রবাসী রুবেলের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। নিহতের স্ত্রী আছমা বেগমের অভিযোগ- কোনও বন্দুকযুদ্ধ নয়, বৃহস্পতিবার (৩১ মে) ভোর পাঁচটার দিকে কামুকে বাড়ি থেকে ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। পরে হত্যা করা হয়েছে।

গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক আমীর হোসেন জানিয়েছিলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১০দিকে কালীগঞ্জের উলুখোলা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। উলুখোলা মসজিদের পাশের রাস্তায় মাদক বিক্রির সময় কামরুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে চার হাজার পিস ইয়াবা ও একটি এলিয়ন প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়। তাকে নিয়ে কালীগঞ্জ থানায় যাওয়ার পথে মহানগরের ভাদুন এলাকায় তার সহযোগীরা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে। ওই সময় কামরুল গাড়ি থেকে লাফিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।

পুলিশের এমন দাবি অস্বীকার করেছেন নিহত কামুর স্ত্রী আছমা বেগম। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটার দিকে ডিবি পুলিশের পোশাক পরা অন্তত ছয়জন লোক তার বাসায় ঢোকে। পুলিশের পরিচয় পেয়ে তার স্বামী দরজা খুলে দেন। পুলিশ সদস্যরা বাসায় ঢুকে আসবাবপত্র তল্লাশি শুরু করে। এক পর্যায়ে তার সঙ্গে কথা আছে জানিয়ে কামরুলকে নিয়ে যায়। তারা বাসার টেলিভিশন, মোবাইল সেট, নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার, কিছু দলিলপত্র, তার স্বামীর জাতীয় পরিচয়পত্র, বাড়ি নির্মাণের জন্য রাখা রাজমিস্ত্রীর ড্রিল মেশিন ও বেশ কিছু কাগজপত্র নিয়ে যায়।

আছমা বেগম বলেন, তারা এমনভাবে তল্লাশি করেছে যে, কোনও সুঁচ থাকলেও তা পাওয়া যেত। তিনি বলেন, আমার স্বামীকে নিয়ে যাওয়ার সময় বার বার অনুরোধ করেছি। বলেছি, আমার স্বামীর কোনও দোষ নেই। তার কিছু হলে আমার একমাত্র সন্তান এতিম হয়ে যাবে। তাকে যেন মারধর বা জুলুম না করা হয়। তাদের অনেক অনুরোধ করেছি। কোনও অন্যায় করে থাকলে তাকে যেন আদালতে সোপর্দ করা হয়।

আছমা বলেন, বৃহস্পতিবার সারাদিন স্বামীর খোঁজ করেও কিছুই জানতে পারিনি। গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) অফিসে আমাদের কোনও লোক ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরদিন শুক্রবার (১ জুন) দুপুরে এলাকাবাসীর মাধ্যমে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ খবর পেয়ে ওইদিন রাতে মর্গে গিয়ে দেখি আমার স্বামীর লাশ।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে আছমা বেগম বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে আট বছর আগে। বিয়ের পর থেকে স্বামীর নামে কোনও মামলা রয়েছে বলে আমার জানা নেই। আমার স্বামীকে কখনও কোনও মামলায় আদালতেও যেতে দেখিনি।

গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক আমীর হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ডিবি পুলিশ কামরুলের বাড়িতে যায়নি। তাই মালামাল লুটের অভিযোগও ঠিক নয়। কামরুল খান কামু একজন সন্ত্রাসী এবং মাদক ব্যবসায়ী। তার নামে টঙ্গী ও কালীগঞ্জ থানায় দুটি মাদক এবং জয়দেবপুর থানায় একটি অস্ত্র মামলা রয়েছে।

জাস্ট নিউজ/এমআই/১৫১৭ঘ.)