বিভক্ত ফোবানার পর্দা উঠলো নিউইয়র্কে

প্রবাসে বাংলাদেশি সংস্কৃতি ঐক্যবদ্ধভাবে তুলে ধরার তাগিদ

প্রবাসে বাংলাদেশি সংস্কৃতি ঐক্যবদ্ধভাবে তুলে ধরার তাগিদ

দেশ পরিচয়টা সবারি এক। দূর বা কাছে যেখানেই থাকি আমরা লাল-সবুজের সদস্য। এখানে সমাজনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি অথবা দলমতে সব যেনো লাল সবুজের ফিতেয় বাঁধা সংসার। নিজেদের সংস্কৃতি, চিন্তা, স্বপ্ন আর পারস্পরিক বন্ধনের এ দিকটি প্রবাসেও ঐক্যবদ্ধভাবে তুলে ধরতে হবে।

শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে পর্দা উঠেছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৃহৎ প্রাণের মেলা ৩৩ তম ফোবানা সম্মলনের। যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের আনন্দঘন এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ তাদের বক্তব্যে এ আহবান ব্যক্ত করেন।

শুরুর দিকে সম্মেলনটি এককভাবে হলেও বেশ কয়েক বছর যাবত ব্যতিক্রম ঘটছে। একই শহরে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে চলছে ফোবানা সম্মেলনের আয়োজনটি। নিউইয়র্কের লাগোর্ডিয়া মারিয়ট হোটেল এবং লং আইল্যান্ডস্থ নাসাও কলিসিয়ামে আলাদা আলাদা ভাবে অংশ নিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বিষয়টি প্রবাসীদের আবেগকে কিছুটা নাড়া দিয়েছে। সাধারণত এ সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সৌর্হাদ্য, সম্প্রীতির মেলবন্ধন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি আর সাহিত্যের কথা জানতে পারেন বর্হিঃদেশের মানুষেরা। প্রবাসীরা ছাড়াও নানান দেশের মানুষের সমাগম ঘটে এ অনুষ্ঠানে। এ আয়োজনটি তাই ঐক্যবদ্ধভাবে করার তাগাদা উঠে এসেছে এ সম্মেলনে।

ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ এই প্রত্যয়কে সামনে রেখে লাগোর্ডিয়া মারিয়ট হোটেলে আয়োজিত ফোবানা সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. জসিম উদ্দিন, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক ডেপুটি মেয়র আব্দুস সালাম এবং জাতিসংঘ ও হোয়াইট হাউস সংবাদদাতা মুশফিকুল ফজল আনসারী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাদেক হোসেন খোকা বলেন, দেশের অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধির প্রধান শর্ত হলো ঐক্যবদ্ধতা। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের ভেদা-ভেদ ভুলে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জ্বীবিত হয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

তিনি বলেন, ফোবানা প্রবাসে বাংলাদেশকে উপস্থাপনের একটি সুবর্ণ সুযোগ। তবে এ সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে একটি ফোবানা সম্মেলন আয়েজনের মধ্য দিয়ে।

সাবেক এই মেয়র বলেন, প্রবাসীরা বিদেশে নিজ দেশের প্রতিনিধি। দেশের বাইরে থাকলেও নিজ দেশের সুনাম আর সমৃদ্ধি বৃদ্ধির জন্য তারা নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজ দেশের সুনাম, সংস্কৃতি আর ভ্রাতৃত্ব ঐক্যবদ্ধভাবে মানুষের কাছে তোলে ধরতে হবে।

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী তার বক্তব্য বলেন, বাংলাদেশ আজ সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার। নিজেদের সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় ভিন দেশের দাপট প্রশমিত হচ্ছে। ফোবানা’র মতো সংস্থা সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা করছে অথচ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দেশীয় সংস্কৃতিকে জলাজ্ঞলি দিয়ে বিজাতীয় সাংস্কৃতিকে আলিঙ্গন করছে একটি চিহ্নিত গোষ্ঠি। এ ধরনের পরিস্থিতি নিজেদের অবক্ষয় ডেকে আনবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের রয়েছে হাজার বছরের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি আর গৌরবের ইতিহাস। প্রজন্মের সামনে আমাদের সে মূল্যবান সম্পদগুলো তুলে ধরতে হবে।

প্রতিবেশি দেশ ভারতের আকাশ সংস্কৃতির উদাহরণ তোলে ধরে ইউএনসিএ’র এই সদস্য বলেন, ভিন দেশের আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব বাংলাদেশের নিজস্ব সম্পদে কুঠারাঘাতের সামিল । এ অবস্থা থেকে আমাদের বের হয়ে আসা প্রয়োজন দ্রুত।

ফোবানা’র আহবায়ক শাহ নেওয়াজের সভাপতিত্ত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফোবানা’র সংগঠক আলী ইমাম শিকদার ও মোহাম্মদ হোসেন খান।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মোর্শেদ আলম, এটর্নী মঈন চৌধুরী, নিউইয়র্ক বাংলাদেশী লায়ন্স ক্লাব সভাপতি আসিফ বারী টটুুল, কনভেনশনের সদস্য সচিব ফিরোজ আহমেদ, ফোবানা’র এক্সিকিউটি সেক্রেটারী কাজী আজম, আতিকুর রহমান ইউসুফজাই সালু, ডা. মাসুদুর রহমান, মিজানুর রহমান ভূঁইয়া, জসিম ভূঁইয়া, গিয়াস আহমেদ, কাজী আশরাফ হোসেন নয়ন, মোহন জব্বার, এনএনবিসি’র চেয়ারম্যান উত্তম দে ও মেম্বার সেক্রেটারী শহীদুল ইসলাম ঠান্ডু, সাবেক চেয়ারম্যান আবু লিয়াকত হুসেন ও ডা. ইবরুল চৌধুরী, গোলাম মোস্তফা, মাকসুদুল হক চৌধুরী, শিল্পী রথীন্দ্র নাথ রায়, শহীদ হাসান, শিল্পী কনক চাঁপা প্রমুখ।

সম্মেলন উদ্বোধনের পর বাংলাদেশের সকল শহীদে স্মরণে এক মিনিটি নিরবতা পালন করা হয়।

এরপর বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এসময় বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নতুন প্রজন্মের তিন তরুণী তিন দেশের পতাকা বহন করেন। বর্ণাঢ্য এ পরিবেশনা উপস্থিত সবার মন কাড়ে। নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাইষ্টেট রাজ্যের কয়েক শত বাংলাদেশী সপরিবারে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন।

ফোবানা সম্মেলনের অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো সেমিনার, কাব্য জলসা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিল্পী কনক চাঁপা ও এসআই টুটুল, চিত্রনায়ক ওমর সানী ও চিত্র নায়িকা মৌসুমী ছাড়া, শিল্পী সেলিম চৌধুরী, রানু নেওয়াজ, হৈমন্তী, স্বীকৃতি, পপিমনা, মাহফুজা মম, খালিদ, লাবনী, খালিদ, শিল্পী সুপ্রতিপ, উপস্থাপক ইসমাইল খন্দকার প্রমুখ অংশ গ্রহণ করেন।

অন্যদিকে, ‘আওয়ার চাইল্ড আওয়ার প্রাইড’ শ্লোগান নিয়ে লং আইল্যান্ডস্থ নাসাও কলিসিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে অপর অংশ ফেডারেশন ইন বাংলাদেশী এসোসিয়েশন ইন নর্থ আমেরিকা-ফোবানা সম্মেলন।

সন্ধ্যায় মারিয়ট হেটেলে এই সম্মেলনের কনভেনর নার্গিস আহমদের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সম্মেলনের উদ্বাধন করেন প্রধান অতিথি নাসাউ কলিসিয়াম-এর এক্সিকিউটিঢ ডাইরেক্টর মার্থা ক্রিসেল ইএসকিউ। উদ্বাধনী অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন সম্মেলনের সদস্য সচিব হচ্ছেন আবীর আলমগীর।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উত্তর আমেরিকায় ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশী কমিউনিটি গড়ার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের মধ্যে বাংলাদেশী সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেবার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নতুন প্রজন্মসহ প্রবাসের শিল্পীরা দলীয়ভাবে বিশেষ সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

অনুষ্ঠানে ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান মীর চৌধুরী ও এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী জাকারিয়া চৌধুরী সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। শতাধিক প্রবাসি বাংলাদেশী সপরিবারে এ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী, বেবী নাজনীন, ফাতেমাতুজ জোহরা, রিজিয়া পারভিন, তপন চৌধুরী, শুভ্র দেব, ফাহমিদা নবী, সামিনা চৌধুরী, তাজুল ইমাম, লিনা তাপসী, তনিমা হাদী, মিথুন জব্বার, মাইলস এবং ফুয়াদ এন্ড ফেন্ডস-এর শিল্পীরা অংশ নিচ্ছেন।