মিয়ানমারের বিচারে আরেক পা বাড়াল জাতিসংঘ

মিয়ানমারের বিচারে আরেক পা বাড়াল জাতিসংঘ

ঢাকা, ২৮ সেপ্টেম্বর (জাস্ট নিউজ) : মিয়ানমারে অসহায়-নিরস্ত্র রোহিঙ্গাদের হত্যা-ধর্ষণ-বর্বর নির্যাতনের সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহে একটি আন্তর্জাতিক প্যানেল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল। নতুন এ প্যানেল প্রক্রিয়া শুরুর মাধ্যমে মিয়ানমারের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আরো এক ধাপ এগুলো জাতিসংঘ। বৃহস্পতিবার জেনিভায় মানবাধিকার কাউন্সিলের অধিবেশনে ভোটাভুটিতে এ প্যানেল প্রস্তাব পাস হয়।

শুধু রোহিঙ্গা নিধনই নয়, ২০১১ সাল থেকে মিয়ানমারে গুরুতর যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটেছে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করবে এ প্যানেল। প্রস্তাবে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসকে প্যানেলের কর্মী নিয়োগ ও তহবিল জোগানোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। খবর রয়টার্সের আন্তর্জাতিক এ প্যানেল শুধু তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের পাশাপাশি অপরাধিদের বিচারেও আন্তর্জাতিক আদালতকে (আইসিসি) সাহায্য করবে।

তাদের সংগৃহীত আলমত আইসিসিকে সরবরাহ করে মামলার নথি তৈরির কাজ এগিয়ে নেবে এ প্যানেল। রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে মিয়ানমারে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করার সুপারিশের পর এ সিদ্ধান্ত নিল মানবাধিকার কাউন্সিল। ৪৭ সদস্যের এ কমিশনে প্রস্তাবের পক্ষে ৩৫ এবং বিপক্ষে তিন ভোট পড়ে। সাত সদস্য দেশ ভোটদানে বিরত থাকে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ওআইসির আনা ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ভোট দেয় কেবল মিয়ানমারের মিত্র চীন, ফিলিপিন্স ও বুরুন্ডি। মানবাধিকার কাউন্সিলের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জেনেভা শাখার পরিচালক জন ফিশার বলেন, মিয়ানমারে সহিংসতার অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। সেসব ঘটনার জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করতে মানবাধিকার কাউন্সিলের এ পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেনাবাহিনীর অপরাধের দায়মুক্তির যে সংস্কৃতি মিয়ানমারে গড়ে উঠেছে, তা ভাঙতে প্যানেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন ফিশার।

তিনি আরো বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের উচিত মানবাধিকার কাউন্সিলের এ নতুন প্যানেলকে স্বাগত জানানোর মাধ্যমে মিয়ানমারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের বিচার উদ্যোগকে সমর্থন জানানো।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ক্রাইসিস রেসপন্স বিভাগের পরিচালক তিরানা হাসান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মিয়ানমারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে মানবাধিকার কাউন্সিলের এ সিদ্ধান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর মধ্যদিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি মিয়ানমারের নিপীড়িত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর বিচার পাওয়ার পথ সুগম হবে।’

মানবাধিকার কাউন্সিলে এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করায় চীনের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু স্থাপনায় ‘বিদ্রোহীদের’ হামলার পর রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান। সেই সঙ্গে শুরু হয় বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে রোহিঙ্গাদের ঢল।

তাদের কথায় পাওয়া যায় নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন বলেছে, রাখাইনে যে ধরনের অপরাধ হয়েছে, আর যেভাবে তা ঘটানো হয়েছে, মাত্রা, ধরন এবং বিস্তৃতির দিক দিয়ে তা ‘গণহত্যার অভিপ্রায়কে’ অন্য কিছু হিসেবে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টার সমতুল্য।

১৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে উপস্থাপন করা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মিয়ানমারের সেনাপ্রধান এবং জ্যেষ্ঠ পাঁচ জেনারেলকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) বা বিশেষ ট্রাইবুনাল করে বিচারের মুখোমুখি করার কথা বলা হয়।
এ মিশনের প্রধান মারজুকি দারুসমান বলেছেন, ‘তাতমাদো যতদিন আইনের ঊর্ধ্বে থাকবে, ততদিন শান্তি ফেরানো সম্ভব হবে না। মিয়ানমারের উন্নয়ন এবং একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়ে ওঠার পথে দেশটির সেনাবাহিনীই সবচেয়ে বড় বাধা।’

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১১০০ঘ.)