অদ্ভুত কুমিরের পিঠে সওয়ার আমার বাংলাদেশ

অদ্ভুত কুমিরের পিঠে সওয়ার আমার বাংলাদেশ

নির্মোহ নীলগিরি

গত বেশ কিছুদিন ধরে সরকার ক্রমাগত একের পর এক তামাশা করে যাচ্ছে। এই তামাশা তারা করছে বাংলাদেশের জনগনের সাথে। কিন্তু হীরক রাজার দেশের মতো বাংলাদেশের মানুষ আজ মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে রেখেছে। আবাল জনগণকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইন্ডিয়ার সাথে একের পর এক দেশ বিরোধী চুক্তি করে যাচ্ছে। আর দেশের মানুষকে গালভরা ফিরিস্তি দিচ্ছে। আর পোষা সংবাদ মাধ্যম মারহাবা মারহাবা করে বলছে ‘ক্যায়া বাত ক্যায়া বাত’।

একদিকে, হুজুরদেরকে শাপলা চত্বরে রাতের আঁধারে গুলি করে মেরে তাদের নিয়ে ‘তেঁতুল হুজুর’ বলে টিটকারি মারছে, আবার ইচ্ছে হল তো সেই ব্যক্তির পায়ে কদমবুচি করে দোয়া নিচ্ছে। এতো ‘যে পাত্রে ত্যাগ সে পাত্রেই আহার’। নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের মূর্তি গড়লে তা জায়েজ আর অন্য সব ভাস্কর্য বেমানান, নাজায়েজ। আর পাটাপোতার ঘষাঘষিতে বেচারা মৃণাল হকের সৃষ্টি গুলোর উপর বারবার খড়গ নেমে আসছে।

নীরব দর্শক আমজনতা সাকিব-অপু বিশ্বাসের নাটকের মতো সব হাঁ করে গিলে যাচ্ছে। একবার অপুর চোখের জল দেখে তার কষ্টে জর্জরিত হয়ে সাকিবকে গালাগালি করছে, আবার সাকিব খানের নাকের পানি চোখের পানি দেখে অপু বিশ্বাসের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করেছে। আর বেহায়া মিডিয়া কিছু নির্লজ্জ ক্লাউন নিয়ে বসে গেছে লাইভ মস্করা-শো করতে। ছিঃ এরা পারেও বটে!!!

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি সেক্টর দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। সন্ত্রাসের কালো ছোবল থেকে রেহাই পাচ্ছেনা দেশের একজন মানুষও। সরকার দলীয় লোকজনের পাশাপাশি এমনকি সরকারী প্রতিষ্ঠান গুলোও একেকটা সন্ত্রাস আর দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু সরকার এক্ষেত্রে উটপাখির নীতি গ্রহণ করেছে। কিন্তু সমস্ত আবহাওয়া রিপোর্টকে ভুল প্রমানিত করে হঠাৎ আসা টর্নেডোর মতো, যত ঝড় ঝাপটা বিরোধী দলের নেতা, কর্মী, সমর্থক এমনকি তাদের আত্মীয় স্বজনদের উপর দিয়ে যাচ্ছে। জেল-জুলুম, নির্যাতনতো রয়েছেই, এমনকি তাদের হত্যা, গুম খুন করতেও দ্বিধা করছেনা। কোন একটা অপকর্মের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার সবচেয়ে সহজ সমাধান বিরোধী নেতাকর্মীদের ক্রসফায়ার দেয়া। এহচ্ছে এক ঢিলে দুইপাখি মারার সবচেয়ে সহজ সমাধান বটিকা। ইস্যু ধামাচাপার সাথে সাথে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।

আজ থেকে পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশের একজন নিভৃতচারী মহীয়সী নারী সৈয়দা ইকবালমান্দ বানুকে নিয়ে একটি আর্টিকেল লিখেছিলাম। তাঁর কিছু মহৎ উদ্যোগের কথা পাঠকদের কাছে তুলে ধরেছিলাম। যিনি অন্তরালে থেকে নিরলসভাবে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছেন। প্রচার বিমুখ এই নারী নিজের পুরোটা জীবন উৎসর্গ করেছেন সমাজের অসহায়, অবহেলিত, নিগৃহীত মানুষের জন্য। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া নিজের সম্পদকে ভোগ বিলাসে ব্যয় না করে, নিঃস্বার্থ ভাবে দান করেছেন দরিদ্র, অবলম্বনহীন মানুষের জন্য। গড়ে তুলেছেন ‘সুরভী’ নামক প্রতিষ্ঠান। যার মাধ্যমে সমাজের ছিন্নমূল শিশুদের শিক্ষা দেবার পাশাপাশি গড়ে তোলা হচ্ছে একেকজন দক্ষ কর্মক্ষম মানুষ হিসাবে। কিন্তু আজ অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করছি, সমাজ সেবায় তার অকৃপণ অবদানের জন্য স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত এই মহীয়সীর মানবতাবাদী কাজে বাঁধা দেয়ার জন্যই সরকারের পকেট প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দায়ের করা মিথ্যা মামলায় তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী করা হয়েছে।

উন্নয়নের নামে যেখানে দেশে চলছে অবাধ লুটপাটের মহোৎসব আর বিচারের নামে চলছে প্রহসন, যেখানে সরকার ব্যাতিব্যস্ত রয়েছে ইন্ডিয়া তোষণে আর সরকারি নেতাকর্মীরা ব্যস্ত রয়েছে নিজ নিজ উদরপূর্তিতে, সেখানে অসহায় অবহেলিত ছিন্নমূল মানুষের মাঝে আলোকবর্তিকা হয়ে যিনি তাদের অন্ধকার জীবনে আশার আলো দেখিয়েছেন। বাংলাদেশের মাদার তেরেসা হয়ে নীরব বিপ্লব ঘটানো সৈয়দা ইকবালমান্দ বানুকে শুধুমাত্র তারেক রহমানের শাশুড়ি হবার কারণে শুধুমাত্র হয়রানি করার হীন উদ্দেশে বৃহৎ সরকারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাঁর নামে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

লেখকঃ সাংবাদিক

এখানে প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্ত নিজস্ব, জাস্ট নিউজ বিডি ডটকম’র সম্পাদকীয় বিভাগের আওতাভুক্ত নয়।