ঢাকা, ৬ সেপ্টেম্বর (জাস্ট নিউজ) : : বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী দক্ষিণ এশিয়া ভিত্তিক একটি পত্রিকায় লিখেছেন, ক্রমেই এমন অভিমত জোরালো হচ্ছে যে, নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হলে আওয়ামী লীগ আগামী সংসদ নির্বাচনে লজ্জাজনক সংখ্যালঘুতে পরিণত হবে। অনেক সমালোচক বিশ্বাস করেন, শেখ হাসিনা সরকার নির্বাচন ‘ম্যানেজ’ করবে। দক্ষিণ এশিয়ায় একে বলা হয় ‘নির্বাচনী জালিয়াতি’।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার ২০০৭-২০০৯ ও ডেপুটি হাই কমিশনার ১৯৯৯-২০০২ দায়িত্ব পালন করা এই কুটনৈতিক সাউথ এশিয়ান মনিটরে লেখা কলামে তিনি বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন ও রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন।
তিনি লিখেছেন, শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন, বিরোধী দলকে দলন ও ব্যাপক দুর্নীতি। নির্বাচনী প্রচারণায় এসব ইস্যু ও ভারত ফ্যাক্টর প্রাধান্য পাবে। রাজনৈতিক বিরোধীদের অব্যাহতভাবে হয়রানি করার ফলে জনগণের বিভিন্ন অংশের মধ্যে নীরব ক্ষোভ বেড়েই চলেছে এবং ব্যাপকভাবে এই ধারণার সৃষ্টি করেছে যে আওয়ামী লীগ সরকার পরিকল্পিতভাবে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করছে।
তিনি লিখেছেন, সরকারি চাকরির কোটার মতো ঘরোয়া ইস্যু এবং ঢাকার অবাধ্য ও বিশৃঙ্খল যানবাহন নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে শিক্ষার্থীদের ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে ওঠা আন্দোলন অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ক্ষমতা রাখে। বিভিন্ন ইস্যুতে শেখ হাসিনার সরকারের ছন্দপতন ঘটেছে, যথাযথভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো ঢাকার অবাধ্য যানবাহন চালকদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। এসব চালক দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের কাছ থেকে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে থাকে। দুই ছাত্রের মৃত্যুর ফলে দেশব্যাপী ছাত্রদের ক্রোধ উষ্কে দেয়া ও এই ইস্যুতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নস্যাতের অভিযোগে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এক ফটোগ্রাফারকে গ্রেফতার ছিল বেপরোয়া সিদ্ধান্ত। এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি করে। কিন্তু শেখ হাসিনা কোনো ধরনের নমনীয়তা প্রদর্শন করেননি।
সমালোচকেরা অভিযোগ করছেন যে প্রতিটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে আপস করে সেগুলো দলের প্রতি সহানুভূতিশীলদের দিয়ে বোঝাই করা হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে কথিত জাতীয় অভিযানটি ‘গুলি করে হত্যার’ নীতিতে পর্যবেশিত হয় বলে মানবাধিকার অ্যাক্টিভিস্টরা জানিয়েছেন। এতে অনেক নিরপরাধ মারা যায়। হিন্দু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য সুপ্রিম কোর্টের সাবেক এক প্রধান বিচারপতি সরকারের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পদত্যাগ করতে ও বিদেশে নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন। সাধারণভাবে আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থনসূচক থাকা হিন্দু সংখ্যালঘুরাও ক্ষুব্ধ, কারণ আওয়ামী লীগ নেতারা দায়মুক্তির সাথে হিন্দু সম্পত্তি জবরদখল করেছে। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, আওয়ামী লীগকে সমর্থন করা ছাড়া ভারতের কাছে আর কোনো বিকল্প নেই এবং হিন্দু সংখ্যালঘুদের হয়রানি ও বৈষম্য করা হলেও কিছু বলবে না।
তিনি আরও লিখেছেন, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র দেয়াল পিঠ ঠেকে যাওয়ায় দেশজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে। এতে করে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ করার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকলেও তা বিএনপির দাবি- ক্ষমতাসীনরা বাদে অন্য যেকেউ নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্বে আসুক-পূরণ করতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থার অভাব বিপুল ও তাদের একমতে পৌঁছা অসম্ভব। বিরোধীদের সাথে কোনো ধরনের সংলাপে অনীহার কথা বারবার জোর দিয়ে বলছেন শেখ হাসিনা।
কলামে পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী লিখেছেন, তারেক রহমানের সমর্থনপুষ্ট মধ্যপন্থী বিএনপি নেতারা ভারতের সাথে যোগাযোগ করেছেন। ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উৎসাহ দিয়েছেন তারেক।
তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতে যথাক্রমে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফলে বিএনপি’র শেখ হাসিনাকে ভারতের প্রতি অতিরিক্ত নতজানু দেখানোর সম্ভাবনা থাকায় ভারত ফ্যাক্টর হবে বিপুল। প্রধান সমালোচনা হবে, শেখ হাসিনা ভারতকে খুব বেশি ছাড় দিয়েছেন, কিন্তু বিনিময়ে পেয়েছেন অতি সামান্য। আসামের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) প্রকাশের ফলে ইস্যুটি ভারতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ফলে দীর্ঘ দিন ঝুলে থাকা অবৈধ অভিবাসী ইস্যুটি বাংলাদেশকে অব্যাহতভাবে উদ্বিগ্ন করবে। বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে এনআরসি থেকে সৃষ্ট অনিবার্য প্রভাব থেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। নদীর পানিবণ্টন এখনো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেলেও তা কাটিয়ে ওঠা যাবে না এমন নয়।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক পূর্ণ বিকশিত পর্যায়ে উপনীত হয়েছে এবং পরিকাঠামোর আরো একীভূতকরণ, সীমান্ত বাণিজ্য কেন্দ্র আরো আধুনিকায়ন, মটরযান চুক্তি, দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ভবিষ্যতে আরো জোরালো হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ঢাকায় যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন ভারত তার সাথে কাজ করবে। তাই বলে কোন হাসিনা-বিরোধীকে ভারত বিকল্প মনে করছে, এমনকিছু ভাবা হবে কষ্টকর কল্পনা। অবশ্য, হাসিনার স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতা ও তার প্রতি ভারতের সমর্থন অনিবার্য মনে করাটা ভারতের স্বার্থের অনুকূল নয়- ভারতের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ক্রমেই এমন অনুভূতিও জোরালো হচ্ছে।
(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২২৩৭ঘ.)