জনসভার পর সরকারের কাঁপুনি ধরে গেছে: রিজভী আহমেদ

জনসভার পর সরকারের কাঁপুনি ধরে গেছে: রিজভী আহমেদ

ঢাকা, ১ অক্টোবর (জাস্ট নিউজ) : ‘বিএনপির সমাবেশের উপস্থিতি প্রমাণ করে বিএনপির জনপ্রিয়তা কমেছে’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে বিএনপি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের উত্তরে নীরব হাসি ছাড়া আর কিইবা বলতে পারি। আসলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকা, বিপুল পরিমাণ চাঁদাবাজির টাকা খরচ করেও সমাবেশে মানুষ আনতে পারেন না, আবার কিছু লোক এলেও ধরে রাখতে পারেন না ক্ষমতাসীন নেতারা, পথে পথে সরকারি আক্রমণ আর বাধার মুখেও এত বিপুল মানুষের বিএনপির সমাবেশ দেখে তারা হতাশ হয়ে মনের বিকারে প্রলাপ বকছেন।

সোমবার সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, একতরফাভাবে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে আওয়ামী নেতারা কত তামাশা দেখাচ্ছেন, আর কত যে উদ্ভট কথা বলছেন তার শেষ নেই। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের এখন হতভাগ্য দেউলিয়াগ্রস্ত রাজনীতি। সেজন্যই খাপছাড়া কথা বলছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। জনসভায় বিপুল সমাগম দেখে সরকারের কাঁপুনি ধরে গেছে, সেজন্যই বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে ব্যাপকহারে গ্রেফতারকে সরকার রক্ষাকবচ মনে করছে। গতকাল জনসভা শেষে আমরা দেখলাম, বিএনপি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঔদ্ধত্য আক্রমণে গ্রেফতার করার মহড়া।

রিজভী আহমেদ বলেন, গতকাল বিএনপির জনসভা মহাসাগরে পরিণত হয়। চারিদিক থেকে ধেয়ে আসা জনস্রোতে সোহরাওয়ার্দীর বিশাল প্রান্তরকে কানায় কানায় পরিপূর্ণ করে। রমনা পার্কসহ আশেপাশের রাস্তাঘাট, মোড় ও ফুটপাত মিটিং শুনতে আসা মানুষে ঠাসা ছিল। শাহবাগ, কাকরাইল, মৎস্যভবন এলাকাসহ সংলগ্ন এলাকাগুলোতে ছিল উর্মীমালার মতো জনতার ঢেউ। তিল ধারণের ঠাঁই নেই। মিছিলে মিছিলে কেঁপেছে ইট, পাথর কংক্রীটের রাজপথ। জনসভার আঙ্গিক বিস্তৃত হয়ে স্মরণকালের মহাসমাবেশে পরিণত হয়।

তিনি বলেন, গতকাল দুপুর থেকে জনসভাস্থলে আসা শুরু হয় মিছিলের প্রবাহ। দাবদাহ পীড়িত, পিপাসার্ত মানুষ নিজেদের কষ্টকে প্রশ্রয় না দিয়ে দেশনেত্রীর মুক্তির জন্য, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য বুকের মধ্যে চলকে ওঠা আবেগ নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে জনজোয়ারে পরিণত করে। তারা যেন ‘এদেশ কাড়তে যেই আসুক/আমরা সাহসে বেঁধেছি বুক/আমরা নইকো ভীরুর জাত/দেবো নাকো হতে দেশ বেহাত’ এই অভয় মন্ত্র বুকের মধ্যে ধারণ করে ছুটে আসে জনসভাস্থলে।

তিনি বলেন, গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির জনসভা ঘিরে ঢাকার ভিতরে ও আশেপাশের বিভিন্ন পয়েন্টে গণপরিবহন বন্ধ করে দেয় ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র নেতাকর্মীরা। বিএনপি নেতাকর্মীদের সন্দেহ করে পথে পথে বাধা দিয়েছে তারা। মারধরের ঘটনাও ঘটেছে বিভিন্ন স্থানে। সকাল থেকেই ঢাকা মহানগরীর প্রবেশ পথ আগলে রাখে পুলিশের পাশাপাশি আওয়ামী ক্যাডাররা। গত শনিবার রাত থেকেই ঢাকা মহানগরীসহ আশেপাশের জেলাগুলোতে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় চলে পুলিশী তল্লাশী। গতকাল ভোরেই আওয়ামী ক্যাডাররা বাস কাউন্টার থেকে কর্মচারী ও গাড়ি সরিয়ে দিয়ে সারাদিন বাস সার্ভিস বন্ধ রাখে। ঢাকা মহানগরীর নিকটবর্তী ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও পূর্বাচলে ৩০০ ফিট মহাসড়কে পুলিশের প্রটেকশনে দিনমান চলে আওয়ামী ক্যাডারদের মোটরসাইকেল মহড়া। বিএনপির লোক সন্দেহে ট্রেন থেকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে সাধারণ যাত্রীদের। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।

গ্রেফতারের চিত্র তুলে ধরে রিজভী আহমেদ বলেন, ঢাকা জেলায় আমান উল্লাহ আমানের নির্বাচনী এলাকা কেরানীগঞ্জ মডেল থানা বিএনপি নেতা আলতাফ হোসেন যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেন, খোকন, শাহাদৎ, মালেক ও শাহ আলম, ছাত্রদল নেতা মহসীন, শাহাদাৎ, বাবু, রাজিব, নাসির, ওমর ফারুক, আলী, সাইদুর, এবং স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মজিবর রহমানসহ ১৬ জনের অধিক নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

কামরাঙ্গিরচর থানা বিএনপি নেতা তোফাজ্জল, ছাত্রদল নেতা সুমন, মাসুম, শতাব্দী, সাইফুর, আরিফসহ ছয়জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ময়মনসিংহে গফরগাও উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আনসারুল ইসলাম, পাগলা থানা ছাত্রদল নেতা মুকুট, ইসলাম, সুমন, মামুন, ফারুক, রুহুল, মোমেনসহ ২০ জনকে জনসভা শেষে ফেরার পথে কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে শাহজাহানপুর থানা পুলিশ গ্রেফতার করে।

গাজীপুর জেলা যুবদলের সভাপতি মনির হোসেন, কালীগঞ্জ থানা যুবদলের নেতা লিটন মাস্টার, তরিকুল ইসলাম সুমনকে জনসভা শেষে ফেরার পথে পুলিশ গ্রেফতার করে। শ্রীপুর থানা ছাত্রদল নেতা আনোয়ার সরকার, নাজমুল হক, মো: আসাদ, মো: রিপন, জুয়েল মিয়া, আশরাফুল হক, লুৎফর রহমান ও মোঃ ফাইজুকে জনসমাবেশ থেকে ফেরার পথে পুলিশ গ্রেফতার করে।

তিনি বলেন, ঢাকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা যুবদলের আল-আমিন, দক্ষিণ খান থানা যুবদলের ফয়সাল, খিলক্ষেত থানা যুবদলের ইমরান, যুবদল নেতা নবী ও বাবু, বাড্ডা থানা যুবদলের মো: নিজাম হোসেন, শেরেবাংলা নগর থানা যুবদলের খলিলুর রহমান ও জাহাঙ্গীর হোসেন, বাড্ডা থানা বিএনপি নেতা সাব্বির আহমেদ, মো: জসিম, রামপুর থানা বিএনপি নেতা মন্টু মিয়া, শাহজাহান, সাতারকুলের সামছুল হক ও আওলাদ হোসেন, গুলশান থানা যুবদলের মো: সেলিম ও কামাল হোসেনকে গতকাল জনসভা থেকে ফেরার পথে পুলিশ গ্রেফতার করে। আদাবর থানা বিএনপি নেতা সাইফুল, কালাম, সবুজ, সোহাগ, জামাল, মোহাম্মদপুর থানা বিএনপির নেতা রানাসহ মোট ১৪ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

রিজভী আহমেদ আরো বলেন, নিউমার্কেট থানা যুবদল নেতা আবদুল রাজ্জাক রনি ও আবদুল মান্নান, পল্টন থানা যুবদলের আরিফ, যাত্রাবাড়ী যুবদলের রুবেল, ডেমরার ফাহিম ও সাব্বির এবং লালবাগে সজিব হোসেন, মো: নাঈম, মো: আশিক হোসেন, আলী হামজা, মো: আরিফ হোসেন, ধানমন্ডি থানা ছাত্রদল নেতা মো: আশিক, কদমতলী থানা ছাত্রদল নেতা মো: মামুন হোসেন, ডেমরা থানা ছাত্রদল নেতা মাসুদ রানাকে জনসভা থেকে ফেরার পথে পুলিশ গ্রেফতার করে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানা বিএনপির মো: আলী আজম জালালকে সভাশেষে মৎস্যভবনের সামনে থেকে গ্রেফতার করে। নরসিংদীর স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আফছার উদ্দিন দেওয়ান, মো: শামীম, মো: ছানি, মো: রাজিবকে জনসমাবেশ থেকে ফেরার পথে পুলিশ গ্রেফতার করে।

তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলা বিএনপি নেতা ওবায়দুর রহমান, পারভেজ, জিয়ানকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। মুন্সিগঞ্জ জেলা যুবদলের নেতা আল আমিন, ছাত্রদল নেতা যুবরাজকে জনসভা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। নারায়ণগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আলী আহমেদ, মো: সোহেলকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। শান্তিপূর্ণ জনসভাকে কেন্দ্র করে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোবাশ্বের আলম ভূইয়া, মজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়।

রিজভী আহমেদ বলেন, ঢাকা মহানগরীর সোহেল রহমানকে গ্রেফতার করা হলেও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে যে তিনি ডিবি কার্যালয়ে আছেন অথচ এখনো তাকে গ্রেফতারের বিষয়টি পুলিশের পক্ষ থেকে অস্বীকার করা হচ্ছে।

এছাড়া ২০ নং ওয়ার্ড বিএনপির মো: হারুন, ওয়ারী থানার লিঠু, নিউমার্কেট থানার জসিম, আলমগীর, মোয়াজ্জেম, নওগাঁর বদলগাছি থানা যুবদল নেতা জহিরুল ইসলাম, পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা বিএনপির সামসুর রহমান, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির মনি পাহিনী, হৃদয়, সম্রাট পাহিনীসহ ১০ জন, নোয়াখালী সূবর্ণচর বিএনপি নেতা ও ঢাকাস্থ সূর্বণচর জাতীয়তাবাদী ফোরামের সভাপতি এম এ কালাম, জাসাসের খালেদ এনাম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবুল কালাম, মেহেদী হাসান লিটু, নাঙ্গলকোট থানা ছাত্রদলের আহসান মজুমদার নিশাত, যুবদলের ইসমাইল মজুমদার, মো: শিহাব খন্দকার, বটতলী ইউনিয়ন ছাত্রদলের মো: ইয়াসিন আলী, মনছুর আহম্মদ ভুঁঞা, জোড্ডা ইউনিয়ন যুবদলের মো: ছাদেক, ছাত্রদলের মো: ওমর ফারুক খোকন, ইসরাফিল হোসেন সুমনসহসহ প্রায় চার শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার এবং দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে জনসভাস্থলে আসতে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক নেতাকর্মীদেরকে বাধাদানের ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি। গত পরশু যুবদলের আবু সেলিম চৌধুরীর বাসভবন পুলিশ-র‌্যাব ঘেরাও করে রাখে। আমি দলের পক্ষ থেকে র‌্যাব-পুলিশের এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

রিজভী আহমেদ আরো বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ মাহবুব শ্যামল মিথ্যা মামলায় গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে হাজির দিতে গেলে তার জামিন বাতিল করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং তার অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার ও নি:শর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।

এছাড়া আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রচন্ড বাধা, হুমকি ও আক্রমণ সত্ত্বেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির জনসভা সাফল্যমন্ডিত করতে ঢাকা মহানগরীসহ বৃহত্তর ঢাকা জেলা এবং দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধারণ জনগণ, বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা যারা জনসভাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন তাদেরকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। অক্লান্ত পরিশ্রম করে জনসভার সংবাদ পরিবেশন করার জন্য গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের প্রতিও আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৩৫৩ঘ)