নিরাপদ সড়ক আন্দোলন: যে কারণে এত আলোড়ন

নিরাপদ সড়ক আন্দোলন: যে কারণে এত আলোড়ন

ঢাকা, ৩ আগস্ট (জাস্ট নিউজ) : সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলন বাংলাদেশে এর আগে হলেও এবারের মত আলোড়ন তৈরি হয়নি কখনোই। গত তিনদিনের মত বৃহস্পতিবারও ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় স্কুল-কলেজের কিশোর শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে কার্যত অচল হয়ে যায় পুরো শহরের পরিবহন ব্যবস্থা।

অধিকাংশ জায়গাতেই শিক্ষার্থীরা গাড়ি-মোটর সাইকেলের লাইসেন্স দেখতে চায়। পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্স বা ফায়ার সার্ভিসের মত জরুরি সেবাদানকারী সংস্থার গাড়ি যাওয়ার সুযোগ করে দেয়।

কেন এই আন্দোলন?
কিন্ত বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেয়া শিক্ষার্থীরা কি নিজেদের মধ্যে কোনো ধরণের যোগাযোগের মাধ্যমে সব জায়গায় একই ধরণের কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন? একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, নিজেদের নাগরিক বোধ থেকেই এধরণের উদ্যোগ নিতে উৎসাহী হয়েছেন তারা।

একজন শিক্ষার্থী বলেন, সব বাস-ট্রাক ড্রাইভারের লাইসেন্স থাকতে হবে, এটিই আমাদের মূল দাবি। গাড়ি বা সি.এন.জি’র সাধারণত লাইসেন্স থাকে, তারা অ্যাক্সিডেন্টও করে কম। কিন্তু বাস-ট্রাকের মালিকরা তাদের ব্যয় কমাতে অদক্ষ, অপ্রাপ্তবয়স্ক লাইসেন্সহীন চালক, হেল্পার দিয়ে বাস চালায়। তাই আমাদের আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য সব যানবাহনের চালকদের যেন লাইসেন্স থাকে তা নিশ্চিত করা, বলেন ঐ ছাত্র।

আরেক শিক্ষার্থী জানান, জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্সের মত যানবাহনকে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়াটাই তো স্বাভাবিক। আমাদের আন্দোলন তো মানুষকে কষ্ট দেয়ার জন্য না, মানুষের জন্য।

কেন আলোড়ন তুললো কিশোরদের আন্দোলন?
পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও নিরাপদ সড়কের দাবীতে আন্দোলন বাংলাদেশে নতুন নয়। কিন্তু সড়ক পরিবহন নিয়ে কাজ করা সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো এতবছরে যে আন্দোলন থেকে কার্যকর কোনো ফল আদায় করতে পারলো না, স্কুল-কলেজে পড়া কিশোর শিক্ষার্থীরা কয়েকদিনের আন্দোলনে কিভাবে এ বিষয়ে এতটা আলোড়ন তুললো?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা মনে করেন, যৌক্তিক দাবি আদায়ে শিশু-কিশোরদের দৃঢ় মনোভাবের কারণেই সাধারণ মানুষের সমর্থন পাচ্ছে তারা। তিনি বলেন, তারা তাদের দাবিতে পরিষ্কার ও সৎ, আর দাবি আদায়ে তারা যে লেগে থাকবে তা বুঝিয়ে দেয়ায় আন্দোলন আরো দৃঢ় হয়েছে। মিজ লুৎফা বলেন, বাচ্চাদের আন্দোলন করতে রাস্তায় নেমে আসায় আমাদের বড়দের গায়ে ধাক্কা লেগেছে। তবে আমি বলবো এটি একটি সুমধুর ধাক্কা।

কিশোর শিক্ষার্থীদের পরিপক্কতার প্রশংসা করে মিজ. লুৎফা বলেন, শিশু-কিশোররা শহরটাকে কেমন দেখতে চায় এবং সেই নিরাপদ শহর অর্জনে কি করতে হবে, তা আমাদের বড়দের চেয়ে ভালভাবে তারা জানে।

ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়মতান্ত্রিক সড়ক চায় এবং তা অর্জন করতে নিজেরা কষ্ট করতে প্রস্তুত- এই বিষয়টি মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে বলে মনে করেন মিজ. লুৎফা। সারাদিন রাস্তায় পড়ে থেকে তারা যে অনমনীয়তা প্রদর্শন করেছে সেটিই তাদের পক্ষে মানুষের সমর্থন বাড়াচ্ছে।

সাধারণ মানুষ কী বলছে?
অধিকাংশ জায়গাতেই রাস্তায় অবস্থান নেয়া শিক্ষার্থীদের খাবার ও পানি দিয়ে সহায়তা করেন সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন পেশাজীবীদের দেখা যায় অফিসের ফাঁকে শিক্ষার্থীদের সাথে আন্দোলনে যোগ দিতে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের কারণে রাস্তায় দুর্ভোগের শিকার হওয়া সাধারণ মানুষের মনোভাব কেমন ছিল?

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত কয়েকজন নারীর সাথে কথা বলে জানা যায় রাস্তায় শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে কর্মক্ষেত্রে পৌঁছাতে দুর্ভোগ পোহাতে হলেও তারা তা নিয়ে একেবারেই অসন্তুষ্ট নয়। যানজটের কারণে জীবনে অনেক দুর্ভোগ হয়েছে, অনেক রাগও হয়েছে। কিন্তু এই দুর্ভোগে এতটুকু কষ্ট নেই। আজ এতটুকু রাগ লাগেনি, বরং মনে হয়েছে এই প্রতিবাদ আরো অনেক বছর আগে করা উচিত ছিল। একই ধরণের মতামত ছিল অধিকাংশ মানুষেরই।

(জাস্ট নিউজ/০৯৫৫ঘ.)