আবু সাঈদ আনসারী
পৃথিবীর এক সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০ নাম্বার জার্সি পরিহিত খেলোয়াড় কিংবদন্তি ফুটবলার ম্যারাডোনা চলে গেলেন। টাকা, কড়ি, ধন দৌলত, যশ ক্ষমতা কিছুই তাকে ধরে রাখতে পারলো না। যেমনটি তিনি যখন ফুটবল নিয়ে দৌড় দিতেন কেউ পেছন থেকে তাকে ধরতে পারতো না, রুখতে পারতো না। আজও তাই হলো, তিনি চলে গেলেন। কেউ তার মৃত্যু রুখে দিতে পারলো না।
كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَما الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلاَّ مَتَاعُ الْغُرُورِ
প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোন সম্পদ নয়। সুরাহ আল ইমরান, আয়াত-১৮৫।
খুব গরীব ঘরে তার জন্ম। এমনকি ছোট বেলা তার একটি ফুটবল কেনার টাকা ছিলো না। শুনেছি কাগজ, পলিথিন দিয়ে বল বানিয়ে খেলতেন। মাত্র ২৬ বছর বয়সে আর্জেন্টিনাকে বিশ্ব কাপে জয় উপহার দেন। গোলের পর গোল করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ম্যারাডোনা ইতিহাস গড়ে তুলেন। তারপর এক সময় মিলিয়নিয়ার ম্যারাডোনা অন্ধকার পথে পথ বাড়ান। দুঃখজনক!
বিশ্বকাপ ১৯৮৬: তখন বেশ ছোটো, প্রাইমারী স্কুলের ছাত্র।
ম্যারাডোনার জাদুকরি ফুটবল শিল্প মুগ্ধ করেছে আমাদেরকে। তার বিশ্বকাপ জয় যেনো আমাদের জয় ছিলো।
বিশ্বকাপ ১৯৯০: গভীর রাতে ফাইনাল খেলা ছিলো, মনে আছে সে রাতে খুব বৃষ্টি হচ্ছিল, আমি আর বড় ভাই একটি ছাতা নিয়ে হাঁটছি, সাদা কালো টিভি নয়, প্রতিবেশি এক ঘরে রঙিন টেলেভিশনে খেলা দেখবো। অন্ধকার রাত, প্রচুর বৃষ্টি, ছাতায় কাজ হচ্ছে না। একেবারে গোসল করে ঐ বাসায় ঢুকলাম। শেষমেশ আর্জেন্টিনা হেরে গেলো। গ্যালারিতে জার্মানরা উল্লাস করছে আর ম্যারাডোনা সহ তার সমর্থকরা কাঁদছেন... দুজনে খুব বিষন্ন হলাম।
ফুটবল বলতেই মানুষ তখন ম্যারাডোনাকে বুঝতো। পাড়ায় পাড়ায় তার ছবি, আর্জেন্টিনার পতাকা শোভা পেতো এখানে সেখানে। আমরা সহপাঠি ব্রাজিলের সমর্থকদেরকে বলতাম ‘ইলিশ মাছের ত্রিশ কাটা বোয়াল মাছের দাড়ি, ব্রাজিল ভিক্ষা করে আর্জেন্টিনার বাড়ি!’ আরো কতো কি? আমরা ম্যারাডোনার স্টিকার, পোস্টকার্ড কিনতাম। অনেক খাতা থাকতো ম্যারাডোনা নাম দিয়ে। ম্যারাডোনাময় ছিলো সে সব কৈশরের দূরন্ত দিনগুলো।
দোষে গুনে মানুষ। ম্যারাডোনার বড়ো গুন ছিলো, তিনি অসহায়, নির্যাতিত ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ছিলেন। তার ভাষায় -‘Palestine is in my heart and I’m Palestinian.’
আজ তিনি চলে গেলেন। এভাবেই আমরা সবাই একদিন চলে যাবো চির গন্তব্যের পথে। কেউ গতকাল, কেউ আজ, কেউ আগামীকাল। রেখে যাবো সব টাকা কড়ি। যত বড়ই মিলিয়নিয়ার হই না কেনো? যত বড়ো সেলিব্রিটি হই না কেনো?
যিনি আমাদেরকে এতো বড়ো করলেন, জিরো থেকে হিরো করলেন, সহায় সম্পদ, যশ-খ্যাতি দিলেন; তাঁকে কি খুশি করতে পারলাম?
আমাদের কবরে কিন্তু এসব কিছুই যাবে না। যেভাবে একদিন শূন্য হাতে এসেছিলাম একা, ঠিক সেভাবেই প্রস্থান করবো। শুধু যাবে আমাদের কাজ, আমল। মাটির মানুষ একদিন মাটির সাথে মিশে যাবো। আমাদের কবরের সাইজ সবার কিন্তু more or less একই। তাহলে difference কি হবে? শুধু আমলের difference! আমি যদি ভালো কাজ করে যাই, তা আমাকে কবরে হেফাজত করবে ইন শা আল্লাহ।
অনেকে RIP বলছেন। দয়া করে তা বলবেন না। আমরা জানি না তার মৃত্যু কিভাবে হয়েছে। আবার অনেকে ফি নারি জাহান্নামা... বলে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিচ্ছেন!! আমরা জাহান্নামে পাঠানোর কে? এটা বলা নেহায়েত অন্যায়!
পৃথিবী থেকে চলে যাবার আগে হে আল্লাহ আমাদেরকে জান্নাতী বানিয়ে দেন।
আমিন।
নভেম্বর ২০, ২০২০।। লন্ডন, ইংল্যান্ড।