মিশিগানে ফ্যামিলি নাইটে বাংলাদেশী আমেরিকান প্রফেশনালদের মিলন মেলা

মিশিগানে ফ্যামিলি নাইটে বাংলাদেশী আমেরিকান প্রফেশনালদের মিলন মেলা

আবিয়া মিশিগানের জমকালো ফ্যামিলি নাইটে বাংলাদেশী আমেরিকান প্রফেশনালদের মিলন মেলা।

মেধার বিকাশ ঘটাতে বাংলাদেশী বংশোভূত শিক্ষার্থীদের বিশ্বময় ছুটে চলার ইতিহাস সুদীর্ঘ। যুগে যুগে অনেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের মেধা সত্তার পরিচয় দিয়ে বিখ্যাত হয়ে আছেন। বাংলাদেশী আমেরিকান প্রকৌশলী এফআর খান তাদের মধ্যে অন্যতম পথিকৃৎ। প্রতিদিন আমেরিকার শিকাগো শহরে অবস্থিত তার ডিজাইন করা বিশ্ববিখ্যাত (একসময়ের আমেরিকার সর্বোচ্চ্য) সিয়ার্স টাওয়ার (বর্তমান নাম উইলি টাওয়ার) হাজার হাজার মানুষ দেখতে আসে এবং সেখানে ভিডিও প্রদর্শনীর মাধ্যমে সেই এফআর খানের গৌরবজ্জল কৃত্তি প্রদর্শন করা হয় প্রতিটি দর্শনার্থীর সম্মুখে, যেখানে বাংলাদেশ নামটি সগৌরবেই আসে।

বাংলাদেশী বংশোভূত শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে যখন প্রফেশনাল হয়ে আমেরিকার মাটিতে তাদের নিজেদের আবাস গড়ে তোলে, তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমেরিকার কয়েকটি বড় অঙ্গরাজ্যকে বেছে নেয়, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক, মিশিগান, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, পেনসিলভানিয়া, ভার্জিনিয়া তাদের মধ্যে অন্যতম। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদেরকে এক শহরে পাওয়া যায়না, তারা ছড়িয়ে থাকে স্টেটজুড়ে। এক্ষেত্রে কিছুটা হলেও ব্যতিক্রম মিশিগান অংগ্যরাজ্য। মোটরসিটি ডেট্রয়েট কেন্দ্রিক বাংলাদেশী আমেরিকান প্রফেশনাল কমিউনিটির পাশাপাশি শহরে এমন সন্নিবিষ্ট বসবাস খুব কমই দেখা যায়। এই প্রফেশনালদের সবচেয়ে বড় অংশ জুড়ে আছে প্রকৌশলীরা, তারপর ডাক্তাররা, এরপর শিক্ষাবিদসহ অন্যানোরা। আর তাই বাংলাদেশী আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড আর্কিটেক্ট এসোসিয়েশনের সবচেয়ে বড় এবং সক্রিয় চ্যাপ্টারটি এই মিশিগানেই গড়ে উঠেছে যা আবিয়া মিশিগান চ্যাপ্টার বা আবিয়া গ্রেটলেক চ্যাপ্টার নামেও পরিচিত।

বাংলাদেশী আমেরিকান প্রকৌশলীদের এই সংগঠনটির বছরজুড়ে অনেক কর্মসূচি পালন করলেও বছর শেষে ফ্যামিলি নাইটটি হয় সবচেয়ে জমকালো এবং সবচেয়ে বড় মিলন মেলা। প্রকৌশলীদের ব্যানারে অনুষ্ঠিত হলেও এই অনুষ্ঠানে প্রকৌশলীরা ছাড়াও উপস্থিত থাকেনা শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, ফার্মাসিষ্ট, ব্যাবসায়ী, তাদের পরিবার পরিজন এবং বন্ধুবান্ধবরা। অনেক সময় বাংলাদেশ থেকে আগত অনেক গুণীজনও উপস্থিত থাকেন এই অনুষ্ঠানে। যেমন এবারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ থেকে আগত ডঃ ইকবাল আনোয়ার, যিনি একাধারে চিকিৎসক, লেখক সহ আরো বহু গুনের অধিকারী, এবং দেশে সুপরিচিত। ডঃ আনোয়ারের আরেকটি পরিচয়, তিনি মিশিগান প্রবাসী প্রকৌশলী ডঃ নাজমুল আনোয়ারের বড় ভাই এবং মিশিগান প্রবাসী চিকিৎসক ডঃ হোসনে বেগম খোকনের ক্লাসমেট। এছাড়াও বেশ কয়েকজন স্বনামধন্য প্রকৌশলী যারা দেশের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় পদ সগৌরবে অলংকৃত করে রেখেছেন।

আবিয়া মিশিগান চ্যাপ্টারের এবারের বাৎসরিক ফ্যামিলি নাইটের জমকালো আসর বসে ট্রয় সিটির পোলিশ আমেরিকান কালচারাল সেন্টারে। গত ২২ সেপ্টেম্বর, রবিবার অনুষ্ঠিত পারিবারিক সন্ধ্যার অনুষ্ঠানটি তিনটি পর্বে বিভক্ত ছিল: সংগঠনের সদস্যদের নিজেদের শিশুকিশোর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত স্টেজ শো, যেখানে তারা নানা ধরণের বিনোদনধর্মী কার্যক্রম ব্যতিক্রমী ধারায় তুলে ধরেন, যেমন তাদের বাবা-মা'রা কে কি পেশায় নিয়োজিত এবং সে সম্পর্কে তারা কে কি জানে সেটা তুলে ধরা যা তাদের ভবিষ্যৎ নিজেদের জীবনের লক্ষ নির্ধারণকে সহজ করবে, বাংলাদেশ নিয়ে তাদের বিভিন্ন গবেষণামূলক কার্যক্রম, যার মাধ্যমে তারা যেন বাংলাদেশ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পায় এবং এখানে থেকেও বাংলাদেশকে ভুলে না যায়। এসবের পাশাপাশি উঠতি প্রকৌশলীদের অংশগ্রহণে ব্যতিক্রমী কমেডি টকশো দর্শকদের আনন্দ দেয়। টকশো সঞ্চালনায় ছিলেন মেধাবী প্রকৌশলী ফাহিম আহমেদ।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে লিডারশিপ সহ বিভিন্নক্ষেত্রে অবদানের জন্য সাবেক সংগঠকদের "আবিয়া লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড" প্রদান, উপস্থিত আমন্ত্রিত স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের বক্তৃতা প্রদান এবং ডিনার পর্ব। অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তদের মধ্যে সাবেক চারজন আবিয়া প্রেসিডেন্ট যথাক্রমে ১. ডঃ নাসিম উদ্দিন, ২. ডঃ জাকিরুল হক (টুকু), ৩. প্রকৌশলী মুনির জামান এবং প্রকৌশলী সাদেক রহমান (সুমন) অন্যতম। আবিয়া কমিউনিটি সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয় মিশিগান বাংলাদেশী কমিউনিটির অত্যন্ত সুপরিচিত মুখ প্রকৌশলী ফেরদৌস গাজীকে।

তৃতীয় পর্বটি ছিলো স্থানীয়, বাংলাদেশ এবং পশ্চিম বাংলা থেকে আগত, জি বাংলা সা রে গা মা পা খ্যাত শিল্পী ঋষিতা এবং অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ উঠতি তারকা শিল্পী মাইনুল আহসান নোবেল।

স্থানীয় শিল্পীদের মধ্যে প্রকৌশলী ইমরান হোসেনের কন্যা জাইমার বাদ্যযন্ত্রের পরিবেশনা , ডঃ নাজমুল আনোয়ারের মেয়ে সুকণ্ঠী জারা আনোয়ার, জাফরী-নিতু দম্পতি এবং চন্দ্র নাথের কন্যার সংগীত পরিবেশনা এবং মিথুনের নৃত্য দর্শকদের আনন্দ দেয়। স্থানীয় ব্যান্ড "হৃদম অফ বাংলাদেশ" দেশীয় ব্যান্ডের জনপ্রিয় গান দিয়ে মাতিয়ে রাখে দর্শকদের।
স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ইউএস কংগ্রসম্যান এন্ডি ল্যাভিন এবং ট্রয় এলাকার স্টেট রিপ্রেসেন্টেটিভ উপস্থিত ছিলেন। কংগ্রেসম্যান এন্ডি ল্যাভিন, যিনি হাউস কংগ্রেস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির অন্যতম সদস্য, বিশেষ করে সাউথ এশিয়া অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং বাংলাদেশী কমিউনিটি তথা বাংলাদেশের একজন শুভাকাঙ্খী বলে পরিচিত, তিনি তার বক্তৃতায় জানান, অচিরেই তিনি এবং তার টিমের সদস্যরা রোহিঙ্গাদের বর্তমান অবস্থান সরেজমিনে দেখতে বাংলাদেশ সফরে যাবেন।

অনুষ্ঠান শুরু হয় আবিয়া মিশিগান চ্যাপ্টারের বর্তমান প্রেসিডেন্ট, জেনারেল মোর্টসের প্রোগ্রাম ম্যানেজার প্রকৌশলী আবু আশরাফের নির্বাহী কমিটির পক্ষে সবাইকে স্বাগতম জানানো এবং অনুষ্ঠানটি সফল করতে তার টীম এবং অন্যান্য যে যে অবস্থান থেকে তাদের সহযোগিতা করেছেন তাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানানোর মধ্য দিয়ে। তিনি তার উদ্বোধনী বক্ত্যবে বছরব্যাপী আবিয়া মিশিগান কতৃক আয়োজিত বিভিন্ন প্রোগ্রামের সারসংক্ষেপ এবং তাদের সফলতা তুলে ধরেন যার মধ্যে অন্যতম, স্টিম প্রোগ্রাম, সামার ইয়ুথ সাইন্স ক্যাম্প, প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম অন্যতম।

অনুষ্ঠান আয়োজনের সহযোগিতায় ছিলেন তরুণ প্রকৌশলীদের একটি চৌকষ টীম, যাদের মধ্যে অন্যতম সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাশফিক হোসাইন, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. কামরুল মজুমদার, ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী ইমরান হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আজীজ, কোষাধ্যক্ষ প্রণব চৌধুরী শাওন, কার্যনির্বাহী সদস্য মাহমুদ সালাম, গোলাম মাইনুদ্দিন (তানভীর) দেবাঞ্জন দ্বীপ, ও প্রকৌশলী ড. ফয়জুল মোমেন। অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে অতিথিদের একে ওপরের সাথে কুশল বিনিময়, কমিউনিটি নেতাদের দিক নির্দেশনামূলক কথামালা, সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য গ্রুপ ফোটোগ্রাফি ছিলো অন্যতম আকর্ষণ।

এমজে/