করোনাকালে দেশনায়ক তারেক রহমানের মানবিক উদ্যোগ

করোনাকালে দেশনায়ক তারেক রহমানের মানবিক উদ্যোগ

ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা

বিল গেটস বলেছেন প্যানডেমিক অব দ্য সেঞ্চুরি। একশ বছর পর পর এমন মহামারীর দেখা মেলে। অথচ প্রথমদিকে এপিডেমিক না প্যানডেমিক বুঝতেই মাস দুই পার হয়ে গিয়েছিল। হ্যাঁ। চলমান কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস মহামারী নিয়েই সূচনা বাক্যগুলো। পুরো বিশ্বে সম্পূর্ণ নতুন এই ভাইরাসের সংক্রমণ। তাই ভ্যাক্সিন এবং নির্ধারিত কোনো ঔষধও এখনো অনাবিষ্কৃত। তাই বাঁচার উপায়ই হচ্ছে মানুষের সাথে মানুষের শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা। এটা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এলো পৃথিবীব্যাপী কোয়ারেন্টাইন, লকডাউন, আইসোলেশান প্রভৃতি।

আমাদের মাতৃভূমিতে গত দু'মাস ধরে চলছে বন্ধ, লকডাউন। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের মতো অধিকাংশের দরিদ্র, 'দিনে আনে দিনে খাওয়ার' দেশে এলো খাদ্যের অভাব, বেড়ে গেছে ক্ষুধার্ত মানুষও। বর্তমান ফ্যাসিষ্ট সরকারের কোভিড-১৯ এর ভয়াবহতার প্রতি অমনোযোগীতা, স্বাস্থ্যখাতের অব্যবস্থাপনা, দরিদ্রদের জন্য যথাযথ প্রণোদনার অভাব এবং দুর্নীতি জনগণের দুঃখ দুর্দশাকে আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন, দেশনায়ক এবং মানবতাবাদী তারেক রহমান সরকারের উপলব্ধির আগেই দেশের অভাবী, দরিদ্র জনগণের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করতে দলকে নির্দেশনা প্রদান করেন। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নের যথাযথ মনিটরিংয়ের ব্যবস্থাও তিনি করেছেন। প্রাথমিকভাবে জনগণকে সচেতন করতে প্রচার প্রচারণা জোরদার করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ড্যাব- এর মাধ্যমে মেডিকেল সাপোর্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশব্যাপী ক্ষুধার্ত মানুষের ঘরে ঘরে দলের উদ্যোগে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছানো হয়েছে এবং হচ্ছে। এই পর্যন্ত কমবেশি ১৫’লক্ষ পরিবারের প্রায় ১’কোটি মানুষের কাছে দেশনায়কের উদ্যোগের সুফল পৌঁছে গেছে। এ প্রচেষ্টা এখনো অব্যাহত আছে।

বিশ্বব্যাংকের হিসাবে মধ্যআয়ের দেশে যাদের আয় ৩.২ ডলারের নীচে তারাই দরিদ্র বা স্বল্প আয়ের মানুষ। ঐ হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে দরিদ্র ৮ কোটি ৬২ লাখ।

বর্তমান সরকার করোনাকালে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। এর অধিকাংশই শুভংকরের ফাঁকির মতোই। আবার এর ৯০ শতাংশই স্বল্পসুদে লোন হিসেবে শিল্পপতি, গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের জন্য। মাত্র ১০ শতাংশ দরিদ্রদের জন্য খাদ্য সহায়তা, যার পরিমাণ ৬ লাখ ৭৪ হাজার মেট্রিক টন চাল ও গম। এরমধ্যে আবার ৭২ হাজার টন ১০ টাকা মূল্যের চাল, যা কিনে নিতে হবে। কোনো নগদ অর্থ সহায়তা নেই। ঐ পরিমাণ খাদ্যে বাংলাদেশের ৮ কোটি ৬২ লাখ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর টেনেটুনে ২ সপ্তাহ চলতে পারে। অথচ পাশ্ববর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ৮ কোটি মানুষকে ৬ মাস বিনামূল্যে চাল দেয়া হচ্ছে। এমনকি পাকিস্তানে পর্যন্ত ১ কোটি ২০ লাখ পরিবারের প্রায় ১০ কোটি মানুষকে ১২ হাজার রুপী করে ৪ মাসব্যাপী প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে।

'মানুষের সর্বনাশ অমানুষের জন্য বয়ে আনে পৌষমাস'- এটার সত্যতা দেখা যাচ্ছে বর্তমান ফ্যাসিষ্ট সরকারের ত্রাণ বিতরণে। করোনাকালেও অভুক্তদের চাল, ডাল, তেলের প্রতি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মী, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলররা লোভ সামলাতে পারছে না। জনগণের ত্রাণের অধিকাংশই তারা চুরি করছে, বাকিটা দলীয়দের মধ্যে বিতরণ করছে। সাধারণ জনগণ এবং বিরোধীরা এই ত্রাণের কিছুই পাচ্ছে না। ১৯৭৪ এর দুর্ভিক্ষে যেমন দূর্নীতি, চোরাকারবারি করে তারা বাংলাদেশের প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। এখনো সে চেষ্টাই করে যাচ্ছে। জনগণের সাথেই যেন তাদের চির বৈরিতা। এ জন্যেই ভোটের মতো ভাতও কেড়ে নিচ্ছে তারা। অন্যদিকে তাদের নেত্রী, 'চোরের মা' এসবের উপযুক্ত বিচার না করে শুধু বড় গলায় কথা বলেই যাচ্ছে।

এক এগারোর ২ বছর এবং বর্তমান ফ্যাসিষ্ট সরকারের ১১ বছর মোট ১৩ বছর বিএনপি ক্ষমতার বাইরে। দলের চেয়ারপার্সন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সনসহ প্রতিটা নেতাকর্মী ব্যবসা, চাকুরীসহ রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত। অধিকন্তু যারা ব্যবসা এবং চাকুরীতে নিয়োজিত তারাও বিভিন্নভাবে ফ্যাসিষ্ট সরকারের বৈষম্যের শিকার। এতো সীমাবদ্ধতা এবং দৈন্যতার মধ্যেও দেশনায়কের মহতী উদ্যোগে পুরো জাতীয়তাবাদী পরিবারই আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে করোনাকালে আর্থিক এবং মানসিকভাবে জনগণের পাশে থাকতে, মানবিকতার ঢালা উপছে দিতে.....

"বলো কি তোমার ক্ষতি
জীবনের অথৈ নদী
পার হয় তোমাকে ধরে
দুর্বল মানুষ যদি !
মানুষ মানুষের জন্য
জীবন জীবনের জন্য,
একটু সহানুভূতি কি?
মানুষ পেতে পারে না !!"

রাষ্ট্রের যাবতীয় সুবিধা নিয়েও যেখানে সরকার করোনাকালে জনগণকে যথাযথ সহায়তা দানে কুণ্ঠিত, ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে সব জায়গায়; সেখানে মানবতার ফেরিওয়ালা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন সীমিত শক্তি দিয়ে যারপরনাই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অভুক্ত জনগণের পাশে থাকতে, কাছে থাকতে।

ফ্যাসিষ্ট সরকারের অত্যাচারে শারীরিকভাবে সহস্র কিমি দূরে থাকতে বাধ্য হলেও মানসিকভাবে তিনি তাঁর দলের মাধ্যমে জনগণের খুব কাছে থেকে দেশের জনগণের, ক্ষুধার্ত এবং বিপন্ন মানবতার সেবা করেই যাচ্ছেন। দলের চেয়ারপার্সন দেশমাতা খালেদা জিয়ার অনুপ্রেরণায় দেশনায়ক তারেক রহমান করোনাভাইরাস মহামারী এবং ফ্যাসিষ্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে জেতার সর্বমুখী চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ইনশাআল্লাহ আমরা সফল হবোই।