রাষ্ট্রীয় অর্থের অবাধ লুটপাট

রাষ্ট্রীয় অর্থের অবাধ লুটপাট

ড. আবদুল লতিফ মাসুম

বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় অর্থের যে অবাধ লুটপাট হয়ে আসছে তা সবারই জানা কথা। এই সে দিন অবাধ লুটপাটের সামান্য হিসাব-নিকাশ পাওয়া গেল জাতীয় সংসদে। দেশের শীর্ষ ৩০০ ঋণখেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা সংসদে প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। একই সাথে, ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানির কাছ থেকে পাঁচ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছেন- এমন ১৪ হাজার ৬১৭ জনের পূর্ণাঙ্গ তথ্যও প্রকাশ করেছেন তিনি। গত শনিবার সংসদে উপস্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে মন্ত্রী এ তালিকা দেন। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে এক লাখ ৭০ হাজার ৩৯০ জনের কাছে পাওনা এক লাখ দুই হাজার ৩১৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

পরিসংখ্যান মোতাবেক, ২০১৮ সালে ঋণখেলাপির সংখ্যা বেড়েছে ৫৮ হাজার ৪৩৬ জন এবং খেলাপি অর্থের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ২২০ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এদের মধ্যে ৩০০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ৭০ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। এদের কাছে খেলাপি ঋণ পাওনা ৫০ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। শ্রেণীকৃত ঋণ ৫২ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। শ্রেণীকৃত ঋণের অর্থ হচ্ছে দেয় অর্থের নতুন বিন্যাস। অর্থমন্ত্রীর দেয় তথ্য মোতাবেক, রাষ্ট্রায়ত্ত রাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে সাতটি ব্যাংক গত অর্থবছরে প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করেছে।

তিনি আরো জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে গত বছর ছয় হাজার ১৬৩টি ঋণ হিসাবের বিপরীতে এক হাজার ১৯৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা সুদ মওকুফ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুদ মওকুফ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক। ব্যাংকটি দুই হাজার আটটি ঋণের বিপরীতে ৪৯৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা সুদ মওকুফ করেছে। অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে কৃষি ব্যাংক ৬৬টি ঋণ হিসাবের বিপরীতে ৪৩৫ কোটি ৯৬ লাখ, রূপালী ব্যাংক ২০৩টি ঋণ হিসাবের বিপরীতে ১৩৪ কোটি ২৬ লাখ, সোনালী ব্যাংক ১৪টি ঋণ হিসাবের বিপরীতে ৭৩ কোটি ৭৩ লাখ, জনতা ব্যাংক দুই হাজার ৪৭৩টি ঋণ হিসাবের বিপরীতে ৫৩ কোটি ৮১ লাখ, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এক হাজার ৩৮০টি ঋণ হিসাবের বিপরীতে চার কোটি ৩৫ লাখ এবং বেসিক ব্যাংক ১৯টি ব্যাংক হিসাবের বিপরীতে এক কোটি ৬৯ লাখ টাকা সুদ মওকুফ করেছে।

বাংলাদেশে রাষ্ট্র ও সরকার অর্থনৈতিকভাবে কী অবস্থানে আছে, এটি বোঝার জন্য অর্থমন্ত্রীর এই পরিসংখ্যানই যথেষ্ট। এই সরকারের রাজনৈতিক নিপীড়নের মাত্রা সীমা-পরিসীমা ছাড়িয়ে গেছে; সেই সাথে অবাধ লুটপাট এই দেশ ও সময়ের সব হিসাব-নিকাশ অতিক্রম করেছে। স্বাধীনতার পর ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নিপীড়ন ও অবাধ অর্থনৈতিক লুটপাটের অভিযোগ চলে আসছে। ১৯৭২-৭৫ সময়কালে তাদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক লুটপাটের তিনটি ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়।

প্রথমত, কথিত পরিত্যক্ত সম্পত্তি। এ দেশে বসবাসরত উর্দুভাষী জনগণ- প্রধানত বিহারিসহ দেশ ভাগের পর ভারত থেকে আসা জনগোষ্ঠী এবং পাকিস্তানি হিসেবে চিহ্নিত নাগরিকদের সব বাসাবাড়ি, সহায়-সম্পত্তি, কলকারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লোকেরা দখল করে নেয়। ঢাকার মিরপুর-মোহাম্মদপুরসহ বহু স্থানে উর্দুভাষী জনগণের বিরুদ্ধে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড পরিচালিত হওয়ার অভিযোগও কম নয়। এসব বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবিক প্রতিষ্ঠানগুলো সে সময় বিভিন্ন প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছিল। কথিত লুটপাটের অধিকাংশই ব্যক্তিগতপর্যায়ে হজম করা হয়। কিছু মিল-ফ্যাক্টরি ‘পরিত্যক্ত’ ঘোষণা করে সেখানে সরকারি দলের লোকদের প্রশাসক বানিয়ে দেয়া হলো। তারা এসব প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বদলে অবাধ লুটপাট করে ফোকলা করে ফেলে। এর একটি বড় উদাহরণ বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান, আদমজী জুট মিল।

তাদের দ্বিতীয় লুটপাটের ক্ষেত্র হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের জন্য প্রদত্ত বৈদেশিক সাহায্য ও ত্রাণসামগ্রী। বাংলাদেশের জন্য আসা ত্রাণসামগ্রী চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস না হয়ে এদের যোগসাজশে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বোম্বে ও কলকাতা বন্দরে খালাস হয়েছে বলে জানা যায়। এ দেশে আগত ত্রাণসাহায্যের বিরাট অংশ খাতাপত্রে লুটপাট হয়ে যায়। এ রকম একজন আন্তর্জাতিক লুটপাটকারী ক্যারিবিয়ান দ্বীপে ফাইভ স্টার হোটেলের মালিক বনে গিয়েছেন বাংলাদেশের টাকায়।

সর্বত্র লুটপাটের এত ধুম পড়ে যায় যে, দেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু নিজে জনসভায় প্রশ্ন করতে বাধ্য হন- ‘সাত কোটি কম্বল এসেছে, আমার কম্বল কই?’ তিনি ‘চোরের খনি’ এবং ‘চাটার দল’ বলে নিজের দলের লোকজনদের প্রতি ক্ষোভবশত গালমন্দ করেন। সে সময়ের অর্থনীতির তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হলো- প্রকৃত ব্যবসায়ী বা কর্তৃপক্ষকে এড়িয়ে সরকারি দলের লোকদের লাইসেন্স পারমিট নিয়ে নেয়া। এ সময় ‘ব্রিফকেস বিজনেসম্যান’ দ্বারা এ ধরনের লাইসেন্স পারমিটধারী লোকদের বুঝানো হতো। চোরা কারবারের মালিক-মোক্তারও ছিল তারা। ‘ম্যান ছেরুমিয়া’ সে সময়ের চোরা কারবারিদের বুঝাতে ব্যবহৃত হতো। ১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর রাষ্ট্রীয় অর্থসম্পদের কর্তৃত্ব থেকে তারা বিতাড়িত হওয়ায় অন্তত ২১ বছর তাদের পাইকারি লুটপাট বন্ধ ছিল।

১৯৯৬ সালে অনেক নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে পুনরায় ক্ষমতাসীন হলে আবারো তাদের অনেকের জন্য লুটপাটের দরজা খুলে যায়। প্রথম দুই বছর ভালো সাজার ভান করলেও পরবর্তীকালে থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ে। লাইসেন্স পারমিট, টেন্ডার কন্ট্রাক্ট আবার তারা হাতিয়ে নিতে থাকে। ২০০১ সালে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করলে এই লুটপাটের বিরতি ঘটে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে কারসাজি এবং প্যাকেজ ডিলের মাধ্যমে পুনরায় তারা ক্ষমতাসীন হয়ে বুঝতে পারে যে, জনগণের ভোটে তাদের আর ক্ষমতাসীন হওয়া সম্ভব নয়। এ প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিধান বাতিল করা হয়। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে জনগণকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হলো। ২০১৪ সালে বোগাস নির্বাচন এবং ২০১৮ সালে নিশীথ ভোট কারচুপির মাধ্যমে একই দল কথিত বিজয় অর্জন করেছে।

বিগত এক যুগ ধরে যে অবাধ লুটপাট হয়েছে, তার অতি সামান্য বিবরণী অর্থমন্ত্রী সংসদে পেশ করেছেন। সব ঋণই যে আওয়ামী আমলে ঘটেছে, এমন নয়। তবে তাদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের। লক্ষণীয় হচ্ছে যে, গত ১২ বছরে যারা অবাধ লুটপাট করেছেন তাদের এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। বিভিন্নভাবে যেমন : শ্রেণী বিন্যাস, মওকুফ ইত্যাদি নিয়ম-অনিয়মে তাদের আড়াল করা হয়েছে। আগের আমলগুলোতে খেলাপি ঋণ ছিল, কিন্তু চিরকাল লুটপাটের নিশ্চয়তা ছিল না। এদের দাপটে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো খালি হয়ে গেছে। ব্যাংকগুলো ব্যক্তিগত ও পারিবারিক লুটপাটের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সরকারি ব্যাংকগুলোতে প্রধানত আওয়ামী লীগের এমন সব ব্যক্তিকে কর্তৃত্বে বসিয়ে দেয়া হয়েছে, যাদের প্রধান কাজ কৌশলে লুটপাট করা। এর ফলে সরকারি ব্যাংকগুলোতে ‘লালবাতি জ্বলা’র উপক্রম হয়েছে। বেসরকারি খাতে অনেক ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

এর সব মালিকই আওয়ামী লীগ অথবা আওয়ামী ঘরানার লোক। ফারমার্স ব্যাংক বা বেসিক ব্যাংকের কথা সবাই জানে। এবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার হিড়িক পড়ে যায়। আর অর্থমন্ত্রীসহ ব্যাংক সেক্টরের কর্মকর্তারা তাতে উৎসাহ জোগালেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, হলমার্ক গ্রুপ সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা বেহাত করার পর তৎকালীন অর্থমন্ত্রী বললেন, ‘এটা সামান্য টাকা’। এ রকম অবাধ লুটপাট হয়েছে শেয়ারবাজারে। প্রবীণ অর্থমন্ত্রী লক্ষ-কোটি টাকার লোপাটের বিরুদ্ধে কোনো কথাই বলতে পারলেন না। বরং ভয় দেখালেন যে, তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। এরা অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তা ও অসৎ পরিচালকদের সাথে যোগসাজশে অনিয়ম, জাল-জালিয়াতি ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন কৌশলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন। আবার কেউ কেউ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিলাসী জীবন যাপন করছেন, গাড়ি-বাড়ি করছেন, বিদেশে টাকা পাচার করছেন এবং ‘সেকেন্ড হোম’-এর ব্যবস্থা করে ফেলেছেন। অথচ ব্যাংকঋণের টাকা ফেরত দিচ্ছেন না।

তাদের সাথে ক্ষমতাসীন দলের বোঝাপড়াটা দৃশ্যত এ রকম যে, কোনো পর্যায়েই যেন তাদের ঋণ শোধ করতে হবে না। বর্তমান অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ার পর ‘খেলাপি ঋণ আর বাড়বে না’ বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু সবাই অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করল, খেলাপি ঋণ আদায়ে জোরদার পদক্ষেপের পরিবর্তে তিনি ঋণখেলাপিদের আরো সুবিধা ও ছাড়ের পথ তৈরি করে দিলেন। যুক্তি হিসেবে ঋণের টাকা ফেরত পাওয়ার প্রলোভন হিসেবে এসব সুবিধা দেয়া হলেও আসলে কেউ ফেরত দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বলে জানা যায়নি। বিষয়টি বিচারাধীন আছে বলে মন্তব্য করা সম্ভব নয়। সম্প্রতি ঋণ শ্রেণীকরণ ও ঋণ পুনঃতফসিলকরণ উভয় ক্ষেত্রে খেলাপিদের বড় ছাড় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিশেষ পুনঃতফসিল নীতিমালার আওতায় মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট এবং ৯ শতাংশ সরল সুদ নির্ধারণসহ ১০ বছর মেয়াদের ঋণ নিয়মিত করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে শীর্ষ ঋণখেলাপিদের অনেকের তালিকা আসেনি। বিচারালয়ের স্থগিতাদেশ উঠে গেলে ঋণখেলাপিদের সুবিধা প্রদানের ঢল নামবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

লুটপাটের একটি বড় ক্ষেত্র হচ্ছে ব্যয় বরাদ্দ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন। সরকারের যাবতীয় কার্যক্রমে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে সরকারের স্বাভাবিক খরচের খাতগুলো। সরকারের স্বাভাবিক খরচও যে অস্বাভাবিক হয়ে উঠছে তার প্রমাণ বালিশ কেলেঙ্কারি। প্রধানমন্ত্রী ‘বালিশ কেলেঙ্কারি’র নায়ককে ‘ছাত্রদলের ছেলে’ বলে পরিচয় দিলেই তার নিজের সরকারের ব্যর্থতা ঢাকা পড়ে না। প্রতিটি অফিসে, প্রতিটি ক্ষেত্রে এ রকম অসংখ্য কেলেঙ্কারির নায়কেরা নিত্যদিন অবাধ লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রায় প্রতিদিনই সংবাদপত্রে খবর আসে দুর্নীতি, টেন্ডার হাইজ্যাক ও লুটপাটের। সরকারের ব্যয় বরাদ্দ উন্নয়ন অর্থ ও ত্রাণসামগ্রী- কোনো কিছুই অবাধ লুটপাটের ঊর্ধ্বে নয়। গ্রামে সাধারণ মানুষের জন্য যে ত্রাণসামগ্রী ও কর্মসূচিভিত্তিক অর্থ বরাদ্দ করা হয়, তার বেশির ভাগ চলে যায় দলীয় লোকদের পকেটে। যারা বয়স্কভাতা পাওয়ার যোগ্য, তারা পান না। যারা ‘কাজের বিনিময় খাদ্য’ সাহায্য ও অর্থ সাহায্য পাওয়ার কথা তারা পান না। এমনকি হতদরিদ্র মানুষও কোনো রকম সহায়তা পান না যদি তারা বিশেষ দলের লোক না হন।

টিআইবি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যে, সরকারি কর্মচারীদের বেতনভাতা বৃদ্ধি করার পরও ঘুষ, দুর্নীতি হ্রাস পায়নি। আরো অপ্রিয় সত্য হলো, অফিস-আদালতে ও বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে আগের চেয়ে ঘুষ-দুর্নীতি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘুষ-দুর্নীতি এমনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। দুদককে দুর্নীতি দমনের জন্য আরো ক্ষমতায়ন করা হয়েছে। কিন্তু খোদ দুদকের দুর্নীতির দায় কে নেবে? সম্প্রতি একজন দুদক পরিচালক ও পুলিশ কর্মকর্তার ঘুষবিনিময়ের প্রস্তাবের পর আর কাকে বিশ^াস করা যায়?

রাষ্ট্র ও সমাজে রাজনীতিকরা হচ্ছেন দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। কিন্তু বাংলাদেশের সমাজে রাজনীতিবিদেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রমাণ রাখছেন। সমাজে প্রকৃত সৎ, সাহসী ও নিষ্ঠাবান রাজনীতিকদের তীব্র অভাব অনুভূত হচ্ছে। একদল লোভী, ভোগী ও দুষ্কৃতকারী রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ করেছে। জাতীয় সংসদের নির্বাচনী ফলাফলদৃষ্টে বলা হয়েছে, রাজনীতির বাণিজ্যিকীকরণ হয়েছে। জনগণের টাকা অবাধে ঋণ হিসেবে অথবা অন্যভাবে লুটপাট হচ্ছে, তা অচিরেই জনগণের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিতে পারে। শুধু আজকের লুটপাটই শেষ কথা নয়। কবিগুরুর ভাষায় বলা যায়- ‘দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ।’

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com