এক মিনিটের কথোপকথনেই আশা ভঙ্গ

ট্রাম্পের কাছে প্রত্যাশা নেই হাসিনার

ট্রাম্পের কাছে প্রত্যাশা নেই হাসিনার

নিউইয়র্ক থেকে মুশফিকুল ফজল আনসারী, ১৯ সেপ্টেম্বর (জাস্ট নিউজ) : জাতিসংঘের সংস্কার নিয়ে এক বিশেষ অধিবেশনে সোমবার বিশ্বের অন্যান্য দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান ও বিভিন্ন প্রতিনিধিদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও যোগ দেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আগ্রহেই সকল সদস্য রাষ্ট্রের অংশগ্রহণে এই বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। অধিবেশন শেষ হলে একে একে সকলের সাথে করমর্দন করে অধিবেশন স্থল ত্যাগ করতে শুরু করেন ট্রাম্প। ৪ নম্বর সারিতে বসা শেখে হাসিনাও ছুটে আসেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দিকে। করমর্দন করে নিজের পরিচয় দিয়ে কথা বলা শুরু করেন তিনি। ট্রাম্প জবাবে কিছু একটা বলেন (হোয়াইট হাউসের ভিডিও ক্লিপিং অনুসারে)। সব মিলিয়ে মিনিট খানেক স্থায়ী হয় এই কথোপকথন।

এ বিষয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সে দেয়া এক সাক্ষাতকারে শেখ হাসিনা দাবি করেছেন বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা মুসলমানদের ইস্যু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে তুলে ধরেছেন। কিন্তু শরণার্থীদের বিষয়ে ট্রাম্পের যে অবস্থান তাতে তার কাছে তিনি কিছু প্রত্যাশা করেন না। সোমবার ট্রাম্পের সঙ্গে স্বল্প সময়ের সাক্ষাত হয় শেখ হাসিনার। পরে তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এনিয়ে সাক্ষাৎকার দেন।

সাংবাদিক মাইকেল নিকোলস রয়টার্সে দেয়া সাক্ষাৎকারের উপর ভিত্তি করে লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জাতিসংঘে যোগ দিয়ে এতে সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন। এমন এক অনুষ্ঠান শেষে ট্রাম্প বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দু’এক মিনিটের জন্য থামান শেখ হাসিনা। পরে তিনি রয়টার্সকে বলেছেন, এ সময় তিনি (ট্রাম্প) শুধু জিজ্ঞাসা করলেন বাংলাদেশের কি খবর? জবাবে আমি বললাম খুব ভাল চলছে। কিন্তু একটিই সমস্যা রয়েছে। তা হলো, মিয়ানমার থেকে (বিপুল সংখ্যক) শরণার্থী এসেছে বাংলাদেশে। কিন্তু শরণার্থী প্রসঙ্গে তিনি (ট্রাম্প) কোনো মন্তব্যই করলেন না। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মাসে বিদ্রোহীদের হামলার জবাবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করে। রাখাইনে তাদের অভিযানের কারণে কমপক্ষে চার লাখ ১০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান পালিয়ে আশ্রয় নেন বাংলাদেশে। জাতিসংঘ একে জাতি নির্মূল হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। অন্যদিকে মিয়ানমার সরকার বলছে, লড়াইয়ে প্রায় ৪০০ মানুষ নিহত হয়েছে।

রয়টার্সকে শেখ হাসিনা বলেন, আমার সঙ্গে সাক্ষাতে ট্রাম্পের প্রশ্ন ছিলো বাংলাদেশ কেমন আছে? আমার উত্তর ছিলো, দেশ খুব ভালো চলছে। কিন্তু আমাদের একমাত্র সমস্যা রোহিঙ্গা ইস্যুর কথা তুলতেই তিনি কৌশলে তা এড়িয়ে গেছেন। এ বিষয়টি নিয়ে তিনি আর কোনো কথাই বলেন নি।

শরণার্থীদের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই পরিষ্কার জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কোনো উদ্বাস্তু গ্রহণ করবে না বলে ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সুতরাং সেদেশের প্রেসিডেন্টের কাছে আমি বেশি কিছু প্রত্যাশা করতে পারি না। তাই মিয়ানমার থেকে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিম উদ্বাস্তুদের সহায়তার বিষয়ে তাকে কিছু বলা অর্থহীন।

শেখ হাসিনা বলেন, এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে তারা কোনো শরণার্থী অনুমোদন করবে না। তাহলে তাদের কাছ থেকে, বিশেষ করে প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে আমি কি প্রত্যাশা করতে পারি। তিনি তো মানসিকতা পরিষ্কার করেছেনই। তাহলে আমি কেন তাকে আবার এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করবো?

বাংলাদেশ কোনো ধনী দেশ নয়। কিন্তু আমরা যদি ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারি তাহলে আরো ৫ লাখ বা ৭ লাখ মানুষকে খাওয়াতে পারবো।

তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে শেখ হাসিনার আলোচনার বিষয়ে অবগত নয় হোয়াইট হাউস। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জাস্টনিউজকে বলেন, ‘এমন আলোচনার বিষয়টি আমার জানা নেই।’

এদিকে সোমবার মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাউং তুন রয়টার্সকে বলেছেন, যারা বাড়ি ছেড়ে গেছেন তারা ফিরতে পারবেন না এটা নিশ্চিত করবে মিয়ানমার। তবে এ বিষয়ে একটি প্রক্রিয়া আলোচনা করতে হবে। ওদিকে রাখাইনে সামরিক অভিযান বন্ধে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি। তিনি মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়ার অনুমতির আহ্বান জানিয়ে সাধারণ মানুষকে তাদের বাড়িঘরে নিরাপদে ফেরার নিশ্চয়তা দাবি করেছেন।

(জাস্ট নিউজ/প্রতিনিধি/একে/২৩৩৭ঘ.)