করোনা সামলাতে ট্রাম্পের ১ ট্রিলিয়ন ডলার প্যাকেজ

করোনা সামলাতে ট্রাম্পের ১ ট্রিলিয়ন ডলার প্যাকেজ

করোনা আতংকে ভুগছে পুরো পৃথিবী। তাতে ধুঁকছে বিশ্বের ক্ষমতাধর আর প্রভাবশালী রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র। ভাইরাসটির প্রকোপ যখন দেশটির অঙ্গরাজ্যে বেড়ে চলেছে ঠিক তখনি আর্থিক মন্দা মোকাবেলা আর জনগণের পাশে দাঁড়াতে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

করোনা মোকাবিলায় ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। করোনার মোকাবিলা করতে কর্মহীন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য হোয়াইট হাউস গতকাল মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে যে, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এক ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক প্যাকেজ তৈরি করছে। যার মধ্যে ২৫০ বিলিয়ন ডলার আমেরিকানদের সরাসরি অর্থ প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হবে।

হোয়াইট হাউসের পরিকল্পনার বিষয়ে সিনেটে রিপাবলিকানদের সঙ্গে বৈঠকের পর ক্যাপিটল হিলের বিষয়ে ট্রেজারি সেক্রেটারি স্টিভেন মানচিন বলেছেন, ‘আমরা টেবিলে ২৫০ বিলয়নের একটি প্রস্তাব রেখেছি।’

করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত মানুষের সংখ্যা ১১২ এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৪৮৮ জন। এ সংখ্যা প্রতিমুহূর্তে বাড়ছে। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশটিকেও এ বিপর্যয় মোকাবিলায় সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত দেখা যাচ্ছে।

মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্টিভ মানচিন বলেছেন, দ্রুতই আমেরিকার কর্মহীনের সংখ্যা ২০ শতাংশে চলে যেতে পারে। চরম অর্থনৈতিক সংকটের হাতছানি আমেরিকার নাগরিকদের চোখে মুখে।

এর মধ্যেই বিভিন্ন নগরকেন্দ্র থেকে লঙ্গরখানার মতো ফ্রি খাবার দেওয়া শুরু হয়েছে। অস্থায়ী শেল্টার নির্মাণ করা হচ্ছে। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে লোকজন আশপাশের কমিউনিটির লোকজনের সাহায্যে এগিয়ে আসছে। কেউ খাবার বিতরণ করছেন, কেউ পৌঁছে দিচ্ছেন জরুরি সামগ্রী। অনেকটাই যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রে।

এ যুদ্ধে অজানা শত্রুর সঙ্গে যেন অসম এক লড়াইয়ে নেমেছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দাবি করা দেশটি। কেউ বলতে পারছেন না এর শেষ কোথায়। স্কুল-কলেজ আর এ শিক্ষাবর্ষে খুলছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ সেমিস্টারে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের না যাওয়ার নির্দেশনা পাঠাচ্ছে।

ইতিমধ্যে নিউইয়র্ক, নিউজার্সিসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে স্কুল, কলেজ, গির্জা, মসজিদ, রেস্তোরাঁ, বার। আক্রান্ত শহরগুলোতে স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী লাখ লাখ কর্মজীবী মানুষ। কাজ হারানোর ভয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন। নিউইয়র্কের জনবহুল এলাকাগুলো এমনিতেই বন্ধ হয়ে পড়েছে। জ্যাকসন হাইটসে সব দোকানপাট সপ্তাহে তিন দিন খোলা রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। ১০ জনের বেশি মানুষের সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জ্যামাইকা মুসলিম সোসাইটিসহ মসজিদ, মন্দিরের উপাসনা কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। নিউইয়র্কে নাগরিকদের যেকোনো মুহূর্তে ‘শেল্টার ইন প্লেস’ নির্দেশনার জন্য প্রস্তুত থাকার জন্য বলা হয়েছে। এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হবে বলে প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে।

হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা দেওয়া কার্যত বন্ধ। সব ধরনের অপারেশন এবং ফলোআপ চিকিৎসা কার্যত বন্ধ। ভিন্ন অসুবিধা নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পর অনেকের শরীরেই করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। এনওয়াইপিডি সদস্যের শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতই শনাক্ত হওয়ার পর ১৭ মার্চ মঙ্গলবার ৩০ জনের বেশি এনওয়াইপিডি সদস্য কাজে অসুস্থতার জন্য রিপোর্ট করেননি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেনার হিড়িক পড়েছে। অস্ত্র কিনতে দোকানের সামনে ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ছে প্রতিনিয়ত। কারণ হিসেবে ক্রেতারা বলছেন, করোনার প্রাদুর্ভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে লুটেরাদের উদয় হবে। তাই নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে অস্ত্র কিনে রাখছেন তাঁরা।

ক্যালিফোর্নিয়ার কালভার সিটিতে দেখা যায়, মার্টিন রেটিং গানস নামের এক অস্ত্রের দোকান খোলার আগেই বাইরে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করছেন ক্রেতারা। লস অ্যাঞ্জেলসের বাসিন্দা ড্রিউ প্লোটকিন বলেন, ‘সবাই ভয় পাচ্ছে। সারা বিশ্বের মানুষ আতঙ্কে রয়েছে। এ রকম বাজে পরিস্থিতি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে চাইছে সবাই।’

করোনা মহামারি মোকাবিলায় প্রায় দুই মাসের জন্য সব ধরনের জনসমাগম বা অনুষ্ঠান বাতিলের পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু রাজ্য ও শহরে ক্যাফে, বার বা রেস্টুরেন্টে জন সমাগত সীমিত করা হয়েছে। অন্তত ৩২টি রাজ্যের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। করোনার আতঙ্কে লাস ভেগাসের বেশ কিছু রিসোর্ট, ক্যাসিনো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নিউইয়র্কের সব নাইটক্লাব, মুভি থিয়েটার ও কনসার্ট ভেন্যু বন্ধ করে দিয়েছে শহর কর্তৃপক্ষ। বলা হয়েছে, সেখানকার রেস্টুরেন্ট, বার ও ক্যাফেগুলো থেকে খাবার শুধু ডেলিভারি নেওয়া যাবে, কেউ জায়গাগুলোয় বসে খেতে পারবেন না।

সিনেটর হোজে হাউলি বলেছেন, ‘নগদ অর্থ কীভাবে বিতরণ করা হবে, তা নিয়ে প্রস্তাবটি দ্রুতই চূড়ান্ত করা হচ্ছে। একটি প্রস্তাবে রয়েছে পরিবার প্রতি পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ফেরতযোগ্য মাসিক অর্থ দেওয়া। পাশাপাশি তিনজনের পরিবারের জন্য ১ হাজার ৪০০ ডলার এবং পাঁচজনের পরিবারের জন্য ২ হাজার ২০০ ডলার এককালীন দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে তাঁরা আলোচনা করছেন।’

অবশ্য মিট রমনিসহ একাধিক সিনেটর প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের জন্য এক হাজার ডলার নগদ অনুদানের ধারণা নিয়ে কাজ করছেন। এসব ছাড়াও ফেডারেল ও রাজ্য পর্যায়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ব্যক্তিপর্যায়ে বিপর্যয় রোধ করার জন্য নানা অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

হোয়াইট হাউসের ভাষ্যমতে যে কংগ্রেস দ্রুত কাজ করলে এপ্রিলের শেষের দিকে আমেরিকানদের কাছে এই চেক যেতে পারে। কিন্তু এখনো লাখ লাখ কর্মজীবী মানুষকে মাসের শুরুতে ভাড়া এবং অন্যান্য বিল দিতে দুর্ভোগে পড়তে হবে।

মানচিন আরও বলেন, ‘যাঁরা বছরে মিলিয়ন ডলার আয় করেন, আমরা তাঁদের এই অর্থ দিতে চাই না। আমরা সাধারণ কর্মজীবী মানুষদের এই অর্থ প্রদান করতে চাই। আমেরিকানদের এই ভুতুড়ে জীবনব্যবস্থায় নগদ টাকা প্রয়োজন এবং প্রেসিডেন্টও সেই টাকা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বরাদ্দ চান।’

এদিকে, দেশটির মুসলিম নারী কংগ্রেস সদস্য ইলহান ওমর প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্কদের ১ হাজার ডলার এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের অতিরিক্ত ৫০০ ডলার দেওয়ার জন্য নিজের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন।