মিশিগানে ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন ‘এএবিইএ'র’ ইয়ুথ সামার সাইন্স ক্যাম্প

মিশিগানে ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন ‘এএবিইএ'র’ ইয়ুথ সামার সাইন্স ক্যাম্প

মোটর সিটি খ্যাত মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েট শহরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো বাংলাদেশী বংশোভূত ক্ষুদে প্রতিভাবানদের গ্রীস্মকালীন সাইন্স ক্যাম্প।

আমেরিকান এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড আর্কিটেক্ট এসোসিয়েশন (এএবিইএ) মিশিগান ভিত্তিক গ্রেটলেক চ্যাপ্টারের আয়োজনে জুনের ২২ এবং ২৩ তারিখ, শনি এবং রবিবার, দুই দিন ব্যাপী ইয়ুথ সামার সাইন্স ক্যাম্পের আয়োজন করা হয় মিশিগান অঙ্গ রাজ্যের ট্রয় শহরের বাংলাদেশীদের জনপ্রিয় ভেন্যু বলকান আমেরিকান কমিউনিটি সেন্টারের হল রুমে।

মিশিগানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের স্কুল পড়ুয়া সন্তানদের উদ্ভাবনী প্রতিভা বিকাশে আবিয়া গ্রেটলেক চ্যাপ্টারের বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী আবু আশরাফের উদ্যোগে, প্রকৌশলী ডক্টর ফয়জুল মোমেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী ইমরান হোসাইন এবং সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ডক্টর কামরুল মজুমদারের সার্বিক সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত দুই দিনের এই সামার ক্যাম্পটি পরিপূর্ণ ছিল সাইন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ম্যাথ (STEM)'এর উপর ১৬টি বিভিন্ন রকম ওয়ার্কশপ, খুদে প্রতিভাবানদের বিজ্ঞান বিষয়ক আবিষ্কার নিয়ে প্রদর্শনী এবং বাহিরের মজার খেলাধুলায় পরিপূর্ণ।

টেকনিকাল সেমিনার এবং ওয়ার্কশপের বিভিন্ন টপিকসের মধ্য অন্যতম ছিল বিভিন্ন রকম ম্যাথ গেম, ফিজিক্স থিওরি, ইন্টারনেট সেফটি এন্ড সাইবার সিকিউরিটি, সিম্পল কোডিং, মাইক্রো-ইলেকট্রনিক্স, রোবোটিক্স, আর্থ সাইন্স, লাইট থিওরি, বিল্ডিং স্ট্রাকচার, IOT, আবার কিছু কিছু ওয়ার্কশপের বিষয় ছিল অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষিত করে গড়ে তোলা এবং শিক্ষা সম্পর্কিত প্রশক্ষন, শিক্ষা ব্যায় ব্যবস্থাপনা, সন্তানদের সঙ্গে ক্রুসিয়াল কনভার্সেশন সম্পর্কিত পরামর্শ ইত্যাদি। প্রোগ্রামটি ছিল বাংলাদেশী আমেরিকান এলিমেন্টারি এবং মিডল স্কুলের সকল ছাত্রদের এবং ভিন্ন ভিন্ন কমিউনিটি থেকে আগত তাদের বন্ধুদের জন্য উন্মুক্ত। অনুষ্ঠানের বক্তৃতা পর্বে মৃধা ফাউন্ডেশনের কর্ণধার ডক্টর দেবাশীষ মৃধার বিশেষ উপস্থিতি, উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবন বিষয়ক তার মূল্যবান বক্তব্য ছিল বিশেষ আকর্ষণ।

সংগঠনের সভাপতির উদ্বোধনী বক্তব্য এবং পরিচিতি পর্বের পর হওয়া বক্তৃতা পর্বে ক্ষুদে মেধাবী তরুণদের অনুপ্রেরণা দেয়ার জন্য উপস্থিত ছিলেন সদ্য বিদায়ী আবিয়া'র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী ডঃ জাকিরুল হক, সাবেক মিশিগান চ্যাপ্টারের সভাপতি প্রকৌশলী মনির জামান, সংগঠনটির সদ্য বিদায়ী সভাপতি প্রকৌশলী সাদেক রহমান, প্রকৌশলী আবিদ রহমান প্রমুখ।

বাংলাদেশী বংশোভূত তরুণ মেধাবী সন্তাদের বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উদ্ভাবনী বিষয়ক অনুপ্রেরণামূলক এমন ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান প্রথমবারের মতো আয়োজন বিষয়ে মূল উদ্যোক্তা এবং সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি প্রকৌশলী আবু আশরাফ বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানটি আয়োজনের মূল লক্ষ্য ছিল স্কুলে অধ্যানরত আমাদের সন্তানদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং অংক বিষয়ক তাদের উদ্বোধনী প্রতিভা বিকশিত করা এবং তাদের পরস্পরের মাঝে একটি বন্ধন তৈরী করা, সেই সাথে সংশ্লিষ্ট অভিভাবকদের এইসব বিষয়ে সম্প্রক্ত করা।’

এই ধরণের অনুষ্ঠান এই প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলেও অনুষ্ঠানে ব্যাপক উপস্থিতি এবং সফল সমাপনী আয়োজকদের উদ্বুদ্ধ করে। তারা প্রতি বছর নিয়ন করে এইধরণের অনুষ্ঠান আয়োজনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। অনুষ্ঠানটি আগামী বছর থেকে আবিয়ার বাৎসরিক ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে আয়োজক কমিটি জানায়।

অনুষ্ঠানটি পরিচালনায় বিভিন্নভাবে সহায়তা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তরুণ প্রকৌশলী কাজী মাশফিক হোসাইন, প্রকৌশলী জিন্নু রাইন, কার্য নির্বাহী সদস্য যথাক্রমে প্রকৌশলী মাহমুদ সালাম ও প্রকৌশলী গোলাম মাইনুদ্দিন (তানভীর), ট্রেজারার প্রকৌশলী প্রণব চৌধুরী শাওন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের মাঝে প্রকৌশলী আবিদ রহমানের হাতে তৈরী ওয়াটার রকেট লাঞ্চ ছিল বাড়তি আকর্ষণ। পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি (গ্রাভিটি) উপেক্ষা করে রকেট কিভাবে মহাশূণ্যে উৎক্ষেপণ করা হয়, সেটি দেখানোই ছিল মূল উদ্দেশ্য। অনুষ্ঠানে আগত শিক্ষার্থীরা বেশ আগ্রহ নিয়ে এই রকেট লাঞ্চ উপভোগ করে।

মিশিগান অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তর ডেট্রয়েট শহরে বিপুল সংখক বাংলাদেশী আমেরিকান প্রকৌশলী, স্থপতি, তথ্য প্রযুক্তিবিদের বসবাস যারা দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত সুনামের সহিত আমেরিকার প্রধান তিনটি মোটর কোম্পানি সহ অন্যান্য প্রযুক্তি নির্ভর প্রতিষ্ঠানে কাজ করে যাচ্চে। প্রকৌশলী, স্থপতি এবং তথ্য প্রযুক্তিবিদের এই সংগঠন আমেরিকান এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড আর্কিটেক্ট এসোসিয়েশন (এএবিইএ) মিশিগান চ্যাপ্টারের প্রধান লক্ষ্য সদ্য পাস্ করে আসা নতুনদের কর্মসংস্থানের সব ধরণের কারিগরি সহায়তা প্রদান এবং এইসব ফিল্ডে যারা পড়তে ইচ্ছুক এবং ইতিমধ্যেই আমেরিকা সহ বিশ্বের বিভিন্ন স্বনাম ধন্য প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত তাদের সঠিক লক্ষ্য অর্জনে কাজ করা। বিগত সময়ে সংগঠনটি স্কুল পড়ুয়া ছাত্রদের জন্য প্রযুক্তি বিষয়ক রচনা প্রতিযোগিতা, যার মাধ্যমে তাদের ভবিষ্যৎ গবেষণায় অনুপ্রেরণা যোগায়, এবং তাদের বাংলাদেশ সম্পর্কিত জ্ঞানের রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে যেন তারা বাংলাদেশ এবং সেদেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে। এর আগে সংগঠনটি বেশ কয়েকটি সফল মেগা ইভেন্ট এবং বিশেষ করে নতুন চাকুরী প্রার্থীদের জব ফেয়ার আয়োজন করে সারা আমেরিকাব্যাপী নতুন প্রকৌশলীদের মাঝে সাড়া ফেলেছে। সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই আশা করছে ভবিষ্যতে তারা আরো অনেক সফলভাবে কমিউনিটির জন্য কাজ করে যেতে পারবে।

এমজে/