কোটা সংস্কার আন্দোলন

শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের দফায় দফায় হামলা-মহড়া

শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের দফায় দফায় হামলা-মহড়া

ঢাকা, ২ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গত কয়েকদিন ধরেই হামলা চালানো হচ্ছে। সোমবারেও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এরকম হামলা হয়েছে দফায় দফায়।

আন্দোলনকারীরা হামলার জন্য সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে দায়ী করলেও ছাত্রলীগ বলছে, আন্দোলনকারীদের নিজেদের মধ্যে বিরোধের জের ধরেই এসব হামলার ঘটনা ঘটছে।

আন্দোলনকারীদের একজন নেতা বলছেন, কোটা সংস্কার নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারীর সুনির্দিষ্ট সময়সীমা চান তারা। যদিও সচিবালয়ে মন্ত্রীসভা বৈঠকের পর মন্ত্রীপরিষদ সচিব জানিয়েছেন, কোটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের আরো সময় লাগবে।

আন্দোলনকারীদের ওপর গত শনিবার যে হামলা হয়েছিলো তার প্রতিবাদেই সোমবার পতাকা মিছিলের কর্মসূচির ডাক দেয়া হয়েছিলো আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তাদের জমায়েতের কোনো সুযোগ ছিলো না ছাত্রলীগের অবস্থান ও মহড়ার কারণে। পরে আন্দোলনকারীদের কয়েকজন একটি ব্যানার হাতে শহীদ মিনারে দাঁড়ানোর পরপরই তাদের উপর আবারো হামলা চালানো হয়।

এর পর ক্যাম্পাস এলাকা থেকে সরে যান আন্দোলনকারীরা। পরে ঢাকার অন্য একটি এলাকায় গিয়ে কথা হয় আন্দোলনকারীদের নেতা হাসান আল মামুন ও লুৎফুন্নাহার লুমাসহ কয়েকজনের সাথে। লুৎফুন্নাহার লুমা জানান, শহীদ মিনারে তিন দফা হামলা হামলার শিকার হয়েছেন তারা।

“আমরা যখন জড়ো হচ্ছিলাম হুট করে ছাত্রলীগের ছেলেপেলেরা আমাদের উপর তিন তিনবার হামলা করলো। সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এই এক ঘণ্টায় তারা আমাদের উপর দফায় দফায় হামলা করেছে। মেয়েদেরকেও তারা মেরেছে। একটি মেয়েকে তারা এতো জোরে লাথি মেরেছে যে দেয়ালের সাথে লেগে তার মাথা ফেটে গেছে,” বলেন লুৎফুন্নাহার লুমা।

আর হাসান আল মামুন অভিযোগ করেন, শুধু হামলা নয় তাদের কয়েকজন সহযোগীকে তুলে নিয়ে গেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তার অভিযোগ: “ছাত্রলীগ অরাজনৈতিক এই আন্দোলনকে নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছে।”

তিনি বলেন, “কোনো দলের ব্যানারে আমরা আন্দোলন করি নাই। এটা সারা বাংলার ২৬ লাখ বেকারের আন্দোলন। ছাত্রলীগের এই হামলার কারণে আমি খুবই হতাশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন দিন। কতদিনের মধ্যে এটা ঘোষণা করা হতে পারে তার একটা সুনির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করে দিন।”

রাজধানী ঢাকার বাইরে রাজশাহীসহ আরো কয়েকটি জায়গাতেও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার খবর পাওয়া গেছে। ঢাকায় শহীদ মিনারের হামলার পর ক্যাম্পাস-জুড়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের।

কোটা সংস্কারের দাবীতে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলো শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন তীব্র হলে ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর ওই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিলও করেছিলো ছাত্রলীগ। আন্দোলনকারীরা শেখ হাসিনাকে 'মাদার অফ এডুকেশন' উপাধিতেও ভূষিত করেছিলেন।

এখন তাহলে এই ছাত্রলীগই কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করছে কেন? তাদের হামলার কারণে কোটা আন্দোলন কি রাজনৈতিক রূপ পাচ্ছে?

এমন প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বিবিসি বাংলাকে বলেন, কোনো হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগ জড়িত নয় বরং আন্দোলনকারীদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে নেতৃত্ব বা স্বার্থ নিয়ে।

“এর দায় ছাত্রলীগের ওপর চাপানো যৌক্তিক নয়। আর প্রধানমন্ত্রী আগেই এ সমস্যার সমাধান করেছেন। এখন আবার যারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায় তারাই এটা নিয়ে রাজনীতি করছে।”

এর আগে শনিবারও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় আহত হয়েছিলেন আন্দোলনকারীদের একজন নেতা নুরুল হকসহ অনেকেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এই শিক্ষার্থীর ওপর হামলার প্রতিবাদে ওই বিভাগের একদল শিক্ষক শিক্ষার্থী আজ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক তাসনিম মাহবুব বলেন, “আমরা ক্যাম্পাসে আমাদের ছাত্রের ওপর হামলার প্রতিবাদ করছি। আমরা নিরাপদ ক্যাম্পাস চাচ্ছি। আপনারা দেখেছেন একটু আগে বিরাট বড় দলের ছাত্র নামক লোকজন এসে ধমক দিয়েছে। আমাদের সামনেই ছাত্রদের হুমকি দিয়েছে।” সূত্র: বিবিসি

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২৩৪২ঘ.)