মহাকাশ বাহিনী গঠনের ঘোষণা দিলো যুক্তরাষ্ট্র

মহাকাশ বাহিনী গঠনের ঘোষণা দিলো যুক্তরাষ্ট্র

ঢাকা, ১১ আগস্ট (জাস্ট নিউজ) : ২০২০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আলাদা করে মহাকাশ বাহিনী (স্পেস ফোর্স) গঠনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগনে তিনি এ ঘোষণা দেন।

পেন্স বলেন, চীন ও রাশিয়ার হুমকি ও ক্রমাগত প্রতিযোগিতার মধ্যে মহাকাশে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য নিশ্চিত করতে এ বাহিনী গঠন করা জরুরি। মহাকাশ বাহিনী গঠন করা হলে তা হবে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিভাগের ষষ্ঠ শাখা।

পেন্স আরো বলেন, মহাকাশ একসময় শান্তিপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামুক্ত ছিল। কিন্তু এটিতে এখন বেশি মানুষ যুক্ত হচ্ছে এবং প্রতিযোগিতা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, প্রশাসনগুলো সব কাজই করেছে কিন্তু মহাকাশে নিরাপত্তা হুমকির বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। আমাদের প্রতিযোগিতা মহাকাশকে এরইমধ্যে যুদ্ধের ময়দানে পরিণত করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র সে চ্যালেঞ্জ থেকে সরে আসবে না।

বর্তমানে সামরিক বিভাগের আওতায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, মেরিন ও কোস্ট গার্ড-এ পাঁচটি বাহিনী রয়েছে। মহাকাশ বাহিনী গঠিত হলে তা সামরিক বিভাগের ষষ্ঠ বাহিনী হিসেবে আবির্ভূত হবে।

তবে সামরিক বিভাগের নতুন শাখা গঠন করতে হলে কংগ্রেসনাল ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়। ধারণা করা হচ্ছে, কংগ্রেসে এ প্রস্তাবটি অনুমোদন করাতে গেলে ট্রাম্প প্রশাসনকে ডেমোক্র্যাটদের তুমুল বিরোধিতার মুখে পড়তে হবে।

পেন্স জানান, নতুন মহাকাশ বাহিনী গঠনের প্রস্তাবটি অনুমোদন করাতে এরইমধ্যে কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে কথা চলছে। তিনি বলেন, মহাকাশ কিংবা পৃথিবী, সব জায়গাতেই যুক্তরাষ্ট্র সবসময় শান্তি চেয়েছে। কিন্তু ইতিহাস প্রমাণ করে শক্তিমত্তার মধ্য দিয়েই কেবল শান্তি বজায় রাখা যায়। সামনের দিনগুলোতে মহাকাশে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনী তেমন শক্তিমত্তা হিসেবেই হাজির হবে।

মহাকাশবিষয়ক সহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ সৃষ্টির কথাও ভাবছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ পদে আসীন হওয়া ব্যক্তি স্বাধীন মহাকাশ বাহিনীর নেতৃত্বে থাকবেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস শুরুতে ব্যয়বহুল আলাদা একটি সামরিক শাখা গঠনের বিরোধিতা করেছিলেন। তবে এখন তিনি এ ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন।

অবসরপ্রাপ্ত যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশচারী মার্ক কেলি মহাকাশ বাহিনী গঠনের এ প্রস্তাবকে ‘নির্বোধ চিন্তা’ বলে উল্লেখ করেছেন। তার দাবি, বর্তমানে বিমান বাহিনী যে কাজগুলো করছে, মহাকাশ বাহিনীর কাজ তার থেকে আলাদা কিছু হবে না।

মহাকাশে হুমকি প্রশ্নে মার্ক কেলি বলেন, সেখানে হুমকি আছে ঠিকই, কিন্তু সেগুলো এখন মার্কিন বিমান বাহিনীই সামলাচ্ছে। আরো একটি আমলাতন্ত্র তৈরির কোনও মানে নেই।

গত বছর জুলাইয়ে ‘মহাকাশ বাহিনী’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাষ্ট্র। এই বাহিনী গঠনের জন্য ভোট দেন মার্কিন হাউজ আর্মড সার্ভিস কমিটির সদস্যরা। তখন জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর ষষ্ঠ এই শাখা পৃথিবীর আবহ মণ্ডলের বাইরে অর্থাৎ মহাশূন্যে সামরিক তৎপরতায় নিয়োজিত থাকবে। প্রয়োজনে যুদ্ধও করবে এই বাহিনী। ১৯৪৭ সালের পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর কোনও নতুন শাখা খোলা হচ্ছে।

২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের অর্থাৎ আগামী দু’বছরের কম সময়ের মধ্যে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা যাবে বলে মনে করা হচ্ছিল। তবে এখন মাইক পেন্স এই বাহিনী ২০২০ সালে মধ্যে গঠন করা হবে বলে জানালেন। আনুষ্ঠানিকভাবে এই বাহিনী অনুমোদন লাভ করার পর দেশটির মহাকাশ কমান্ডের ছাতার তলে চলে আসবে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর আওতাধীন সব মহাকাশ মিশন। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ কমান্ডের একজন নতুন প্রধানও থাকবেন। আর এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফে যোগ হবে ১৮তম সদস্য।

যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী বর্তমানে মহাকাশ বিমান এক্স-৩৭বি দিয়ে একটি গোপন মিশন পরিচালনা করছে। মহাকাশে টানা ৭১৮দিন থাকার রেকর্ড সৃষ্টি করে গত বছর জুনে পৃথিবীতে ফিরে আসে এক্স-৩৭বি। মহাকাশে থাকার সময় এটি কী দায়িত্ব পালন করেছিল সে সম্পর্কে প্রকাশ্য কিছুই জানা যায়নি। ওই বছরের আগস্টে পুনরায় এটি মহাকাশ মিশনে যাবে বলে জানা গিয়েছিল। মনে করা হচ্ছে এই বাহিনীর কাজেই ব্যবহার করা হচ্ছে এই গোপন মিশনকে। সূত্র:গার্ডিয়ান

(জাস্ট নিউজ/এমআই/০৯১৬ঘ.)