যুদ্ধ না করে আত্মরক্ষায় বেঁচে থাকার মানে হয় না : নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার

যুদ্ধ না করে আত্মরক্ষায় বেঁচে থাকার মানে হয় না : নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার

ঢাকা, ৩ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : শপথ রক্ষায় প্রয়োজনে চেয়ার ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মঙ্গলবার বিকালে একথা বলেন তিনি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি নির্বাচন ব্যবস্থাপনাটা সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হয়। তাহলে আমাকে কোনো নোট অব ডিসেন্ট দিতে হবে না। আর যদি সেটা আমার বিবেক অনুযায়ী সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় না হয়, তাহলে একটা কেন ১০টা নোট অব ডিসেন্ট দেব।

মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘প্রয়োজনে চেয়ার ছেড়ে যাব। চেয়ারতো আমার হাতে না। চেয়ার ছাড়ার প্রশ্ন আসছে কেন? আমি এমন যোদ্ধা যে নাকি যুদ্ধ করে শহীদ হয়ে যেতে রাজি আছি। কিন্তু আমি যুদ্ধ না করে আত্মরক্ষা করে বেঁচে থাকার কোনো মানে তো বুঝি না।’

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি একজন আশাবাদী মানুষ। আমি চাই- দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করার জন্য একটা সুষ্ঠু, স্বার্থক নির্বাচন করতে, যেই নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র তার নিজের মহিমায় বিকশিত হবে। গণতন্ত্র কেউ আমাদের তৈরি করে দেবে না। একটি গণতান্ত্রিক দেশের অগ্রযাত্রার জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন অপরিহার্য। আমার মনে হয় এই বক্তব্যের সঙ্গে কেউ দ্বিমত প্রকাশ করবে না।’

এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, শপথের বাইরে তো আমরা যাব না। শপথ নিয়েছি সংবিধান অনুযায়ী, সংবিধানের বাইরে যাব না। যাওয়ার কোনো প্রয়োজনও বোধ করি না। কারণ সংবিধান আমাদেরকে অপরিমেয় শক্তি দিয়েছে। শক্তি কেবল থাকলে হবে না, সেই শক্তি প্রয়োগ হচ্ছে বড় কথা। শক্তি প্রয়োগ না করে যদি বলি যে, আমি এটা করব, সেটা করব তাহলেতো হবে না।

তিনি বলেন, ‘আমি সংবিধানের বাইরে যাব না। আমি শব্দটা আমরাতে রুপান্তর করতে চাই। আমি মনে করি, আমরা কেউ সংবিধানের বাইরে যাব না।’

তিন (বরিশাল, সিলেট, রাজশাহী) নির্বাচনের বিষয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, আমি অতীতের ভুল-ভ্রান্তিগুলো চিহ্নিত করে ভবিষ্যতের পথ চলতে চাই। খুলনা কিংবা গাজীপুরের যে নির্বাচন হয়েছে, সেখানে যেসব ভুল-ভ্রান্তি হয়েছিল, সেগুলোকে আমরা চিহ্নিত করেছি। এসব ভুল ভ্রান্তি বা অনিয়মেরর পুনরাবৃত্তি যাতে আগামী তিন সিটি নির্বাচনে না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখব।

তিনি আশাবাদ ব্যক্তি করে বলেন, গত দুটি নির্বাচনের সঙ্গে আগামী তিনটি নির্বাচনের তুলনা হবে না। আমি আশা করি, আগামী তিন সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।

খুলনা এবং গাজীপুরে ভুল বা অনিয়মের মাত্রা কেমন ছিল- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘অতীত টানতে চাই না। তবে ভুল থেকে শিক্ষা নিতে চাই আমরা।’

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশ হচ্ছে আমাদের সহায়ক শক্তি। পুলিশের উপর আমাদের নির্ভরশীল হতেই হয়। তারা যাতে আমাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে থাকে, সেই জন্য পুলিশ বাহিনীকে অনুপ্রাণিত করতে হবে।

‘একটি কথা মনে রাখতে হবে- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন চান এটা গণমাধ্যমে এসেছে। তার কথাটা মেনে নিয়ে কেন আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করব না, কেন প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হবে- এটা আমি বুঝি না’ যোগ করেন মাহবুব তালুকদার।

গাজীপুর নির্বাচনের অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবেদনের সময় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে কেউ সময় বেঁধে দেয়নি। তবে আমি গাজীপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সাতদিন সময় বেঁধে দিয়েছি। আশা করি ১০ দিনের মধ্যে গাজীপুর নির্বাচনের মোটামুটি একটি চিত্র পেয়ে যাব।

‘তবে আমি কমিশনের পাঁচজনের একজন। আমার ক্ষমতা সীমিত। আমি যা কিছুই করি না কেন, তা কমিশন সভায় উপস্থাপিত হবে। তারপরই সিদ্ধান্ত হবে সেটি আলোর মুখ দেখবে কি না’ যোগ করেন তিনি।

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরাতো কখনোই বলিনি নির্বাচন একশ’ ভাগ সুষ্ঠু হয়েছে। তাহলে আমরা কেন কেন্দ্র বন্ধ করতে গেলাম? সেখানে (গাজীপুরে) নিশ্চই কিছু অনিয়ম হয়েছে, যার জন্য আমরা কেন্দ্র বন্ধ করেছি।

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনতো সিটি নির্বাচনের মতো না। সিটি নির্বাচনে যেভাবে হাজার হাজার লোক নিয়োগ করি, জাতীয় সংসদে তো সেভাবে পারব না। জাতীয় সংসদ নির্বাচনটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। একদিনে নির্বাচনটা করতে হয়।

মাহবুব তালুকদার বলেন, জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে হলে আমাদের কি কি করণী তা বুঝার চেষ্টা করছি। এটি আমাদের কার্যকালে একবারই হবে। আমাদের মানসম্মান কিন্তু এই সংসদ নির্বাচনের উপরই নির্ভর করে।

(জাস্ট নিউজ/একে/২২১৩ঘ.)