উইলসন সেন্টারে আলী রিয়াজের বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা

গণতন্ত্র ছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত সম্ভব নয়

গণতন্ত্র ছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত সম্ভব নয়

বিশেষ সংবাদদাতা, ওয়াশিংটন, ২১ সেপ্টেম্বর (জাস্ট নিউজ): গণতন্ত্র ছাড়া নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার বাংলাদেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে। যেখানে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাক ও চলাচলের স্বাধীনতা পুরোপুরি উপেক্ষিত।

মঙ্গলবার ওয়াশিংটনের উড্রো উইলসন সেন্টারে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন সেন্টারের সিনিয়র পলিসি স্কলার এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম।

ইলিনয়েস স্টেট ইনিভার্সিটির রাজনীতি এবং সরকার বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর আলী রিয়াজের লেখা ‘বাংলাদেশ: এ পলিটিক্যাল হিস্টরি সিন্স ইন্ডিপ্যান্ডেন্স’ (স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস) শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজক যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা থিঙ্কট্যাঙ্ক উড্রো উইলসন সেন্টার। এর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট মাইকেল কোগেলম্যানের সঞ্চালনায় বইটির উপর মতামত সম্বলিত প্রশ্ন উত্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি লিসা কার্টিজ, বব হ্যাথওয়ে, ডগ ম্যাকিং, আখতার জাভেদ, বাংলাদেশের সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী এবং ভয়েস অব আমেরিকার ফকির সেলিম।

উইলিয়াম বি মাইলাম বলেন, ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন করার পর থেকে চর্চাটা কম বেশি অব্যাহত ছিলো। কিন্তু ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন গণতন্ত্রকে পুরোমাত্রায় বিপর্যস্ত করে ফেলে। সরকার কর্তৃত্ববাদী আচরণের মধ্য দিয়ে বিরুদ্ধ মতকে দমন করে চলেছে। বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী পক্ষ বিএনপি রাজনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে বলেও মত দেন নিউইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্ট খ্যাত কলামিস্ট মাইলাম।

বইটির সারমর্ম বিশ্লেষণ করে প্রফেসর আলী রিয়াজ বলেন, সমতা, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়-বিচার এই তিনটি মূলনীতির উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের অভুদ্যয় ঘটেছিলো। সেই মূলনীতি পরবর্তীতে উপেক্ষিত হয়েছে বারবার।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ উদার গণতন্ত্রমনা। যেখানে কোনো চাপিয়ে দেওয়া ব্যাবস্থাপনা দীর্ঘস্থায়ী হবার নয়। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত সম্ভব নয় বলেও মনে করেন প্রফেসর রিয়াজ। উগ্রবাদীপন্থা বরাবরই বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, হোক সেটা ধর্মীয় কিংবা রাজনৈতিক উগ্রপন্থা।

প্রফেসর আলী রিয়াজ বলেন, নানা রকম রাজনৈতিক অচলায়তনের মধ্যেও বিগত দুই দশকেরও বেশী সময় ধরে বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অগ্রগতি অর্জন করেছে । এই অগ্রগতির মূলে রয়েছে তিনটি উপাদান। এগুলি হচ্ছে গার্মেন্টস শিল্পে নিয়োজিত বিপুল মহিলা জনশক্তি, বিদেশে কর্মরত বিশাল দক্ষ-অদক্ষ কর্মী বাহিনী এবং বাংলাদেশের কৃষক।

বইটির উপর মতামত ব্যক্ত করে লিসা কার্টিজ জামায়াতে ইসলামের রাজনীতি বন্ধে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেন জানতে চাইলে আলী রিয়াজ বলেন, সাংবিধানিকভাবে কোনো দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার এখতিয়ার সরকারের আছে বলে আমি মনে করি না। তবে এই সিদ্ধান্ত জামায়াতে ইসলামীকেই নিতে হবে, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সংঘটিত অপরাধ তারা বহন করে চলবে নাকি এই অপরাধের ক্ষমা চেয়ে সুষ্ঠু রাজনীতির ধারায় ফিরে আসবে।

বব হ্যাথওয়ে জানতে চান বাঙ্গালি এবং মুসলমানের মধ্যে কোনো বৈসাদৃশ্য আছে কি না। জবাবে বইয়ের লেখক আলী রিয়াজ বলেন, ধর্মীয় ভিন্নতা, আচার-অনুষ্ঠানের তারতম্য থাকলেও সকলের জাতীয় পরিচয় একটি।

বইয়ের উপর মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, বই হাতে পেলে বিশদ জানা যাবে। তবে লেখককে ধন্যবাদ লেখনীতে ইতিহাসকে বেছে নেবার জন্য। কেননা বাংলাদেশে সরকার আদালতকে ব্যবহার করে ইতিহাস নিয়ন্ত্রণ করছে। রাষ্ট্র কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষককে দেয়া রাষ্ট্রীয় সম্মান কেড়ে নিচ্ছে। অপরদিকে দেশটিকে গণতন্ত্রহীন রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।

লন্ডন ভিত্তিক প্রকাশনা সংস্থা আই বি ট্যরিস প্রকাশিত বইটিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পটভূমি, সামাজ ও রাজনীত, গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক গতি প্রকৃতি, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, ইত্যাদির চিত্র তুলে ধরেছেন এই শিক্ষাবিদ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক।

(জাস্ট নিউজ/প্রতিনিধ/জিইউএস/১০৫০ঘ.)