সবদিক থেকে চেপে ধরা হয়েছে কোটা আন্দোলনকারীদের

সবদিক থেকে চেপে ধরা হয়েছে কোটা আন্দোলনকারীদের

ঢাকা, ১০ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীরা এখন আর মাঠে নামতে পারছেন না৷ তাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রবিবার ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ সমাবেশ থাকলেও সেখানে শিক্ষকদের তেমন দেখা যায়নি৷ কেন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো?

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ওপর দফায় দফায় হামলার পর আন্দোলন এখন ‘ঝিমিয়ে' পড়েছে৷ এখন অন্তত ১০ জন কারাগারে আছেন৷ তাদের রিমান্ডেও নেয়া হয়েছে৷ আহতরা কোনো হাসপাতালে চিকিৎসাও পচ্ছেন না৷ আর যাতে তারা রাস্তায় নামতে না পারেন তার জন্য হুমকি অব্যাহত আছে৷

কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, “আমাদের এখন সবদিক থেকে চেপে ধরা হয়েছে৷ ছাত্রলীগ হামলা চালাচ্ছে, পুলিশ আটক ও গুমের হুমকি দিচ্ছে৷ আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নানাভাবে হয়রানি করছে৷ এই যে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পসে, তার উদ্দেশ্য হলো আমরা যাতে জড়ো হতে না পারি৷”

মামুন অভিযোগ করেন, “আমাদের হল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে৷ বাসায়ও থাকতে পারি না৷ গুম আর আটকের হুমকি দেয়া হচ্ছে৷ নারী শিক্ষার্থীদেরও ভয় দেখানো হচ্ছে৷ আমাদের চরম আতঙ্কের মধ্যে রাখা হয়েছে৷ তারপরও আমাদের ক্লাস বর্জন কর্মসূচি চলছে৷”

আটক ছাত্রদের দুই দফায় ১৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে৷ আর তাদের পুরনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে৷ তাদের যারা আইনি সহায়তা দিচ্ছেন তাদের মধ্যে আছেন ব্যরিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, “ভিসির বাড়িতে ২০ এপ্রিল হামলার মামলায় কোনো আসামি ছিল না৷ কিন্তু আটকদের সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে৷ আর ৮ জুলাই করা পুলিশের মোটর বাইকে হামলাসহ ভাংচুরের মামলায়ও তাদের আসামি দেখানো হয়েছে৷ রাশেদুলকে দেখানো হয়েছে আইসিটি আইনের মামলায়৷”

তিনি বলেন, “এইসব আটক এবং মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়া৷ তাদের আটকে আইনের লঙ্ঘন হয়েছে৷”

ছাত্রলীগের হামলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আহত তরিকুল এবং ঢাকায় আহত নুরুল সরকারি বা প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা পাননি৷ তাদের এখন ঢাকায় গোপনে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে৷” হাসান আল মামুন বলেন, “এখন আহতদের চিকিৎসা দেয়াই কঠিন হয়ে পড়ছে৷”

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে প্রেসক্লাবের সামনে প্রথম দফা প্রতিবাদ সমাবেশ পণ্ড করে দেয় পুলিশ৷ রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরেকটি প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শিক্ষকদের তেমন দেখা যায়নি৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. সফিউল আলম ভুইয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, “আমি প্রদিবাদ কর্মসূচিতে যাইনি, কারণ, আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর কোটা তুলে দেয়ার ঘোষণার পর এই আন্দোলনের কোনো যৌক্তিতা ছিল না৷ তবে তাদের ওপর হামলা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না৷ যারা হামলা করেছে, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া উচিত৷”

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “এই আন্দোলনের পিছনে বাইরে থেকে রাজনৈতিক বা অন্য কোনো ইন্ধন থাকতে পারে৷ তবে যারা আন্দোলন করছে, তারা জঙ্গি বা জঙ্গির মতো, এটা আমার কাছে মনে হয় না৷ এটা যারা বলেছেন, তারাই ব্যখ্যা দিতে পারবেন৷”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উলটো তাদের ‘জঙ্গির মতো’ বললেও এরই মধ্যে জার্মান দূতাবাস ও যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার সমালোচনা করে নিন্দা জানিয়েছে৷ ব্যরিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, “ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি তাদের পদ রক্ষার জন্য ওই কথা বলছেন বলে আমার মনে হয়, কারণ, ভিসি পদ এখন রাজনৈতিক৷”

তিনি আরো বলেন, “ছাত্রদের বিরুদ্ধে প্রক্টরের অনুমতি ছাড়া মামলা করা যায় না৷ এখানে তার ব্যত্যয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ইন্ধন ছাড়া হয়নি৷”

সবমিলিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা এখন চুড়ান্ত চাপে রয়েছে৷ এমনকি তাদের কারো কারো পরিবারকেও টার্গেট করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে৷ সৌজন্যে : ডয়চে ভেলে।

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২১১৮ঘ.)