মসজিদ নির্মাণে অনুমোদন না দেয়ায় মিশিগানের ট্রয় সিটির বিরুদ্ধে মামলা

মসজিদ নির্মাণে অনুমোদন না দেয়ায় মিশিগানের ট্রয় সিটির বিরুদ্ধে মামলা

মসজিদ নির্মাণে অনুমোদন না দেয়ায় আমেরিকার ফেডারেল সরকারের বিচার বিভাগ কতৃক মিশিগানের ট্রয় সিটির বিরুদ্ধে মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে।

মিশিগান পূর্বজোনের ইউ এস ডিস্ট্রিক কোর্টে এই মামলাটি দায়ের করেন আমেরিকার ফেডারেল গভর্নমেন্টের বিচার বিভাগ। অভিযোগে বলা হয়, গত বছর ওকল্যান্ড কাউন্টি কমিউনিটি ফেডারেল আইন অমান্য করে বেআইনিভাবে মুসলিম কমউনিটির মসজিদ নির্মাণের আবেদন (আঞ্চলিকতার অনুমোদন) প্রত্যাখ্যান করে যা রিলিজিয়াস ল্যান্ড ইউজ এন্ড ইনস্টিটিউশনালাইজড এক্ট ২০০০ (আরএলইউআইপিএ)​​ আইনের পরিপন্থী।

অভিযোগে আরো বলা হয়- ট্রয় সিটি অনুমোদন না দিয়ে উল্টো বেআইনিভাবে তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে এডাম কমিউনিটি সেন্টার, যারা মসজিদের অনুমতির আবেদন করেছিলো, তাদের উপর অযাচিত বিধি নিষেধ আরোপ করে, তাদেরকে চাপে রাখার জন্য।

ইউএস সিভিল রাইটস ডিপার্টমেন্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক ড্রেইব্যান্ড বলেন, ‌‘জোনিং আইন, যেটা মসজিদ, চার্চ, সিনাগগ, এবং অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে অন্যান্য সংস্থার তুলনামূলক কম অনুকুল্য দেখায় এবং ধর্মীয় উপাসনাকে বাধাগ্রস্থ করে, সেটা আইনের পরিপন্থী।’

‘আমেরিকার বিচার বিভাগ স্থানীয় সরকারগুলি যেনো যেকোনো বিশ্বাসের মানুষের উপর বেআইনি ভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ না করে সেব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

মিশিগান পূর্বাঞ্চল জোনের ইউএস অ্যাটর্নি জেনারেল ম্যাথ্যু স্নাইডার একটি স্টেটমেন্টে বলেন, ‘ট্রয় অন্য প্রতিষ্ঠানগুলির মতো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে সমান গুরুত্ব দিতে বাধ্য। এটা এই জোনের সকল মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ট্রয় শহরের বাংলাদেশী আমেরিকান কমিউনিটির নেতা প্রকৌশলী ডঃ মোঃ নুরুল আমিনের নেতৃত্বে এডাম সিসি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্থানীয় মুসলিম কমিউনিটি ট্রয় শহরে বিগত প্রায় পাঁচ সাত বছর ধরে একটি মসজিদ নির্মাণে চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু ট্রয় সিটির অসহযোগিতার কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি।

এই শহরে প্রায় তিন হাজার মুসলমানের বসবাস, অসংখ্য চার্চ এবং অন্যান্য ধর্মাবলীদের ৭৩টি উপসনালয় থাকলেও আজ অবধি কোনো মসজিদ প্রতিষ্ঠার অনুমোদন সিটির কাছ থেকে মেলেনি। তারা নানা টালবাহানা করে বার বার এই আবেদন ফিরিয়ে দেয়। ২০১৯ সালের জুনের ১৯ তারিখে ট্রয়ের জোনিং বোর্ড এডাম সিসি কতৃক দাখিলকৃত মসজিদ নির্মাণের আবেদন শেষবারের মতো অগ্রাহ্য করে। উপায়ান্তর না দেখে, এডাম সিসি কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনস- মিশিগান (যা সংক্ষেপে কেয়ার-মিশিগান নামে পরিচিত) তাদের সহায়তায় ট্রয় সিটির বিরুদ্ধে বেআইনীভাবে তাদের আবেদন না মঞ্জুর করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।

পরবর্তীতে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস ট্রয় সিটিকে এডাম সিসি’র সঙ্গে একটি সমঝোতায় আসতে আহ্বান জানায়। ট্রয় সিটি সে আবেদন অগ্রাহ্য করলে, ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস ব্যাপারটি আমলে নেয় এবং প্রাথমিক তদন্তে মুসলিম কমুনিটির উপর ট্রয় সিটির ধর্মীয় বৈষম্যমুলুক আচরণের প্রমান পায় এবং সেটার উপর ভিত্তি করে গতকাল তাদের সিটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।

এ প্রসঙ্গে এডাম সিসির প্রেসিডেন্ট, মামলার অন্যতম বাদীদের একজন, প্রকৌশলী ডঃ মোঃ নুরুল আমিন বলেন, ‘ট্রয় মিশিগানের সবচেয়ে ডাইভার্স শহর, এখানে অন্য সব ধর্মের মানুষের মতো প্রায় তিন হাজার মুসলমান ধর্মাবলম্বীও বসবাস করে। সবার উপাসনালয় আছে কিন্তু আমাদের নেই। তারা চায় আমরা অন্য শহরে গিয়ে আমাদের উপাসনালয় তৈরী করে সেখানে আমাদের ধর্মীয় উপাসনা করি, কিন্তু এটা অন্যায়, আমরা বছরের পর বছর ধরে এই শহরে বসবাস করি, কেনো আমাদেরকে অন্য কোনো শহরে গিয়ে মসজিদ নির্মাণ করতে হবে। আমরা আশাকরি আমাদের মসজিদের অনুমোদন বেআইনিভাবে অগ্রাহ্য করে সিটি যে অন্যায় আমাদের সাথে করেছে, মহামান্য আদালতের রায়ের মধ্যমে সেটার অবসান হবে।’

মামলা দায়েরের খবর প্রচার হলে স্থানীয় প্রায় সব সংবাদ মিডিয়া ফলাও করে সেটা দিনভর প্রচার করতে থাকে। সঙ্গে মুসলিম কমিউনিটি ট্রয় শহরে তাদের একটি উপাসনালয় প্রতিষ্ঠায় কিভাবে সিটি কতৃক হেনস্থার শিকার হয়েছে, কতটা সংগ্রাম তাদেরকে করতে হয়েছে সেসব সবিস্তারে তুলে ধরেছেন। সবার একটাই প্রশ্ন, অন্য সব ধর্মের উপাসনালয় থাকলে মুসলমানদের কেনো থাকবে পারবেনা। এটা ধর্মীয় বৈষম্যমূলক আচরণ যা আইনের পরিপন্থী।

উল্লেখ, যে ট্রয় শহরের রচেস্টার সড়কের উপর সাকুরা এশিয়ান রেস্টুরেন্টের লাগোয়া একটি বিল্ডিংয়ে এডাম কমিউনিটি সেন্টার এই শহরের প্রথম একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য আবেদন করে এবং ট্রয় সিটি কতৃক জোনিং আইন অমান্য করার অজুহাত দেখিয়ে তাদের আবেদন ফিরিয়ে দেয়।