কূটনীতির দৌঁড়ে হিলারি-ট্রাম্প

জাতিসংঘে প্রেসিডেন্ট ওবামার বিদায়ী ভাষণ

জাতিসংঘে প্রেসিডেন্ট ওবামার বিদায়ী ভাষণ

যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুশফিকুল ফজল আনসারী, ২১ সেপ্টেম্বর (জাস্ট নিউজ): যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, আমি বিশ্বাস করি ভালো কিছু করার মতো সক্ষমতা আমাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) রয়েছে। দুই মেয়াদে ক্ষমতাপালনকালে নিজের গৃহীত পররাষ্ট্রনীতির উপর আস্থা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ে আমার নীতির জন্য মাঝে মাঝে নিজ দেশের কাছে সমালোচনাও শুনতে হয়েছে। সবসময়ই আমার কূটনীতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি।

তিনি বলেন, ইরানের সঙ্গে যে পরমাণু চুক্তি করেছি তা মূলত বিশ্বকে পরমাণু হুমকি থেকে মুক্ত করার একটা বড় প্রয়াস। পরমাণু অস্ত্রমুক্ত একটি বিশ্ব অবশ্যই আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।

মঙ্গলবার সকালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেয়া ভাষনে এসব কথা বলেন ওবামা। যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রেসিডেন্ট হিসাবে এটাই তার শেষ ভাষণ।

সম্প্রতি নিউইয়র্কে সন্ত্রাসী হামলায় ঘটনায় বাড়তি কড়া নিরাপত্তার ভিতরে শুরু হয়েছে বিশ্ব সংস্খার এ অধিবেশন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা ছাড়াও, সুশিল সমাজের প্রতিনিধি, মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক, বিশ্বখ্যাত শিল্প উদ্যোক্তারাও বিভিন্ন পর্বে এতে অংশ নিচ্ছেন। সন্ত্রাসী হামলার বিষয়টি মাথায় রেখে নেয়া হয়েছে নজিরবীহিন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা।

প্রেসিডেন্ট ওবামা তার ভাষণে দুই মেয়াদে ক্ষমতা পালনাকালীন সময়ের পররাষ্ট্রনীতির বড় বিষয়গুলো, প্যারিসের জলবায়ু সম্মেলন, ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি ও পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা মোকাবিলার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরেন। কথা বলেন সিরিয়ায় পরিচালিত বহুজাতিক যুদ্ধ নিয়েও।

ওবামা বলেন, পুরো বিশ্বের জন্য ‘সংশোধিত পরিকল্পনা’ নিয়ে কাজ করতে হবে যাতে করে আমরা বিভক্ত হয়ে না পড়ি।

বিশ্বের যেসব নেতারা নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে রাখেন তাদের ‘আত্ম পরাজিত’ আখ্যা দিয়ে ওবামা বলেন, বিশ্বায়নকে যারাই অস্বীকার করবে কিংবা নিজেদেরকে আলাদা করে রাখবে তারা ‘আত্ম পরাজিত’। আজকের দিনেও যেসব জাতি দেয়াল দাঁড় করাবে তারা মূলত নিজেদেরই কারাগারে আবদ্ধ করবে।

সিরিয়া যুদ্ধ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট বলেন, কোন প্রকার সহিংসতা ও চরমপন্থাকেই আমরা সমর্থন করিনা। সবাইকেই ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। তিনি বলেন, সিরিয়ায় গ্রুপগুলোর যুদ্ধের জন্য উপকরণ রয়েছে। আর এগুলোর কিছু দিয়েই সেখানে বিজয় লাভ করা যাবেন। একমাত্র শান্তির জন্য কূটনীতিই সেখানে সমাধান হতে পারে।

বিশ্বনেতাদের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নের আহবান জানিয়ে ওবামা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় লড়াই করা শুধু সঠিক কাজই নয় বরং এটি একটি সময়উপযোগী সেরা কাজ।

আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আইএস হল মধ্যযুগীয় বর্বর ভীতির একটি গ্রুপ।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুই প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে আসা বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাত ও আলোচনার মাধ্যমে তাদের কূটনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।

সোমবার দুই প্রার্থীই নিউইয়র্কে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি গত সপ্তাহে বলেছিলেন, তিনি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি এবং জাপান ও ইউক্রেনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

হিলারি আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির সঙ্গে এক ঘন্টারও বেশি সময় ধরে একান্ত আলোচনা করেন। এদিকে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পও সিসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মুসলিম বিশ্বের কোনো নেতার সঙ্গে এটাই তার প্রথম সাক্ষাৎ।

সাক্ষাতকালে ট্রাম্প সিসিকে বলেন, শান্তিপ্রিয় মুসলিমদের জন্য তার উচ্চ শ্রদ্ধা রয়েছে।

ওবামা প্রশাসনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি সাক্ষাত করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরো শেনকোর সাথেও।

(জাস্ট নিউজ/জিইউএস/০০১০ঘ.)