কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা

রবিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা

রবিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা

ঢাকা, ৩০ জুন (জাস্ট নিউজ) : সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল রবিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সারাদেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন এবং অবরোধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

শনিবার হামলার পর বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ খান এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগ মুহূর্তে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা করেছে। আমরা এর প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি একইসঙ্গে আগামীকাল রবিবার থেকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে অবরোধ কর্মসূচি পালন করবেন বলেও জানান রাশেদ খান।

এর আগে শনিবার বেলা ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এই হামলা করেছে। এতে কোটা আন্দোলনের নেতা নুর হোসেনসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ খান গণমাধ্যমকে বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর বিনা উস্কানিতে হামলা করেছে। নুর হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

নুরু’র অবস্থা আশঙ্কাজনক
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ খাঁন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর আজকের হামলার বিষয়ে বলেছেন, আন্দোলনকারী অনেকের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে নূরের অবস্থা আশঙ্কাজনক। শনিবার সকালে হামলার পর তিনি একথা জানান।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগ মুহূর্তে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা করেছে। আমরা এর প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।

জানা গেছে, বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। তবে তার আগেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখানে অবস্থান নেয়। সংবাদ সম্মেলনের জন্য কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের একটি দল কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আসার পর ‘শিবির ধর’, ‘শিবির ধর’ বলে অতর্কিত হামলা চালানো হয়। নুরকে ঘিরে ধরে মারধর করা হয়। এসময় ‘ওরে মেরে ফেল’, ‘কলিজা কাট’ ইত্যাদি উক্তি করে তাকে লাথি, ঘুষি, চড়-থাপ্পড় দিতে থাকে হামলাকারীরা। একপর্যায় নুর মাটিতে পড়ে গেলে শোয়া অবস্থায় তাকে লাথি মারতে থাকে তারা। পরে আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে পুলিশে রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, বিষয়টি আমরা শুনেছি। কিন্তু আমরা চাইলেই ক্যাম্পাসের ভেতরে যেতে পারি না। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার দ্রুত বিচার দাবি
সরকারি চাকরিতে প্রচলিত কোটা প্রথা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বিনা উস্কানিতে হামলার ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)। শনিবার পৃথক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।

শনিবার ঢাবি সাদা দলের এক বিবৃতিতে বলা হয়- কোটা প্রথা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বিনা উস্কানিতে হামলার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এধরনের ন্যাক্কারজনক ও কাপুরুষোচিত হামলা এবং অমানবিক নির্যাতনের ঘটনায় আমরা তীব্র প্রতিবাদ এবং নিন্দা জানাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের নিষ্ঠুরতার চিত্র দেখে আমরা বাকরুদ্ধ।

আমরা চাই এই হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। আমরা ক্যাম্পাসে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। একইসাথে হামলার শিকার আহত শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি করছি। বিবৃতিতে সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোঃ আখতার হোসেন খান, যুগ্ম আহ্বায়ক ড. মো: আবদুর রশীদ, অধ্যাপক ড. মোঃ মোর্শেদ হাসান খান ছাড়াও স্বাক্ষর করেন ড. সদরুল আমিন, ড. মো. সিরাজুল ইসলাম, ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, ড. মো. আবুল কালাম সরকার, অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান বিশ্বাস, ড. মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছানী, ড. মো. আসলাম হোসেন, ইসরাফিল প্রামাণিক রতন, ড. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, ড. মোঃ গোলাম রব্বানী, ড. লায়লা নূর ইসলাম, ড. মোঃ আবদুর রব, ড. মোঃ আশরাফুল ইসলাম চৌধুরী, ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম, ড. মো. শামসুল আলম, দেবাশীস পাল, ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, ড. মহব্বত আলী, মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, মোহাম্মদ ইলিয়াস, মোহাম্মদ ওমর ফারুক প্রমুখ।

ইউট্যাব: এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তির দাবি জানিয়ে ইউট্যাব বলছে- কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর নারকীয় হামলার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও দায়ীদের বিচার চাই। সংগঠনের ৬২৫ জন শিক্ষক এক বিবৃতিতে বলেন, সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর যে হামলা হচ্ছে তা উদ্বেগজনক। এরআগেও আন্দোলনকারীদের দুইজন নেতাকে চোখ বেধে তুলে নেয়া হয়েছিল। যা শিক্ষার্থীদের মাঝে ভীতি ছড়িয়েছে। যদিও কোটা বাতিলের বিষয়টি সমাধানের জন্য সরকার প্রধানের আশ্বাসের পর আন্দোলনকারীরা কর্মসূচী স্থগিত রেখেছিলেন।

কিন্তু সরকার চূড়ান্ত কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষান্তরে ক্ষুব্ধ করে তুলছে। সুতরাং অবিলম্বে কোটা প্রথা বাতিল পূর্বক আন্দোলনকারী নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।

ইউট্যাবের বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আশরাফুল ইসলাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, ড. এম ফরিদ আহমেদ, অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম মজুমদার, সৈয়দ আবুল কালাম আযাদ, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, ড. গোলাম রব্বানী, ড. মাহফুজুল হক, ড. সিদ্দিক আহমদ চৌধুরী (চবি), ড. এম এ বারী মিয়া, অধ্যাপক খায়রুল (শাবিপ্রবি), ড. শামসুল আলম সেলিম (জাবি), ড. সাব্বির মোস্তফা খান (বুয়েট), অধ্যাপক তোজাম্মেল (ইবি), কৃষিবিদ অধ্যাপক আবদুল করিম, ডা. মো: সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৩১৩ঘ.)