বোষ্টনে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নিউ ইংল্যান্ড বিএনপির সভা

বোষ্টনে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নিউ ইংল্যান্ড বিএনপির সভা

নিউইয়র্ক, ১২ ফেব্রুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোষ্টনে নিউ ইংল্যান্ড বিএনপির নেতারা বলেছেন, তথাকথিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজার রায় দেওয়া হয়েছে তাতে বেগম খালেদা জিয়া ন্যায় বিচার পাননি। মামলার অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েও বে-আইনিভাবে বেগম খালেদা জিয়াসহ অন্যান্য আসামীদের সাজা দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যা্য নর্থ রিডিং শহরের একটি গির্জার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় নিউ ইংল্যান্ড বিএনপির নেতারা এসব কথা বলেন। সভায় বেগম খালেদা জিয়ার অবিলম্বে মুক্তি দাবিও করা হয়।

নিউ ইংল্যান্ড বিএনপির সভাপতি সৈয়দ বদরে আলম সাইফুলের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম টিটুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা কাজী নুরুজ্জামান ও বিশেষ অতিথি ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ (নিউ ইংল্যান্ড) এর সাধারণ সম্পাদক আশিফুল ইসলাম।

সভায় প্রধান অতিথি কাজী নুরুজ্জামান বলেন, তথাকথিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়া কোনো টাকা আত্মসাত করেন নাই। যিনি মামলাটি দায়ের করেছেন তিনি নিজেই বলেছেন টাকা আত্মসাত হয় নাই। শুধুমাত্র শেখ হাসিনার জেদ পূরণের জন্যই অন্যায় ও বে-আইনিভাবে বেগম খালেদা জিয়াসহ অন্যান্য আসামীদের সাজা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এর আগে তারেক রহমানকে একটি মামলায় খালাস দেওয়ায় সেই বিচারপতিকে দেশ ছাড়তে হয়েছিল। প্রধান বিচারপতিকেও রোগী বানিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। তাহলে বিচারপতিরা কীভাবে সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে রায় দেবেন? সুবিচার হবে কীভাবে? বলে তিনি প্রশ্ন তোলেন।

কাজী নুরুজ্জামান বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অপদস্থ করার জন্যই সরকার একটি সাজানো মামলায় নীল নকশা অনুযায়ী এ ধরনের বিতর্কিত রায় দিয়েছেন। শেখ হাসিনাকে খুশি করার জন্য এ রায় দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এ রায় ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী সকল প্রবাসীদের পক্ষ থেকে নিউ ইংল্যান্ড বিএনপির সকল নেতা-কর্মীরাও এ রায়ের প্রতি ঘৃণা ও ধিক্কার জানাচ্ছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, বিএনপি সহিংস আন্দোলন করছে না বলে সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন রায় ও সাজা নিয়ে তেমন কোনও প্রতিক্রিয়া দেখছেন না। আমি তাদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, ৭৫-এ শেখ মুজিবুবুর রহমানের নৃশংস হত্যার পর আপনাদের প্রতিক্রিয়া কোথায় ছিল? তখন সংসদে আপনাদের ৩০০ জন এমপি ছিলেন, আপনারা ছাড়া দেশে কোনো রাজনৈতিক দলও ছিল না, তাহলে কেন দেশের কোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলেও প্রতিবাদ করতে পারেননি?

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি আশিফুল ইসলাম বলেন, দেশে বর্তমান রাজনৈতিক এ সংকটময় সময় একটি নিরপেক্ষ ও তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন জরুরি প্রয়োজন। এর কোন বিকল্প নেই। তথাকথিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে যে সাজার রায় দেওয়া হয়েছে এর জন্য প্রবাসের সকল জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করার আহবান জানান তিনি।

নিউ ইংল্যান্ড বিএনপির সভাপতি সৈয়দ বদরে আলম সাইফুল বলেন, তথাকথিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সাজার রায় দিয়ে বর্তমান সরকার সারা বিশ্বেই হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছেন। কারণ তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া নাকি মাত্র ২ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন। যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইচ্ছে করলেই হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করতে পারতেন। মাত্র ২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ নিয়ে আসায় এ মামলা ভূয়া প্রমাণিত হয়েছে। মামলার অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েও বে-আইনিভাবে বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ অন্যান্য আসামীদের সাজা দেওয়া হয়েছে। অথচ একই সময়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা ১৫ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের যে মামলা দায়ের হয়েছিল তা খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনীত সকল মামলা পূনরুজ্জিবিত করে তাঁর বিরুদ্ধেও শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে উল্লেখ করেন তিনি।

সৈয়দ বদরে আলম সাইফুল বলেন, আওয়ামী লীগ চেয়েছিল বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাকর্মীরা গাড়ি ভাঙচুর করুক। এই সুযোগে আওয়ামী লীগ গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ মারবে, আর দোষ চাপাবে বিএনপির ওপর। যেহেতু এই সাজাকে কেন্দ্র করে বিএনপি কোনো সহিংস আন্দোলনে যায়নি, তাই সরকারি দল হতাশ হয়েছে। বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সরকারের পছন্দ হয়নি। সভায় খালেদা জিয়ার অবিলম্বে মুক্তি দাবিও জানান তিনি। শেষে গোলাম ফারুককে সভাপতি ও মেহেদি হাসান লিংকনকে সাধারণ সম্পাদক করে নিউ ইংল্যান্ড যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করেন।

সভায় অন্যদের বক্তব্য রাখেন- সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম টিটু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার মনসুর, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রোকেয়া জামান এলিজা, আব্দুল মতিন, সাজ্জাদ হোসেন, মনিরুল হাসান, মেহেদি হাসান লিংকন, গোলাম ফারুক ও আল আমিন প্রমুখ। সভার শুরুতে পবিত্র কোরান তেলাওয়াত করেন খলিলুর রহমান। এরপর রোকেয়া জামান এলিজার নেতৃত্বে জাতীয় ও সংঙ্গীত পরিবেশন করেন দলের নেতা কর্মিরা।

(জাস্ট নউজ/ওটি/১১৩৭ঘ.)