সরকারকে চাপে ফেলার নতুন কৌশলে বিএনপি

সরকারকে চাপে ফেলার নতুন কৌশলে বিএনপি

ঢাকা, ৫ সেপ্টেম্বর (জাস্ট নিউজ) : বিরোধী দল-বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতারা দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মঙ্গলবার আবারো বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে বৈঠক করে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতসহ ১৯টি দেশের দূতাবাস বা হাইকমিশন থেকে প্রতিনিধিরা বিএনপি নেতাদের আমন্ত্রণে এই বৈঠকে অংশ নেন।

দলের নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ার পর গত সাত মাসের প্রায় প্রতি মাসেই বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে বসেছেন বিএনপি নেতারা।

বিএনপি বলছে- দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বিদেশি কূটনীতিকদের অবহিত করছেন।

কিন্তু এতে কী উদ্দেশ্য হাসিল হচ্ছে বিএনপির?
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবিসিকে বলেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তারা তাদের অবস্থান সম্পর্কে বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেন। লক্ষ্য একটাই- আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জানা উচিত, দেশে কী ঘটছে। এবং এখানে গণতন্ত্রের অবস্থা কী? গণতান্ত্রিক স্পেস কতটুকু আছে। কীভাবে সরকার সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। এই বিষয়গুলোই আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করি।

সর্বশেষ বৈঠকে বিএনপি নেতারা তাদের নেত্রীর জেলে থাকা এবং নির্বাচন নিয়েই মূলত কথা বলেছেন।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, আগামী নির্বাচনের আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে প্রভাবশালী দেশগুলো যাতে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে, সেই প্রত্যাশা থেকে বিএনপি এখন ঘন ঘন কূটনীতিকদের নিয়ে বৈঠক করছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী মনে করেন। এর মাধ্যমে সরকারের উপর যাতে একটা চাপ সৃষ্ট হয়, সেটাই বিএনপির প্রত্যাশা।

‘বিএনপি চায় একটা অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ, অবাধ নির্বাচন করতে বিদেশিরা সরকারকে পরামর্শ দেবে। এটা বিএনপি আশা করে।’

বাংলাদেশের রাজনীতিতে যখন যারাই বিরোধী দলে থাকে, তারাই দেশে কোনো বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হলে বিদেশি কূটনীতিকদের শরণাপন্ন হয়।

এমনকী অনেক সময় সরকারের পক্ষ থেকেও বিদেশিদের কাছে বিশেষ কোনো পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। যেমন নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর সরকারের পক্ষ থেকেও বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করতে দেখা গেছে।

অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে বাইরের শক্তির প্রভাব এখনও যে আছে, সে বিষয়ে সন্দেহের তেমন কোনো অবকাশ নাই।’

তবে বিএনপি যে কয়েকমাস ধরে নিয়মিত বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে বৈঠক করছে তা নিয়ে সরকারের সিনিয়র মন্ত্রীদেরও অনেকে বলেছেন, বিদেশীদের কাছে দেশের রাজনীতি নিয়ে নালিশ করা হচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব আলমগীর এমন কথা খারিজ করে দিলেন।

‘কোনো নালিশের ব্যাপার এটার মধ্যে থাকে না। আমরা শুধু অবহিত করি যে কি ঘটছে এদেশে। এখনতো কোনো দেশই বিচ্ছিন্ন না। একটা টোটাল ভিলেজের মত। সেক্ষেত্রে যারা ডেভেলপমেন্ট পার্টনার আছে, যারা গণতান্ত্রিক দেশ আছে, বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতিশীল দেশ যেগুলো আছে, তাদের আমরা বিষয়গুলো অবহিত করি।’

অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে বিএনপির এই নিয়মিত গণসংযোগ সরকারের উপর কিছুটা হলেও এক ধরণের মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করছে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সংবিধান লঙ্ঘন করে সরকার কারাগারে আদালত স্থাপন করছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ অভিযোগ করেন।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচার এখন অনুষ্ঠিত হবে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় করাগারে। আদালত বসানোর এ সিদ্ধান্ত আজই হয়। আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আজ এক প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে। মামলার আসামি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অপর মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে এই কারাগারে বন্দী আছেন। তিনি এ মামলায় নির্ধারিত তারিখে হাজিরা না দেওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলছেন, এটি হলে তা হবে আইনের পরিপন্থী। এরপর মির্জা ফখরুলও এর প্রতিবাদ করলেন।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার মামলা এতদিন একটি বিশেষ আদালত তৈরি করে ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে চলছিল। এখন সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর নিচ্ছে। এটি একটি ক্যামেরা ট্রায়াল। এ ধরনের মামলায় ক্যামেরা ট্রায়ালের সুযোগ নেই। এ পদক্ষেপ সম্পূর্ণ সংবিধানবিরোধী।

মির্জা আলমগীর বলেন, ‘একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতেই সরকার এটি করছে। অত্যন্ত হীন উদ্দেশ্যে এসব কার্যক্রম করছে ক্ষমতাসীনেরা। এ ধরনের কার্যক্রম আসন্ন নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। বিএনপি এটিকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে, এটিকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। এরর পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে জানানো হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা আলমগীর বলেন বলেন, সবচেয়ে বড় কথা খালেদা জিয়া একজন প্রবীণ রাজনীতিক। তার অধিকার হরণ করা হচ্ছে। সংবিধান লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এ সময় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, সংবিধান যতবার ও যতগুলো সংশোধন হয়েছে, কোনোবারই ৩৫ ধারা সংশোধন করা হয়নি। আজ একটি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সেটি পরিবর্তন করেছে সরকার। বিএনপির স্থায়ী সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১১১৫ঘ)