দাড়ি নিয়ে যত বিপত্তি

দাড়ি নিয়ে যত বিপত্তি

আবু সাঈদ আনসারী

আপনারা জানেন কিনা জানি না, দাড়ি থাকার কারণে অনেক দিন অনেক কাজে আমাকে নেয়া হয়নি। অনেক জায়গায় আমাকে তিরস্কার করা হয়েছে। ‘দাড়িওয়ালা’ বলে গালি দিয়েছেন অনেকেই। ‘দাড়ির ভেতরে শয়তান থাকে’ বলে কুৎসিত কুরুচিপূর্ণ কথা শুনেছি জীবনে বহুবার। আজ সে কথাগুলো আপনাদেরকে বলবো, আপনারা হয়তো কেউ কেউ আৎকে উঠবেন! আমাকে করুণা দেখাবেন! তবে মনে রাখবেন দাড়ি আমার আছে আর থাকবেই। দাড়ির জয় হবে। অবশ্যই হবে। ইন শা আল্লাহ।

শুনুন তাহলে, অনেক বছর আগে বাংলাদেশ টেলিভিশনে বাংলা এবং ইংরেজী দুটো ভাষায় খবর পড়ার জন্য অডিশন দিলাম, কিন্তু আমি শেষ পর্যন্ত টিকতে পারলাম না, তার কারণ ছিলো দাড়ি। অবশ্য অন্যান্য অনুষ্ঠান সেখানে করেছি। তখন বিটিভিতে ‘হাজার বছর ধরে’ নামক একটি অনুষ্ঠানে নিয়মিত আবৃত্তি করতাম। অন্তত কয়েক দিন প্রডিউসার সাহেব আমাকে দাড়ি শেইভ করার অযৌক্তিক, অমানবিক ও অসৌজন্যমূলক পরামর্শ দেন। আমি তা আমলে নেইনি। এছাড়াও ‘প্রাণ তরঙ্গ’ ‘চাওয়া পাওয়া’ ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করি। অনেক জায়গায় দাড়ির জন্য বৈষম্যের স্বীকার হই। অনেকেই জানতেন না যে আমি মাদ্রাসার ছাত্র! মাদ্রাসায় পড়েও যে সংস্কৃতি চর্চা করা যায়, আবৃত্তি করা যায়! খবর পাঠক হওয়া যায় তা আলহামদুলিল্লাহ আমরা প্রমাণ করেছি।

বাংলাদেশ বেতারে খবর পড়ার জন্য অডিশন হলো, আমি পাশ করলাম, যে বেতারে আপনাকে দেখারই সূযোগ নেই-আপনি কালো না ধলো! সেখানেও আমার দাড়ি নিয়ে প্রশ্ন করা হলো! সাফ জানিয়ে দিলাম দাড়ি আমি শেইভ করবোই না। অবশ্য বেতারে লন্ডন আসার আগ পর্যন্ত বেশ ক’বছর খবর পড়েছিলাম।

লন্ডনেও এসে কোনো এক টিভি চ্যানেলে খবর পড়ার জন্য তৈরি হতে বলা হলো, মানে দাড়ি আপনি শেইভ করবেন! আমার পক্ষে অসম্ভব, করলাম না। কেউ কেউ আমাকে আইনের আশ্রয় নিতে বললেন, আমি একজন আইনের ছাত্র হিসেবে তাদেরকে স্যু করতে পারতাম, কিন্তু কোনো এক কারণে তা করা থেকে বিরত থাকি। দাড়ি রাখার জন্য কেউ কেউ আমাকে রাজাকার উপাধি দিয়েছেন, অথচ স্বাধীনতার অনেক পরে আমার জন্ম। মুক্তিযুদ্ধে হানাদারেরা আমাদের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে ছারখার করে দিয়েছিলো। সেসব কথা আজ আর থাক।

আবার শুনুন, দাড়ির জন্য কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ একজনকে বিয়ে করতে পেরেছি, আমার স্ত্রী বিয়ের আগে তার সিভির Preference এ দাড়িওয়ালা স্বামী চেয়েছিলেন। এখনো দাড়ি একটু ছোটো করলেই তিনি ক্ষেপে যান। আমার মেয়ে নুসাইবাহ দাড়িবিহীন কারও কাছে যেতে ভয় পেতো। কোলে উঠে ও এখনো দাড়ি টেনে টেনে কথা বলে।

আমি মাদ্রাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যত জায়গায় পড়েছি তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাড়ির মর্যাদা পেয়েছি মাককায়। আমার অনেক ইন্দোনেশিয়ান ও আফ্রিকান ক্লাসমেইটরা আমার দাড়ির জন্য ঈর্ষান্বিত হতেন। তাদের অনেকের গাল ভর্তি দাড়ি ছিলো না! কিন্তু গাল ভর্তি মায়া ছিলো আমার জন্যে। দাড়ির জন্য অনেক সময় অনেক উপহার পেয়েছি। সেগুলো অন্য একদিন বলবো ইন শা আল্লাহ। মাসজিদ আল আকসা সফর করতে গিয়ে দেখলাম ইয়াহুদ ভাইয়েরা সবাই দাড়িওয়ালা। দাড়িবিহীন শিখ এবং ইয়াহুদ খুবই রেয়ার। সবচেয়ে অবাক হবার বিষয় হলো দাড়ির বিরুদ্ধে যারা আমাকে ভর্ৎসনা করেছেন তারা মুসলমান! আমার হিন্দু বা অন্য ধর্মের বন্ধুরা বরং দাড়ির প্রশংসা করতেন।

রাসুল (সাঃ) সহ পৃথিবীর সব নামীদামী মানুষের দাড়ি ছিলো। এমনকি যারা ইসলামের বিরোধিতা করেছেন, তাদের অনেকেই দাড়ি রেখেছেন, যেমন, কার্লমার্কস, ডারউইন।

রবীন্দ্রনাথের দাড়ি তো ছিলো অসাধারণ! দাড়িবিহীন গুরু আপনি চিন্তাই করতে পারবেন না।

পুরুষত্ব হচ্ছে দাড়ির মধ্যে, কাল কিয়ামতের দিন শাফায়াত যার কাছ থেকে আশা করছি, দাড়ি নিয়ে অন্তত তাঁর কাছে যাবার জন্য তৈরি হই।

জয় হউক দাড়ির। আল্লাহ আমাদেরকে দাড়ির মর্যাদা রক্ষা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

মার্চ ১৭, ২০২১
লন্ডন, ইংল্যান্ড।