ঢাকার পাশাপাশি দূরপাল্লার বাস বন্ধ

ঢাকার পাশাপাশি দূরপাল্লার বাস বন্ধ

ঢাকা, ৩ আগস্ট (জাস্ট নিউজ) : রাজধানী ঢাকা শহরের অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল বন্ধের পাশাপাশি, বন্ধ রয়েছে দুরপাল্লা ও বিভিন্ন আন্তঃজেলা রুটের বাসও। ফলে অচল হয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।

গত রবিবার ঢাকার কুর্মিটোলায় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার ঘটনায় রাস্তায় নেমেছে শিক্ষার্থীরা। নিরাপদ সড়কের দাবিতে গণপরিবহনের লাইসেন্স, ড্রাইভিং লাইসেন্স যাচাই করছে শিক্ষার্থীরা। এরই জের ধরে ঢাকার রাস্তায় গত পাঁচদিন প্রায় বন্ধই ছিল গণপরিবহন। কিন্তু শুক্রবার থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এমনকি ঢাকা থেকে দূরপাল্লা বা আন্তঃজেলা কোনো বাসও ছেড়ে যায়নি এবং ঢাকায়ও প্রবেশ করেনি।

দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, তারা বাস চালানো বন্ধ রেখেছেন। তবে এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিক কোনো জবাব দেননি কেউ।

গাইবান্ধা থেকে অল্প কিছু গাড়ি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। অন্যদিকে, রাজশাহী থেকে সারাদেশের সাথে শুক্রবার সকাল থেকে যান চলাচল বন্ধ। তবে, শুধুমাত্র কিছু সংখ্যক বিআরটিসি গাড়ি চলছে।

একই বিভাগের অন্য জেলা বগুড়া থেকেও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল লতিফ মণ্ডল বলেন, যেহেতু গাড়ি ভাঙা হচ্ছে তাই আপাতত গাড়ি চলাচলের কোনো সিদ্ধান্ত নেই।

শুক্রবার সকাল থেকে খুলনা-ঢাকা ও যশোর-ঢাকা রুটে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট সোনা মিয়া বলেন, খুলনা যশোর ও যশোর ঢাকা বন্ধ। বাকিসব চালু। বন্ধের বিষয়ে এখনো সম্মিলিত কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

চট্টগ্রাম নগরীতে শুক্রবার সকাল থেকেই দূর পাল্লার পরিবহন বন্ধ রয়েছে। কদমতলী বাস টার্মিনাল থেকে খুব কম যাত্রী পরিবহন করছে কয়েকটি বাস। নগরীর অলংকার বাস স্ট্যান্ড একই অবস্থা।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম আন্ত:জেলা বাস মালিক সমিতির মহাসচিব কফিল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রাস্তায় রাস্তায় কাগজপত্র চেকিং হচ্ছে এ কারণে মালিক শ্রমিকরা ভয় পেয়ে গেছে। তাই, ভয়ে কেউ রাস্তায় গাড়ি বের করছে না।

চট্টগ্রামের পূর্বাঞ্চলীয় সড়ক পরিহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মৃণাল চৌধুরী বলেন, আমাদের গাড়ি বন্ধ রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেই। যদি প্রতিবন্ধকতা না আসে তাহলে চলবে। কিন্তু ভয়ে অনেকে চালাচ্ছে না। রাতে কদমতলি থেকে কিছু বাস ছেড়েছে সকাল থেকে তাও বন্ধ আছে। তারা শ্রমিকদের বলেছেন যাত্রীদের জিম্মি করা যাবে না। ছাত্রদের সংঘর্ষে জড়ানো যাবে না। সম্ভব হলে গাড়ি চালাতে হবে।

চট্টগ্রামের এস আলম পরিবহনের মো আরিফ বলেন, আজ সকালে তারা একটা গাড়ি ছেড়েছে। এ ছাড়া গতকাল রাতেও একটি বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়েছে। এছাড়া, ঢাকা চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম কক্সবাজার, চট্টগ্রাম রাঙ্গামাটিসহ প্রধান প্রধান সড়কে খুব কম গাড়ি দেখা যাচ্ছে।

সিলেট থেকে সব রুটে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে কোনো যানবাহন ছেড়ে যাচ্ছে না কিংবা প্রবেশও করছে না। চালকেরা জানিয়েছেন- সড়কে গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় মালিক সমিতির নির্দেশে তারা যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। আনুষ্ঠানিক ধর্মঘট না ডাকলেও পরিবহন শ্রমিকদের একাংশের বাধার কারনে সিলেটে প্রাইভেট যানবাহন ও সিএনজি অটোরিক্সার চলাচল কমে এসেছে।

বরগুনায় সড়কে নিরাপদ চলাচলের নিশ্চয়তার দাবিতে সব ধরণের বাস চলাচল বন্ধ করেছে জেলা বাস মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। জেলা বাস মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ সগীর হোসেন বলেন, ছাত্র আন্দোলনের নামে সারাদেশে পরিবহন ভাঙচুর ও অগ্নি-সংযোগ এবং নৈরাজ্য সৃষ্টি হওয়ায় বাস চলাচলে নিরাপত্তার দাবিতে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আজ থেকে বরগুনা থেকে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার কোনো বাস চলাচল করবে না। বর্তমান পরিস্থিতে আমরা সড়কে বাস চলাচলে অনিরাপদ বোধ করছি। সড়কে চলাচলে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলেই কেবল আমরা বাস চালাবো।

জেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সাহাবুদ্দিন সাবু বলেন, ছাত্রদের প্রতি আমাদের কোনো ক্ষোভ নেই। তাদের দাবি দাওয়া সরকার মেনে নিয়েছে। পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ অবস্থায় বাস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং শ্রমিকদের মারধর করার যৌক্তিকতা নেই। অরাজক পরিস্থিতিতে আমরা বাস চালাতে অনিরাপদ বোধ করি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বাস চালাব না।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১২৩২ঘ.)