তিন সিটি নির্বাচন: বড় ধরণের প্রশ্নের মুখে নির্বাচন কমিশন

তিন সিটি নির্বাচন: বড় ধরণের প্রশ্নের মুখে নির্বাচন কমিশন

ঢাকা, ১ আগস্ট (জাস্ট নিউজ) : বাংলাদেশের তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সার্বিক প্রক্রিয়ায় বড় ধরণের প্রশ্নের মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও প্রতিষ্ঠানটি তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করছে বিরোধী রাজনীতিকরা।

নানা অঘটন আর অনিয়মের অভিযোগের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে রাজশাহী, বরিশাল এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। অভিযোগগুলোর মধ্যে ছিল, ভোট জালিয়াতি থেকে শুরু করে ভোটকেন্দ্র দখল, মেয়র প্রার্থীর ওপর নিপীড়ন, ভোটকেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া ইত্যাদি।

নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক হতাশা প্রকাশ করেছেন বিএনপি নেতারা।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবী করেছেন, ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হলে বিএনপি প্রার্থীরা তিন সিটিতেই বিপুল ব্যবধানে জয়ী হতো। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানান তিনি।

‘ক্ষমতাসীন সরকার একতরফাভাবে নির্বাচন করে যাচ্ছে। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে। কারণ এই নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালনার মতো যোগ্যতা নেই,'’ মির্জা ফখরুল বলেন।

‘জাতীয় নির্বাচনকালীন সময়ে অবশ্যই একটি নিরপেক্ষ সরকার থাকতে হবে যারা স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা করবে’, তিনি বিবিসিকে বলেন।

আওয়ামী লীগ: নির্বাচন ‘সুষ্ঠু’
সিটি নির্বাচনে অনিয়মের যে অভিযোগ বিএনপি তুলেছে, তা উড়িয়ে দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। তাদের দাবি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচনকে বিতর্কিত করে তোলা।

‘বিএনপি নির্বাচন করার জন্য তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেনি। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে এই নির্বাচনকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য,'’ মিঃ কাদের বলেন।

‘সিলেটে আমাদের প্রার্থী পরাজিত হয়েছে। তবুও এটাকে আমরা পরাজয় বলবো না। কারণ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে,’ তিনি বলেন।

সংসদ নির্বাচন: সুষ্ঠু হবে কি?
জাতীয় নির্বাচনের আগে এই তিন সিটি নির্বাচনকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছিল।

নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও সিটি নির্বাচন পরিচালনায় তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজনীতিক বিশ্লেষকরাও।

‘নির্বাচন যে সুষ্ঠু হচ্ছেনা, এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দল প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রাখতে চাইছে,'’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা বলেন।

‘এই সিলেট নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর জয়ও সেই সুষ্ঠু পরিকল্পনার অংশ। ইসি পুরোপুরি লোক দেখানো কাজ করছে,’ তিনি বলেন।

জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই নির্বাচন কমিশন কতোটা আস্থাভাজন, এমন প্রশ্নের জবাবে তাসলিমা সুলতানা আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, তার ভাষায়, ‘অনিয়মের এই ধারাবাহিকতাই’ বজায় থাকবে।

‘ক্ষমতাসীন দল যদি এই নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে না দেয় তাহলে মনে হয় না আমরা জাতীয় নির্বাচনে এর কোন ব্যত্যয় দেখবো,’ তিনি বলেন।

সংসদ নির্বাচন: বিএনপির অবস্থান
এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা, এমন প্রশ্ন রাখা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এত আগে কিছু বলা যাবে না। যাব কিনা এটা তো এখন বলতে পারছি না, এটা নির্ভর করছে নির্বাচন আদৌ হবে কি না আর নির্বাচন কিভাবে পরিচালিত হবে সেটার ওপর। আগেভাগে কিছু বলা যায়না,'’ তিনি বলেন।

‘তবে এটা স্পষ্ট করে বলতে পারি যে নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করা প্রয়োজন,’ মির্জা ফখরুল বলেন।

এর আগে সংবাদ সম্মেলনে পুননির্বাচনের দাবিতে বৃহস্পতিবার জেলা ও মহানগরে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেন মির্জা ফখরুল।

তবে, নির্বাচনে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার দায় শুধু নির্বাচন কমিশনের একার নয় বলে জানিয়েছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষক শারমিন মুর্শিদ। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

‘আমাদের কোন নির্বাচনই ক্রুটিমুক্ত হচ্ছেনা। ক্রটিগুলো যে জাতীয় পর্যায়ে হবেনা, সেটা বলা যাচ্ছেনা,'’ তিনি বলেন।

শারমিন মুর্শিদ বলেন, নির্বাচনের মান মূলত নির্ভর করে ইসির দক্ষতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীল আচরণের ওপর। সেই জায়গাটাতেও ঘাটতি দেখতে পাচ্ছেন তিনি।

‘নির্বাচন কমিশন যতোই দক্ষ হোক না কেন, দিনশেষে রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীল আচরণ নির্বাচনের মানের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে,’ তিনি বলেন।

এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলার মধ্যে আনা নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেন শারমিন মুর্শিদ।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১০২০ঘ.)