এক সময়ে সমর্থন দিয়েও এখন সরকারের কেন এই আচরণ?

এক সময়ে সমর্থন দিয়েও এখন সরকারের কেন এই আচরণ?

ঢাকা, ৭ জুন (জাস্ট নিউজ) : গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার অভিযোগ করেছেন, আটক করার পর কালোকাপড়ে তাঁর চোখ-মুখ বেঁধে এবং হাত কড়া পড়িয়ে র‍্যাব তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল।

মাদকবিরোধী অভিযানে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের অভিযোগে এক সমাবেশ থেকে র‍্যাব তাকে ধরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার তিনি ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

গণজাগরণ মঞ্চের উত্থানের সময় ইমরান এইচ সরকারকে নিরাপত্তা সুবিধা দেয়াসহ সরকারের এক ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা অনেকই দৃশ্যমান ছিল। কিন্তু পরে তার সাথে সরকারের ভিন্ন আচরণ দেখা যায়।

ঢাকার শাহবাগ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে ইমরান এইচ সরকারের উত্থান হয়েছিল ২০১৩ সালে, পাঁচ বছর পর বুধবার সেই এলাকার এক সমাবেশ থেকেই র‍্যাব তাঁকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল।

গণজাগরণ মঞ্চের সেই উত্তাল আন্দোলনের সময় তাঁর প্রতি সরকারের সমর্থন দৃশ্যমানও হতো। তাঁকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা সুবিধাও দেয়া হয়েছিল।

কিন্তু সম্পর্ক শেষপর্যন্ত সেই জায়গায় থাকেনি বলে সরকারের আচরণে মনে হয়।

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নাসরিন সুলতানা মনে করেন, যেহেতু আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা। ফলে সেই ইস্যূতে তখনকার পরিস্থিতির প্রয়োজনে ঐ আন্দোলনকে সরকার পক্ষের একটা শক্তি হিসেবে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল।

বিষয়টাকে ভিন্নভাবে দেখেন ইমরান এইচ সরকার।

তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে তাদের আন্দোলনে জনসমর্থন দেখে সরকার কৌশল হিসেবে তাদের পক্ষ নিয়েছিল। কিন্তু সেই আন্দোলনের পর পরই সরকার ভিন্ন আচরণ করতে থাকে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি যেহেতু তাদেরও দাবি ছিল। সেখানে হয়তো তারা কৌশলগতভাবে মনে করেছে যে, সেটাকে ডিসম্যান্টেল করা যতটা কঠিন, তার চেয়ে বরং সেটার পক্ষে মতামত দেয়া, সেটাই হয়তো তখন তাদের কৌশলগত অবস্থান হয়ে থাকতে পারে।

তারা এখন যে হসটাইল অবস্থান নিয়েছে নানাভাবে আক্রমণ করার। সেটা আজকেই নিয়েছে, তেমনটা না। তারা ২০১৩ সালের কয়েকমাস পর থেকেই এমন অবস্থান নিয়েছে। আমরা যখনই সরকারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলি, তখনই তারা নানাভাবে আক্রমণ শুরু করে। মামলা-হামলাতো আছেই। আমাকে অনেক হুমকিও দেযা হয়েছে।

তবে বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, রাজনৈতিক কোনো দলের বাইরে কোন আন্দোলন জনসমর্থন পেলে সেই আন্দোলন বা তার নেতৃত্বকে আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার একটা প্রবণতা দেখা যায়। গণজারণ মঞ্চের আন্দোলনের ক্ষেত্রেও সেরকম হয়েছিল বলে তাদের ধারণা।

বিশ্লেষকদের অনেকে আবার বলছেন,গণজাগরণ মঞ্চের সেই আন্দোলনের পর ইমরান এইচ সরকারের সাথে এর অন্য নেতাদের বিরোধ দেখা দেয়। একটি অংশ সরাসরি সরকারকে সমর্থন করে। সরকারও সেই সুযোগ নিয়েছে বলে তারা মনে করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সামিনা লুৎফা মনে করেন, ইমরান এইচ সরকার এবং গণজাগরণ মঞ্চের প্রভাব এখন যেহেতু সেভাবে নেই, সেকারণে সরকার এখন ভিন্ন চেহারা নিয়েছে।

গণজাগরণ মঞ্চের শুরুতে কিন্তু আমরা দেখেছি, প্রথম দুই তিনদিন সরকার এখানে খুব একটা হালে পানি পায়নি। তিন চার দিন পরে এসে আমরা দেখলাম সরকার এর সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে এবং আন্দোলনকে আত্মীভূত করেছে। সেই আন্দোলনের যে বিশালতা, সেটাকে সরকার তার নিজের প্রয়োজনে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছে। তার একটা অংশ হিসেবেই ইমরান এইচ সরকার এবং অন্য নতেৃবৃন্দ যারা ছিলেন, তাদের সকলকেই তারা ব্যবহার করেছেন বলা যেতে পারে।

তিনি আরো বলেছেন, সেটা ২০১৩ সালের কথা। এখন ২০০১৮ সাল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির অনেকটাই অর্জিত হয়েছে বলে সরকার মনে করছে। কারণ তারা যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দিতে পেরেছে। ধরে নিতে পারি উনার প্রয়োজন এখন সরকারের কাছে সেভাবে নেই।

তবে সরকারের অনেক বলছেন, ইমরান এইচ সরকারের অবস্থান বা কর্মকান্ড নিয়ে তাদের অনেকের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ. টি. ইমাম বিবিসিকে বলছিলেন, ইমরান এইচ সরকার এক সময় আমাদের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগেরই প্রচার প্রকাশনার সঙ্গে একটা সেল ছিল, সেখানে কাজ করতেন। পরবর্তীকালে যখন গণজাগরণ মঞ্চ করলেন, সে বিষয়টি অন্য রকম ছিল। তখনতো বাংলাদেশ, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ইত্যাদি অনেক বিষয় ছিল।

তিনি আরো বলেছেন, এখন ঘটনাক্রমে আমি ঠিক বলতে পারবো না, তার পরিবর্তন হয়েছে নাকি অন্য কারও সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ আছে। যদি তাঁর কোন মতবাদ থাকে, তা বলতে পারেন। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে যদি এমন কোন কথাবার্তা বলেন, যেটি সরকারের নীতির সাথে সাংঘর্ষিক হয়। তাহলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী সেরকম কিছু দেখলে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই পারে।

যদিও বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, সরকারের কাছে ইমরান এইচ সরকারের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। কিন্তু বিশ্লেষকদেরই অন্য অংশটি মনে করছে, সরকারের এখনকার এধরণের আচরণের মধ্যেও ভিন্ন কোনো কৌশল থাকতে পারে। সূত্র: বিবিসি

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২২১৫ঘ.)