সরকার নিখোঁজদের বিষয়ে উদাসীন: সুলতানা কামাল

সরকার নিখোঁজদের বিষয়ে উদাসীন: সুলতানা কামাল

ঢাকা, ২৩ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : দেড়মাস নিখোঁজ থাকার পর শুক্রবার গভীর রাতে ফিরে এসেছেন মোবাশ্বার হাসান। এর আগের দিন ফিরেছেন নিখোঁজ সাংবাদিক উৎপল দাসও। তবে নিখোঁজ হওয়া অধিকাংশ ব্যক্তির খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি। যারা ফিরে এসেছেন তারা কেউ মুখ খুলতে চান না। এরকম একের পর এক নিখোঁজের ঘটনা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির জন্য কতটা ক্ষতিকর? এমন প্রসঙ্গে বিবিসি বাংলার সাথে কথা বলেছেন মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল।

তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতি মানবাধিকারের জন্য প্রচন্ড ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। নিখোঁজের বিষয়ে প্রথম থেকেই মানবাধিকার কমিশন কথা বলে আসছে। রাষ্ট্র সেটাকে খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে আমলে নেয়নি। এখন হারিয়ে যাওয়াটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, মানুষ এখন এটাকে দুর্ঘটনা বা সাংঘাতিক ব্যাপার মনে করছে না।

এমন পরিস্থিতিতে মানবাধিকার কর্মীরা এ নিয়ে হয়ত সরব, কিন্তু তারা সরকারকে কতটা চাপ প্রয়োগ করতে পেরেছে?

এমন প্রশ্নের জবাবে সুলতানা কামাল বলেন, সবচেয়ে বড় কথা, মানবাধিকার কমিশন প্রথম থেকে এ কথাগুলো বলে আসছে। যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন তারা এ বিষয়গুলোকে সেরকমভাবে আমলে নিতে চায়নি কিংবা তারা বিষয়টিকে এমনভাবে নিজেদের পলিসির মধ্যে নিয়ে এসেছে যে তারা এ ব্যাপারে কোনরকম আমলে নেবে না বা অন্তত প্রতিক্রিয়া করার সেরকম কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপও নেয়নি। সরকারের ওপরে চাপ সৃষ্টি করা গেছে তা নয়, কখনও কখনও দেখা গেছে তারা জবাবদিহি দেয়ার মতো করে কোনো একটা গল্প শুনিয়েছেন বা কথা বলেছেন- এর বেশি কাজ তারা করেছেন বলে আমার মনে হয় না।

যারা ফিরে এসেছেন তাদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঠিকমত কিছু বলছেন না। তাদের সাথে কথা বলে এসব ঘটনার কারণ বা প্রতিরোধ করার উপায় কী হতে পারে সে বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা কি মানবাধিকার কমিশন করেছে?

জবাবে তিনি বলেন, প্রশ্নের মধ্যেই উত্তর রয়ে গেছে। আমরা যখন তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি, তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা কথা বলতে রাজি হননি। প্রত্যেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যারা ফেরত এসেছে তাদেরকে কোথাও না কোথাও ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এমন তো হয়নি তাদেরকে পুলিশ বা রাষ্ট্রীয় বাহিনী গিয়ে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে। অনেক ক্ষেত্রে যখন আমরা একজন একজন করে কথা বলেছি তারা সবাই বলেছে, এ ব্যাপারে তাদের কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। তাদের ওপর দিয়ে যা হয়ে গেছে, তা নিয়ে কথা বললে ছেলে-মেয়ে বা পরিবারের অন্য সদস্যের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে এবং আরো বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে বলে তাদের মনে অনেক বড় ভীতি বা শঙ্কা কাজ করছে।

ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা বন্ধ করার জন্য মানবাধিকার কমিশনের মতো সংগঠনগুলোও কাজ করছে, তাদের কী কোনো পরিকল্পনা রয়েছে?

জবাবে সুলতানা কামাল বলেন, আমাদের সেরকম কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা পরিকল্পনা করে সে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারব- এমন কোনো ক্ষমতা আমাদের নেই। কিভাবে এটা বন্ধ করা যায় এ পরিকল্পনা সরকার বা রাষ্ট্রকে করতে হবে। নিখোঁজের ঘটনাগুলো রাষ্ট্রীয় বাহিনী করুক আর রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বাইরে অন্য কেউ করুক এটি বন্ধ করার ক্ষেত্রে সরকারি বা রাষ্ট্রীয়ভাবে একটা দায়-দায়িত্ব আছে। আমরা যেটা দেখতে পাই, সরকারি বাহনী এমন ভাব নেয় যে, এসব বন্ধে সরকারিভাবে তাদের কোনো দায় দায়িত্ব নেই। সিজার ফেরত আসার পর পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তিনি যেহেতু ফেরত এসেছেন সেজন্য মামলাটা এখানে শেষ হয়ে গেল। কিন্তু ফেরত আসা তো শেষ নয়। কারা নিলো, কী হলো, কী করল? এ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর বের করে তারা যদি জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে না আসে তাহলে তারা তো বারবারই এমন কাজ করবে।

সৌজন্যে: আমাদের সময়.কম

(জাস্ট নিউজ/একে/২২০০ঘ.)