গুণ্ডাতন্ত্রের দেশে আমাকে গুলি করে মারা হোক: ড. কামাল

গুণ্ডাতন্ত্রের দেশে আমাকে গুলি করে মারা হোক: ড. কামাল

ঢাকা, ৬ আগস্ট (জাস্ট নিউজ): ‘দেশে গণতন্ত্র নেই, গুণ্ডাতন্ত্র আছে’ বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই, আছে গুণ্ডাতন্ত্র। আমাদের জীবনের বিনিময়ে হলেও গুণ্ডাতন্ত্র মুক্ত হোক। আমি এই গুণ্ডাতন্ত্রের মধ্যে বেঁচে থাকতে চাই না। আমি চাই যে আমাকে গুলি করে মারা হোক। তাহলে বলতে তো পারবো, গুণ্ডাতন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে মারা গিয়েছি।’

সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক প্রতিবাদ ও সংহতি সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়নের প্রতিবাদ ও সংহতি সমাবেশের এই আয়োজন করে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ।

ড. কামাল হোসেন বলেন, বাংলাদেশে গুণ্ডাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে— এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমি এই গুণ্ডাতন্ত্রের মধ্যে বেঁচে থাকতে চাই না। কারণ, যে দেশের জন্য লাখো শহীদ জীবন দিয়েছে, যাদের লাশও আমরা পাইনি। তারা আমাদের ঋণী রেখে গেছেন। তারা একটা দেশ রেখে গেছেন— যেখানে সভ্যতা থাকবে। মানুষ মানবাধিকার ভোগ করবে। সেখানে গুণ্ডাতন্ত্র থাকা মানে তাদেরকে অপমান করা।’

দেশে অসুস্থ শাসন ব্যবস্থা চলছে দাবি করে এই আইন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এই কারণে বলবো যে, এটা অসুস্থ শাসন ব্যবস্থা। কারণ, এই তরুণ ছাত্রদের সাহায্য না করে তাদের ওপরে গুণ্ডা লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তরুণ ছাত্ররা যা দেখালো তা হলো জাগ্রত বিবেক। তা এখনও আমাদের মধ্যে আছে, যা প্রবলভাবে গোড়া দেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। কোনো অস্ত্র নাই তাদের কাছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘যারা লাঠি ও অস্ত্র নিয়ে মাঠে নেমেছে, তাদেরকে কোনো ছাত্র সংগঠন বলবো না। এদের একটাই শব্দ আছে— তা হলো গুণ্ডা। যারা লাঠি নিয়ে নিরীহ মানুষের ওপর হামলা করে, তাদেরকে আমরা গুণ্ডা ছাড়া আর কোনোভাবে চিহ্নিত করতে পারি না।’

গুণ্ডামুক্ত বাংলাদেশ চাই উল্লেখ করে কামাল হোসেন বলেন, ‘এদের থেকে দেশকে মুক্ত করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য। এরা থাকলে আমরা থাকতে পারবো না। সম্মান নিয়ে বাঁচা তো দূরের কথা, বেঁচেও থাকতে পারবো না। এই গুণ্ডাদের কারা লেলিয়ে দিয়েছে, তা চিহ্নিত করতে হবে।’

দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আছে জানিয়ে কামাল হোসেন বলেন, ‘এই ঐক্যবদ্ধ মানুষের ওপর গুণ্ডা লেলিয়ে দিয়ে ধ্বংস করা যাবে না বলে আমরা বিশ্বাস। আমাদের গুলি করে মেরে ফেলা হলেও এটা শেষ হবে না। এটা আরো চাঙা হবে। আমরা ভয়ে ভীত নই। মেরে ফেলেন।’

সংবিধানকে ছিঁড়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে বলেও দাবি করেন এই সংবিধান বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘সংবিধানের কোথাও লেখা আছে যে, পুলিশের পাশে লাঠিয়াল থাকবে। পুলিশের পাশে থেকে লাঠিয়াল বাহিনী বেআইনিভাবে নিরীহ মানুষের ওপর আক্রমণ করবে। আর পুলিশ এদের সহযোগী হবে। এটা পুলিশকে অপমান করা এবং তাদেরকে ধ্বংস করা।’

তিনি আরো বলেন, ‘পুলিশের আইজি কোনো সরকারের চাকর নয়। তিনি রাষ্ট্রের দায়িত্বে আছেন। সংবিধান অনুযায়ী আপনার দায়িত্ব হলো— গুণ্ডাদের পাশে পুলিশকে দাঁড়াতে দেবেন না। কেউ হুকুম করলেও আইজি তা করতে পারেন না। পারলে আপনার চেয়ারের পাশে একজন গুণ্ডাকে বসান। হয় আপনি নিজের দায়িত্ব পালন করুন, না হয় পদত্যাগ করুন। আমি আপনাকে পদত্যাগ করতে বলতে চাই না। কারণ, আপনার একটা সুনাম আছে। তাই বলবো, সুনাম নষ্ট করবেন না, দায়িত্ব পালন করুন।’

ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন- বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ।

(জাস্ট নিউজ/একে/১৮২৪ঘ.)