ইভিএমে মাহবুব তালুকদারের ৭ আপত্তি

ইভিএমে মাহবুব তালুকদারের ৭ আপত্তি

ঢাকা, ৩১ আগস্ট (জাস্ট নিউজ) : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার পক্ষে সাতটি বিষয় তুলে ধরে আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

গতকাল বৃহস্পতিবার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনীর প্রস্তাব চূড়ান্ত করতে বসা ইসির বৈঠকে মাহবুব তালুকদার তার আপত্তি জানান। সভা শুরুর আধা ঘণ্টার মধ্যে মাহবুব তালুকদার সভা বর্জন করে বের হয়ে যান।

বৈঠকে ইভিএম ব্যবহারে দ্বিমত করে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে মাহবুব তালুকদার আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার বিভিন্ন কারণ তুলে ধরেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি যে মূল বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে রয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার ভিত্তিতে ইভিএম ব্যবহারের সম্ভাবনা না থাকা, বিনা দরপত্রে কেনা ইভিএমের কারিগরি পরীক্ষায় ঘাটতি, ইভিএম ব্যবহারে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা, ইভিএম ব্যবহার হলে আদালতে মামলার সম্ভাবনা, ইভিএম ব্যবহারে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব, ইভিএম নিয়ে ভোটারদের সন্দেহ ও অনভ্যস্ততা, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে আরো সময়ের প্রয়োজনীয়তা।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অধিকতর আলোচনা ও সমঝোতার প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন মাহবুব তালুকদার।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ইতিমধ্যে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। সরকারি দলের পক্ষ থেকে ইভিএম ব্যবহারকে স্বাগত জানানো হলেও প্রধান বিরোধী দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল এর বিরোধিতা করে আসছে। এ অবস্থায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার ভিত্তিতে ইভিএম ব্যবহারের কোনো সম্ভাবনা নেই।

মাহবুব তালুকদার বলেন, সরকারি সংস্থার সুবাদে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) থেকে বিনা টেন্ডারে যে ইভিএম ক্রয় করা হচ্ছে, এর উৎস (অরিজিন) কী, কে উদ্ভাবন করেছে কিংবা কোত্থেকে আমদানি করা হচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কারিগরি দিক থেকে এটি সম্পূর্ণ ত্রু টিমুক্ত কি না, তা আরও পরীক্ষা করার প্রয়োজন ছিল। প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর পর এখন পর্যন্ত প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি বলে জানা যায়।

লিখিত বক্তব্যে মাহবুব তালুকদার আরও বলেন, সর্বসম্মত রাজনৈতিক মতের বিরুদ্ধে ইভিএম ব্যবহার করা হলে তা নিয়ে আদালতে অনেক মামলার সূত্রপাত হবে। অন্যান্য কারণ বাদ দিলেও কেবল ইভিএম ব্যবহারের কারণে আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা আছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের এই অনাবশ্যক ঝুঁকি নেওয়া সংগত হবে না।

ইভিএম ব্যবহারের জন্য নির্বাচন কমিশন যাঁদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, তা অপর্যাপ্ত। অনেক ভোটার ইভিএম ব্যবহার সম্পর্কে অনীহা জানিয়েছেন। তাঁরা ইভিএম নিয়ে যে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, তা নিরসনের জন্য ব্যাপক প্রচার ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন ছিল।

সবশেষে মাহবুব তালুকদার লিখেছেন, স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ধীরে ধীরে ইভিএমের ব্যবহার বাড়ানো হলে ভোটাররা তাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়বেন। এই অভ্যস্ততার জন্য যে সময়ের প্রয়োজন, তা একাদশ জাতীয় সংসদের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। তবে স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবস্থা সাফল্য লাভ করলে পাঁচ-সাত বছর পরে জাতীয় নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহার অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে।

সভা বর্জনের পরে বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে নিজের কার্যালয়ে মাহবুব তালুকদার গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। কমিশনের বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বৈঠকের কার্যপত্রে আরপিও সংশোধনের বিষয়টি ছিল। আমি মোটেই চাই না আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হোক। এখন তাঁরা বসে বসে আরপিও সংশোধন করতে থাকবেন আর আমি মূর্তি হয়ে বসে থাকব, তা আমার কাছে যথাযথ মনে হয়নি। আমার কাছে মনে হয়েছে, তাঁরা তাঁদের কাজ করুক, আমি আমার কাজ করি।’

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৪৫০ঘ.)