রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান সিপিএর

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান সিপিএর মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানবিক সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ)।

ঢাকা, ৭ নভেম্বর (জাস্ট নিউজ) : মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানবিক সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ)। সিপিএর সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত সিপিএর ৬৩তম সম্মেলনের সাধারণ সভা থেকে এ বিষয়ে সর্বসম্মত বিবৃতি দেওয়া হয়। এদিকে সিপিএর নতুন চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়েছেন ক্যামেরুনের ডেপুটি স্পিকার এমিলিয়া মনজোবা লাফাকাও।

বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধন দ্রুত ও নিঃশর্তভাবে বন্ধ করা এবং যেসব রোহিঙ্গা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছে, তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। বাংলাদেশে পালিয়ে আসাসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের যত দ্রুত সম্ভব রাখাইন প্রদেশে স্থায়ীভাবে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। মিয়ানমার সরকার রাখাইন প্রদেশে যা করছে তা চরম অন্যায়।'

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) অনুষ্ঠিত এ সভায় বিবৃতিটি উত্থাপন করেন সিপিএ সেক্রেটারি জেনারেল আকবর খান। এর পক্ষে সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা, মালয়েশিয়া, সেন্ট ভেনসেন্ট অ্যান্ড গ্রানাডাসহ বেশ ক'টি দেশের ডেলিগেটরা। তবে বারবাডোজের প্রতিনিধি সিপিএর মতো ফোরাম থেকে এ ধরনের বিবৃতি দেওয়া যায় কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও তিনি বিবৃতির বিরোধিতা করেননি।

সভায় উপস্থিত সবাই হাত তুলে বিবৃতির পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করেন।

এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সাধারণ সভা শুরু হয়। সভায় মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই সিপিএর নির্বাহী কমিটির নতুন চেয়ারপারসন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১ নভেম্বর থেকে ঢাকায় শুরু হওয়া এ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম সাধারণ সভার সমাপ্তির মধ্য দিয়েই শেষ হয়। বুধবার গাজীপুরের শফিপুর আনসার ক্যাম্প পরিদর্শন ছাড়া অন্য কোনো কর্মসূচি নেই। সাধারণ সভা শেষ হওয়ার পরপরই ডেলিগেটরা ঢাকা ছাড়তে শুরু করেন। এ সম্মেলনে কমনওয়েলথভুক্ত ৪৪টি দেশের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ মিলে ১৪৪টি প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। এর মধ্যে ৫৬ জন স্পিকার, ২৩ জন ডেপুটি স্পিকারসহ পাঁচ শতাধিক আইন প্রণেতা রয়েছেন।

৫ নভেম্বর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর পক্ষ থেকে সম্মেলনের প্রতিনিধিদের রোহিঙ্গা ইস্যুতে ব্রিফিং করা হলে সেখানে সব দেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি প্রস্তাব গ্রহণের দাবি ওঠে। পরে সিপিএ নির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সক্রিয় বিবেচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।

বিবৃতিটি সভায় উত্থাপন করা হলে এর পক্ষে সমর্থন জানিয়ে মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি ড. মোহাম্মদ হাত্তা বলেন, এ বিবৃতির মাধ্যমে বিশ্ব সম্প্রদায়কে একটি বার্তা দেওয়া সম্ভব হবে। তিনি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা পরিদর্শনে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, তাদের দেশ থেকে দ্রুত একটি প্রতিনিধি দল কক্সবাজার সফরে যাওয়ার চেষ্টা করবে। একই সঙ্গে তিনি সিপিএর একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমারে পাঠিয়ে এই সম্মেলনের বার্তা তাদের সরকারকে অবহিত করার কথা বলেন।

বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, এ সম্মেলনে প্রস্তাব গ্রহণের সুযোগ ছিল না। তারপরও নানা পরিক্রমা পেরিয়ে একটি বিবৃতি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হওয়ায় তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

আলোচনায় অংশ নেওয়া সব প্রতিনিধি বিষয়টির সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য দেওয়া শুরু করলে সিপিএ চেয়ারপারসন শিরীন শারমিন সবার মতামত আহ্বান করেন। এ সময় উপস্থিত প্রতিনিধিরা হাত তুলে সমর্থন জানান। এর পরই সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে এবারের সিপিএ সম্মেলনের সমাপ্তি টানেন শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ সময় নবনির্বাচিত চেয়ারপারসন ক্যামেরুনের ডেপুটি স্পিকার এমিলিয়া লাফাকাও (বর্তমান কমিটির ভাইস চেয়ারপারসন) মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

গৃহীত বিবৃতিতে বলা হয়, কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সরকারকে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করতে হবে। এসব দেশকে একযোগে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে, যাতে তারা দ্রুত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হয়। এ ছাড়াও সিপিসির সব আইন সভায় রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো অত্যাচারের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানোর আহ্বান জানান হয়।

সম্মেলন শেষে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সিপিএভুক্ত দেশগুলো যথেষ্ট সহযোগিতা ও সহমর্মিতা প্রদর্শন করেছে। সম্মেলনের সাধারণ সভার গৃহীত বিবৃতিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর দেওয়া বক্তব্যটি ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সেন্টারে (বিসিসিআই) সিপিএর ৬৩তম সম্মেলনের সাধারণ অধিবেশনে ভোটাভুটিতে নতুন চেয়ারপারসন হিসেবে এমিলিয়া লাফাকাও নির্বাচিত হন। ফল ঘোষণা করেন সিপিএর সেক্রেটারি জেনারেল আকবর খান। নির্বাচনে আরও দু'জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এমিলিয়া লাফাকাও ১৯২ ভোটের মধ্যে ১০৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কুক আইল্যান্ডের নিকির্ যাটেল। তিনি পেয়েছেন ৭০ ভোট। অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী মনসেরাটের শার্লি এম অসবোর্ন পেয়েছেন মাত্র ১৫ ভোট। গোপন ব্যালটে এ ভোট নেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ পদ থেকে বিদায় নিলেন। ২০১৪ সালে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

মঙ্গলবার ফল ঘোষণার পর ক্যামেরুনসহ আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ডেলিগেটরা সম্মেলনস্থলে নেচেগেয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন। নতুন চেয়ারপারসন লাফাকাও বিদায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারপারসনের দায়িত্বে ছিলেন। ফল ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় লাফাকাও জানান, সিপিএর অগ্রাধিকারমূলক কর্মসূচিগুলো নিয়ে তিনি কাজ করতে চান। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সদস্য রাষ্ট্রের সংসদ ও জনগণের জীবনমান বৃদ্ধিই থাকবে তার প্রধান লক্ষ্য। তিনি বলেন, সিপিএর কার্যক্রম সরাসরি সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা থাকবে।

নতুন চেয়ারপারসনকে অভিনন্দন জানিয়ে বিদায়ী চেয়ারপারসন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ঢাকা সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাব বাস্তবায়ন ও পাশাপাশি নতুন ধারণা নিয়ে সিপিএ আরো এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

(জাস্ট নিউজ/একে/২২১৬ঘ.)