শিক্ষার টেকসই উন্নয়ন, প্রসার ও কর্মমুখীকরণে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া ও বিএনপির ভূমিকা

শিক্ষার টেকসই উন্নয়ন, প্রসার ও কর্মমুখীকরণে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া ও বিএনপির ভূমিকা

আলোচনার শুরুতেই শ্রদ্ধাবনতচিত্তে স্মরণ করছি ইতিহাসের মহান নেতা, ক্ষণজন্মা পুরুষ, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তমকে। শহীদ জিয়া সম্বন্ধে কোনো বলাই যথেষ্ট হবে না। জিয়া একটি ইতিহাস। জিয়া একটি প্রতিষ্ঠান। জিয়া একটি বৈপ্লবিক চেতনা। জিয়া একটি রাজনৈতিক দর্শন। ব্যক্তি চিরস্থায়ী নন। সুতরাং ব্যক্তিকে টিকে থাকতে হয় তার কর্ম ও আদর্শ দিয়ে। শহীদ জিয়া যে সকল কাজ করে গেছেন, যে আদর্শের উদাহরণ রেখে গেছেন, তাতে যুগের পর যুগ ধরে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তিনি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আমরা মনে করি, ব্যক্তির অমরত্ব সম্ভবত সেখানেই।

জিয়াউর রহমান ব্যক্তিগতভাবে ছিলেন নম্র, ভদ্র ও নিরহঙ্কার। তিনি ছিলেন স্বল্পভাষী। একজন প্রেসিডেন্ট হয়েও তিনি সাদাসিধে জীবনযাপন করতে ভালোবাসতেন। আনুষ্ঠানিকতা এবং প্রেসিডেন্ট পদের দাবিতে তিনি সব সময় ভালো কাপড় পরতেন। কিন্তু ঘরের ভিতরে তিনি ছেঁড়া কাপড় তালি দিয়ে রিপু করে ব্যবহার করতেন। প্রেসিডেন্ট জিয়ার ভাষায়, “আমার দেশের মানুষ গরিব, জনগণ গরিব; তাদের অর্থে আমার বিলাসিতা করা উচিত নয়, সরকারি অর্থ মানেই জনগণের অর্থ।” তিনি একমাত্র প্রেসিডেন্ট যাকে ক্ষমতার অপব্যবহার কিংবা অর্থের লোভ-লালসা স্পর্শ করতে পারেনি। একবার নেপালের রাজা বীরেন্দ্র বীর বিক্রম শাহদেব এবং তাঁর স্ত্রী রানী ঐশ্বর্যলক্ষ্মী দেবী বাংলাদেশ সফরে আসলেন। সঙ্গে ছিলেন তাদের দুই সন্তান। এটা দেখে জনাব তারেক রহমান এবং আরাফাত রহমানের মনে প্রশ্ন জাগলো তাদের পিতাও তো দেশের প্রেসিডেন্ট তাহলে তারা কেন বিদেশ যেতে পারবে না? একদিন সকালে পুত্র তারেক রহমান মা বেগম খালেদা জিয়ার সামনে এসে বললেন, নেপালের রাজা-রানী তাদের সন্তান নিয়ে বাংলাদেশ এসেছিলেন। তাহলে আমাদের দুই ভাইকে সঙ্গে নিচ্ছ না কেন? মা পুত্রের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে দরজার দিকে ইশারা করে বললেন, প্রশ্নটা এবার ওখানে কর। পেছনে ফিরে তারেক রহমান দেখলেন, পিতা প্রেসিডেন্ট জিয়া দাঁড়িয়ে আছেন। পুত্রের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, তোমরা তো রাজার ছেলে নও, তোমাদের বিদেশ ভ্রমণের খরচ রাষ্ট্র বহন করবে কেন? জিয়াউর রহমানের সততা সম্পর্কে একজন বিদেশি সাংবাদিক তার বক্তব্যে বলেছেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার সততা শুধু বাংলাদেশের রাজনীতিকদের জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের রাজনীতিকদের জন্যও অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত (বাংলাদেশ টাইমস, ৯ নভেম্বর, ১৯৮১)। তাঁর সততার খ্যাতি বিশ্বজোড়া।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন সৎ, আদর্শ, মহৎ ও ধার্মিক মানুষ। মহান আল্লাহর প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস। তিনি সিগারেট ও মদ্যপান করতেন না। তিনি নিয়মিত নামাজ পড়তেন, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করতেন এবং রমজানে যথারীতি রোজা রাখতেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু প্রকৃতির মানুষ। তিনি একদিন এক গ্রামে সফরকালে হঠাৎ লক্ষ্য করলেন, এক বাড়িতে এক মহিলা নিজে ‘ঘাইন’ টানছেন। এটি দেখে তিটি বিস্মিত হয়েছিলেন, অত্যন্ত দুঃখ পেয়েছিলেন, ব্যথিত হয়েছিলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ উক্ত বাড়িতে উপস্থিত হয়ে মহিলার ‘ঘাইন’ টানার বিষয়ে জানতে চাইলেন। যখন তাঁকে জানানো হলো যে, ঐ পরিবার এতই গরিব ‘ঘাইন’ টানার জন্য গরু কিনতে সমর্থ নয়, প্রেসিডেন্ট জিয়া তখনই গরু ক্রয়ের জন্য তিন হাজার টাকা দান করলেন।

বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট জিয়ার খাবারের মেন্যু ছিল : ডাল, রুটি, সবজি আর বড়জোর কিছুটা মাছ বা মাংস। সেই সময় জিয়ার খাবারের আমন্ত্রণকে অনেকে পানিশমেন্ট ফুড হিসেবে বিবেচনা করত। প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তিনি পেয়েছেন অমূল্য উপহার। এসব উপহার, এমনকি ব্যক্তিগতভাবে দেয়া উপহার তিনি নিজে নেননি। এসব জমা দিয়েছেন বঙ্গভবন কোষাগারে। মোটকথা, তিনি জাতির সঙ্গে কখনো হিপোক্রেসি করেননি বলেই জাতির কাছে আজ জিয়া সততার প্রতীক। মওলানা ভাসানীকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনাকে সব সময় সরকার বিরোধী ভূমিকায় দেখা যায়, এমনকি যখন আপনার নিজের দল মন্ত্রিসভা গঠন করেছিল তখনও আপনি একই জনসভায় দাঁড়িয়ে আপনার পাশে বসা মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ার উচ্চারণ করে বক্তৃতা দিয়েছেন। অথচ দেখা যায় আপনি জিয়াউর রহমানের প্রতি সহানভূতিশীল। জিয়ার প্রতি এই দুর্বলতার কারণ কী? মওলানা জবাবে বলেছিলেন, তোমরাতো রাজনীতি দেখছো বহুদিন ধরে, আমার রাজনৈতিক জীবনও বহুদিনের, “এমন একটা লোক দেখলাম না (জিয়া ব্যতীত) যে ক্ষমতার শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছে নিজেকে দুর্নীতি আর সজনপ্রীতির ঊর্ধ্বে রাখতে পেরেছে, আমাকে একটামাত্র উদাহরণ দেখাও।”

জিয়া জনগণের সঙ্গে প্রত্যেক্ষ যোগাযোগের (খাল খনন, গণশিক্ষা ইত্যাদি) মাধ্যমে কাজ করেছেন। তার আগে কোন নেতা-নেত্রীকে দেশের মানুষ এতো কাছে থেকে দেখার, কথা বলার ও কাজ করার সুযোগ পায়নি। জিয়ার এই স্বল্পকালীন রাজনৈতিক জীবনে তিনি প্রায় ৫০০০ জনসভা, কর্মিসভা, সমাজ সংগঠনমূলক সভা করেছেন। এটা বাংলাদেশে তো বটেই, পৃথিবীর অন্যদেশের তুলনায়ও রেকর্ড। তিনি জনসভায় দীর্ঘ বক্তব্য দিতেন, প্রশ্নোত্তর করতেন, মতামত দিতেন এবং হাজার মানুষের সঙ্গে হাত মিলাতেন। দলের কথার চেয়ে বেশি কাজ করার কথা বলতেন। ভাগ্য উন্নয়নের কৌশল আলোচনা করতেন। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কথা বলতেন। এগুলোই ছিল গণসংযোগে তাঁর রাজনৈতিক ভাষা। বিরোধী দলকে গালিগালাজ, অন্য নেতৃত্বকে অসম্মান করার চেষ্টা তাঁর ভাষায় ছিল না। তিনি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতেন তাঁর বক্তব্যে। জাতিকে বিভক্ত করতেন না। তাঁর দল থেকে তখন প্রচুর লিফলেট, ছোট বই এবং অসংখ্য পোস্টার ছাপা হতো। বন্যা থেকে রক্ষা পাবার, স্বাস্থ্য সুরক্ষার, এমনকি গম-বীজ কেমন করে রাখতে হবে তার পোস্টার-লিফলেটও বিএনপি থেকে ছাপা হয়েছিল। তিনি চেয়েছিলেন বিএনপি শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়, একটি রাজনৈতিক শিক্ষালয়ও হবে।

শিক্ষার টেকসই উন্নয়ন, প্রসার এবং কর্মমুখীকরণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভূমিকা মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে শিক্ষা বিস্তার ও প্রসারকে সবার আগে গুরুত্ব দিয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক শহীদ জিয়া গণমানুষের উন্নয়নে যে প্রকল্পগুলো গ্রহণ করেছিলেন তা পরবর্তীকালে আরও গতিশীল হয়েছিল আপোসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুশাসন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। শহীদ জিয়ার উন্নয়ন মডেল অনুসরণ করে বেগম জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি ও চারদলীয় জোটের শাসনামলে শিক্ষাকে দেয়া হয়েছিল সর্বোচ্চ গুরুত্ব এবং অগ্রাধিকার। কারিগরি শিক্ষার প্রসার, শিক্ষাকে জীবনমুখী ও কর্মমুখী করে তোলার পাশাপাশি পরীক্ষায় নকল দূরীকরণেও তাঁর সরকারের সাফল্য ছিল ঈর্ষণীয়। উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ২৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর-এ উন্নীত করা হয় বিএনপি শাসনামলেই। আমরা একটু পর্যবেক্ষণ করলেই কয়েকটি বিষয়ে ওয়াকিবহাল হতে পারি। পয়েন্ট আকারে বিষয়গুলোকে এভাবে তুলে ধরা যায়-

গণশিক্ষা কার্যক্রম চালু

ব্যক্তিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। যথার্থই বলা হয়, শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা মানুষকে তার ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের চাহিদা ও করণীয় সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। জিয়া মনে করতেন, দেশের মানুষ শিক্ষিত না হলে দেশের কোনো উন্নতি হবে না। তিনি মানুষকে লেখাপড়া শেখানোর জন্য দেশে গণশিক্ষা কর্মসূচি চালু করেন। শিশুদের স্কুলে পাঠিয়ে আনুষ্ঠানিক শিক্ষাদানের পাশাপাশি নিরক্ষর বয়স্ক জনগোষ্ঠীকেও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষাদানের মাধ্যমে সাক্ষর করে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেন প্রেসিডেন্ট জিয়া। ১৯৮০ সাালে প্রেসিডেন্ট জিয়া ১ বছরে ১ কোটি নিরক্ষর এবং দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে ৪ কোটি নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরতা সেবা প্রদানের উদ্দেশ্য নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে Mass Education Programme (MEP) কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন।

১৯৮০ সালে সরকারি উদ্যোগে দেশব্যাপী চালু করেছিলেন গণশিক্ষা। তিনি নিজে হারিকেন জ্বালিয়ে গ্রাম বাংলার কর্মসূচির উদ্বোধন করেছিলেন। একই সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মীদেরকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে। নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছেপেছিলেন ১ (এক) কোটি বই। গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রবর্তন করে মাত্র দেড় বছরে ৪০ (চল্লিশ) লাখ বয়স্ক মানুষকে নতুন করে লেখাপড়া শিখিয়েছিলেন। প্রাইমারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্র পড়াশোনার পরিবেশ ফিরিয়ে এনেছিলেন। শিক্ষার প্রসারে গ্রন্থাগারকে গুরুত্ব দিয়ে ১৯৮০-৮১ অর্থবছরে ‘থানা পাবলিক লাইব্রেরি কাম অডিটোরিয়াম স্থাপন’ শীর্ষক একটি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন।

আদর্শ নাগরিক গড়ার লক্ষ্যে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে তিনি ঢেলে সাজিয়ে প্রতিটি নাগরিকের জন্য সহজলভ্য করে দেন। ছাত্রদেরকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে উৎসাহ প্রদান করেন। তাদের জন্য নানা রকম অনুষ্ঠান আয়োজন করে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট উপস্থিত থাকতেন। ‘হিজবুল বাহার’ নামক একটি জাহাজে করে কৃতী ছাত্রছাত্রীদের তিনি শিক্ষা ভ্রমণেরও ব্যবস্থা করেন।

দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শিক্ষাব্যবস্থার সাথে নতুন একটি বিষয় সংযুক্ত করেন। ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যাতায়াত সুবিধার জন্য দেশের প্রথিতযশা বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজসমূূহে পরিবহন ব্যবস্থা সংযুক্ত করে দেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন নিজস্ব তহবিল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে বাস ও মিনিবাস উপহার দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করেন যা ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে একটি কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।

বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা

প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে বিভিন্ন সময়ে এর সংস্কার ও উন্নয়নের প্রচেষ্টা করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার অপরিহার্যতার প্রতি লক্ষ্য রেখে জিয়াউর রহমান ১৯৮০ সালে দেশে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯৩ সালে ৫ বছরের বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন করেন। দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে শিক্ষালাভে আগ্রহী করতে খালেদা সরকার ১৯৯৩ সালে ‘শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য’ কর্মসূচিও চালু করেছিলেন।

বিএনপি ২০০১ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসার পর ২০০৩ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠন করে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থাপনাকে আরো এক ধাপ উপরে নিয়ে যায়। ২০০৩ সালে শুরু হওয়া প্রাথমিক শিক্ষায় ৭৮ লক্ষ শিশু ১০০ টাকা হারে বৃত্তি পেয়ে আসছে। বেগম খালেদা জিয়ার ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকাকালীন প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তি হার উল্লেখযোগ্য ও সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছায়। এই সময়ে ভর্তির হার ৯৭ শতাংশে উন্নীত হয়।

মাদ্রাসা শিক্ষা

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সরকারের আমলে (১৯৭৬-৮১ খ্রি.) বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষার পূর্ণাঙ্গ বিকাশ শুরু হয়। যুগের চাহিদা এবং জাতীয় ঐতিহ্য ও প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সমন্বিত উপায়ে ইসলাম ধর্মীয় ও আধুনিক শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালে দেশে একটি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর শান্তিডাঙ্গায় (কুষ্টিয়া ও যশোর সীমান্তবর্তী এলাকা) রাষ্ট্রপতি জিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৮০ সালে জাতীয় সংসদে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস করা হয়।

মাদ্রাসা শিক্ষার বহুমুখী উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রপতি জিয়ার আমলে ১৯৭৮ সালে ‘মাদ্রাসা শিক্ষা অধ্যাদেশ’ বলে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড স্থাপিত হয়। ১৯৭৯ সালের ৪ জুন থেকে এর কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদ শেষে জিয়া সরকার যে দ্বি-বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে সেখানে মাদ্রাসা শিক্ষাখাতের উন্নয়নে ১.২১ কোটি টাকা পৃথক বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। সামাজিক বাস্তবতা অনুধাবন করে স্বাধীন বাংলাদেশে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই প্রথম ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশের প্রতিটি জেলায় একটি সরকারি গার্লস কলেজ, একটি সরকারি বয়েজ কলেজ ও একটি সরকারি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করার। প্রথম দুটি বাস্তবায়িত হলেও তৃতীয়টি বাস্তবায়িত হয়নি, যা দেশের বর্তমান বাস্তবতার আলোকে প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক।

১৯৯১-৯৬ এবং ২০০১-০৬ সালে খালেদা জিয়ার সরকারও বিভিন্ন মেয়াদে মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এ সময় এবতেদায়ী মাদ্রাসাকে বেসরকারি প্রাথমিক স্কুলের সমপর্যায়ে উন্নীতকরণ ও শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়। বিএনপি শাসনামলেই ২০০৩ সাল থেকে সরকার এবতেদায়ী মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করে আসছেন। বিএনপি সরকার মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়ন ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য গাজীপুরে মাদ্রাসা ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে। ২০০২ সালে গঠিত মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কার কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বিএনপি সরকারই ২০০৬ সালে প্রথম ফাজিলকে ব্যাচেলর ও কামিলকে মাস্টার্স ডিগ্রি প্রদান করেছিল (সূত্র : জাতীয় শিক্ষা কমিশন ২০০৩)।

দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সরকারের আমলেই একটি এফিলিয়েটিং বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আরবী ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ২০০৬ সালে জাতীয় সংসদে একটি আইন পাস হয়। এরই ধরাবাহিকতায় ২০১৩ সালে বাংলাদেশে আরবী ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। একই বছরে খালেদা জিয়া সরকার কওমী মাদ্রাসার সর্বোচ্চ শ্রেণি দাওরায়ে হাদিসকে আরবী ও ইসলামিক স্টাডিজের সমমানের মাস্টার্স ডিগ্রির মান দিয়ে ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক একটি পরিপত্র জারি করা হয়। সম্প্রতি, সরকার আরেকটি পরিপত্রের মাধ্যমে দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান প্রদান করেছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা

উচ্চ শিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকার ১৯৯২ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন (Private University Act) প্রবর্তন করেন। এর মাধ্যমে বেসরকারি উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পঠন-পাঠন শুরু করেছিলেন। বর্তমানে বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষার বিস্তারে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। উল্লেখ্য যে, বর্তমানে বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০০টিরও উপরে যেখানে প্রায় ৬ লাখের কাছাকাছি বা অধিক সংখ্যক ছাত্রছাত্রী উচ্চ শিক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে।

শিক্ষায় দূরশিক্ষণ পদ্ধতি চালু

কর্মজীবী মানুষ, যাদের কর্মস্থলে দীর্ঘকাল উপস্থিত থেকে সনাতন পদ্ধতিতে শিক্ষাগ্রহণ সম্ভব নয়, যেসব বয়স্ক মানুষ যথাসময়ে নানা কারণে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেননি এবং বিভিন্ন স্তরের পেশাজীবীদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করার জন্য শিক্ষায় দূরশিক্ষণ পদ্ধতির লক্ষ্যে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকার ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ উন্মুুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) প্রতিষ্ঠা করেন। দূরশিক্ষার মাধ্যমে সমগ্র মানুষকে অতি স্বল্প সময়ে কর্মক্ষম মানব সম্পদে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ (সূত্র : জাতীয় শিক্ষা কমিশন ২০০৩)।

শিক্ষার সুযোগ গ্রহণে অসমর্থ বিশাল গ্রামীণ যুবক ও নারী সম্প্রদায়ের সামনে বাউবি শিক্ষা কর্মসূচি এক বিস্তৃততর অঙ্গন উন্মোচন করে দিয়েছে। ফলে তারা স্ব-কর্ম (self-employment) দ্বারা যেমনি স্বাবলম্বী হচ্ছে তেমনি এ দেশের অর্থনীতি ও জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। বাউবি থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২২ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী তাদের কাক্সিক্ষত শিক্ষা সমাপ্ত করেছে। এক কথায়, শিক্ষার সুযোগ ও সুবিধাবঞ্চিত নানা শ্রেণি-পেশায় নিয়োজিত মানুষকে বাংলাদেশের শিক্ষা ও উন্নয়নে যুক্ত করে টেকসই উন্নয়নের ধারাকে প্রণোদিত করার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাউবি’র বিকল্প বাংলাদেশে নেই।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা

একটি সফল গণতান্ত্রিক আন্দোলন শেষে এককভাবে নির্বাচনে জিতে ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় আসে বিএনপি সরকার। বিএনপির শাসনামলেই ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। উল্লেখ্য যে, বর্তমানে এটি বিশ্বের ৫ম বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। স্নাতক পর্যায়ে বাংলাদেশের মোট শিক্ষার্থীর ৪৮ শতাংশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। বর্তমানে অধিভুক্ত কলেজের সংখ্যা ২৭০০ এবং ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১৩ (তের) লক্ষ (সূত্র : বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ওয়েবসাইট)।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা

বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসার পর তথ্যপ্রযুক্তি ও কম্পিউটার খাতের গুরুত্ব তীব্রভাবে অনুভব করে। এরই ধারাবাহিকতায় বিএনপি সরকার তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় গঠনের মাধ্যমে এ খাতকে জাতীয় উন্নতিতে সম্পৃক্ত করার বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রযুক্তি হস্তান্তর, নব নব প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং এগুলোকে ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিএনপি শাসনামলে ১২ (বার)-টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া দেশের বড় বড় ৪টি বিআইটিকে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয়।

নারী শিক্ষার ব্যাপক প্রসার

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে সরকারি চাকরিতে নারীদের জন্য কোটা সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু করার প্রথম ঘোষণা দেয়া হয়। রাষ্ট্রীয় চাকরিতে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ পদ সংরক্ষিত রাখার বিধান করেছিলেন জিয়াউর রহমান। নারী উন্নয়নে জিয়ার অবদানের ধারাবাহিকতায় ১৯৯১-৯৬ শাসনামলে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকার নারী শিক্ষার প্রসারে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেন। প্রথমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এবং পরবর্তীকালে ডিগ্রি পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করে দেওয়া হয়। মেয়ে শিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়া রোধ করতে শিক্ষা উপবৃত্তিও চালু করা হয়। দরিদ্র শিশুদের শিক্ষার জন্য তার সরকার ‘শিক্ষার জন্য খাদ্য’ নামে এক বৃহৎ কর্মসূচিও চালু করেন।

শিক্ষাবান্ধব খালেদা জিয়া সরকারের নীতির কারণে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের স্কুল পর্যায়ে ছেলে ও মেয়েদের অনুপাত ৫২ঃ৪৮-এ উন্নীত হয়। ২০০৬ সাল নাগাদ তা ৫০ঃ৫০ হয়ে যায়। বিখ্যাত লেখক ও গবেষক নিকোলাস ক্রিস্টফ বাংলাদেশের উন্নয়নের রহস্য নিয়ে তার এক লেখায় বলেন, “What was Bangladesh’s secret? It was education and girls“. তিনি আরো বলেন, “As Bangladesh educated and empowered its girls, those educated women became pillars of Bangladesh’s economy. “

খালেদা জিয়ার সময়েই মেয়েদের জন্য ২ (দুই)টি নতুন ক্যাডেট কলেজ ও ৩ (তিন)টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়। নারীর ক্ষমতায়ন ও সংসদে নারীদের জন্য আসন সংরক্ষণও করা হয়। উল্লেখ্য, ফোর্বস সাময়িকীর বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাবান নারী নেতৃত্বের তালিকায় ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থান ছিল ১৪তম।

নারীদের জন্য এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা

২০০১ সালে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসার পর নারীদের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে। এশিয়া ও বিশ্বে টেকসই অর্থনৈতিক ও মানব উন্নয়নের জন্য দক্ষ ও পেশাদার সেবাভিত্তিক নারী নেতা সৃষ্টির লক্ষ্যে চট্টগ্রামে নারীদের জন্য ‘এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন’ প্রতিষ্ঠা করেন। এটি বিশেষত এশিয়ান সমাজে পশ্চাৎপদ ও অনগ্রসর নারীদের জন্য শিক্ষার অবারিত সুযোগ সৃষ্টির এক অনন্য প্রয়াস।

বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বের ১৬টি দেশের ৫০১ জন ছাত্রী লেখাপড়া করছে। ‘এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন’-এ প্রায় ৭০ শতাংশ বাংলাদেশি এবং বিদেশি শিক্ষার্থীরা বিনা খরচে পড়াশোনা করছে (সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক, ২৩শে এপ্রিল ২০১৪)।

জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন

বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকে শিক্ষার উন্নয়নের লক্ষ্যে ৭ (সাত)-টি বিজ্ঞ শিক্ষা কমিশন বা শিক্ষা কমিটি গঠিত হয়েছে। ১৯৯১-৯৬ সালে এবং পুনরায় ২০০১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে বেশকিছু যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার সুফল দেশবাসী পাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায়, বিএনপি সরকার ২০০২ ও ২০০৩ সালে দেশে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় সমস্যাবলী চিহ্নিত করে এর উন্নতিকল্পে জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিল।

ইপসা (IPSA) প্রতিষ্ঠা

কৃষিতে উচ্চ শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য জিয়াউর রহমানের সময় Bangladesh College of Agricultural Science (BCAS) প্রতিষ্ঠিত হয়। জাপান সরকারের সক্রিয় সহযোগিতায় শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ-সুবিধা গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে কৃষি বিজ্ঞানে দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন মেটাতে সরকার ১৯৮৩ সালে কলেজটিকে স্নাতকোত্তর কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইপসাতে (IPSA: Institute of Postgraduate Studies in Agriculture) রূপান্তরিত করে।

এরই ধারাবাহিকতায়, ১৯৯১-৯৬ শাসনামলে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারও কৃষি শিক্ষার প্রসারে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেন। ১৯৯১ সালে কোর্সভিত্তিক এমএস ও পিএইচডি প্রোগ্রাম নিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় বেগম খালেদা জিয়ার হাত ধরে। ১৯৯৪ সালে রাষ্ট্রপতির এক অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে IPSA একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত হয়। ১৯৯৮ সালের ২২ নভেম্বর IPSA পুনর্গঠন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা

বর্তমান পৃথিবীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ লোক কৃষিকর্মে নিয়োজিত। বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদন্ডও হলো কৃষি যেখানে দেশের মোট শ্রমশক্তির ৫৮ ভাগ কৃষিতে জড়িত। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কৃষিকে বাংলাদেশের প্রাণ বলে অভিহিত করেন। কাজেই, বাস্তবতার আলোকেই তাঁর সময় ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)। বিভিন্ন ফসলের জাত উন্নয়ন ও উদ্ভাবন, টেকসই প্রযুক্তি উন্নয়ন ও উদ্ভাবন, কৃষি প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য ম্যানডেট নিয়ে যাত্রা শুরু করে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানটি। সরকারি পর্যায়ে কৃষি কর্মকান্ডের সূত্রপাত মূলত এখান থেকেই।

উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত ২০৮টিরও বেশি ফসলের ৫১২টি উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিডসহ) রোগ প্রতিরোধক্ষম ও বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ প্রতিরোধী জাত এবং ৯০০টিরও বেশি কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে, যা দেশে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার যোগান নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে (সূত্র : ১ জানুয়ারি ২০১৮, নয়াদিগন্ত)।

নকল প্রতিরোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা

মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে পরীক্ষাব্যবস্থায় যেসব অনিয়ম ক্যান্সার আকারে আমাদের পুরো জাতিকে মেধাশূন্য করছে তার মধ্যে অন্যতম হলো- প্রশ্ন ফাঁস বা নকল। প্রশ্ন ফাঁস আগেও হয়েছে তবে বর্তমানে তা এক মহামারি এবং যে কোনো সংক্রামক ব্যাধির চেয়েও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিষয়টি অনুধাবন করে ১৯৭৭ সালে সর্বপ্রথম সরকারি চাকরিতে লোক নিয়োগের জন্য পিএসসির মাধ্যমে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের নিয়ম প্রবর্তন করেন। উল্লেখ্য, আগে শুধু মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে আমলা নিয়োগ দেয়া হতো। শুধু মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে এভাবে আমলাতন্ত্র নিয়োগ ছিল মেধাভিত্তিক প্রশাসন তৈরির নীতির পরিপন্থি।

“খালেদা জিয়ার অঙ্গীকার, কোয়ালিটি এডুকেশনের আবিষ্কার”। নানা প্রতিবন্ধকতার ভেতরেও বিএনপি ও চারদলীয় জোট সরকার শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নয়নে কাজ করেছেন। পাশাপাশি সকল পাবলিক পরীক্ষায় নকলমুক্ত পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করে নকল প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। বিশেষত, নকল প্রতিরোধে তৎকালীন জোট সরকারের মাননীয় মন্ত্রী এহসানুল হক মিলন হয়ে উঠেছিলেন অবিসংবাদিত এক নাম। সম্প্রতি নকল ও প্রশ্নফাঁসের জালে আটকে পড়ে জাতির যখন ত্রাহি অবস্থা, তখনও তৎকালীন মন্ত্রী এহসানুল হক মিলন বিভিন্নস্থানে বক্তব্য রেখেছেন নকল প্রতিরোধ ও প্রশ্নফাঁস থেকে মুক্তির নানা পথ প্রদর্শন করে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের পর দেশমাতৃকার উন্নয়নে মনোনিবেশ করেছিলেন। দেশ বিনির্মাণে তাঁর ৫০ বছর পূর্বের গৃহীত কর্মসূচিগুলো এখনো প্রাসঙ্গিক এটাই তাঁর অনন্যতা। তিনি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য যে কর্মসূচিগুলো গ্রহণ করেছিলেন সেখানে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায় শিক্ষাখাত। ফলে তারই ধারাবাহিকতায় দেখা গেছে, শিক্ষার উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের অর্জন বহুমুখী ও ব্যাপক। বিএনপি যখনই সরকার গঠনের সুযোগ পেয়েছে তখনই সময়োপযোগী ও জনকল্যাণমুখী নানা কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করেছে। বিগত দিনগুলোতে যেমন নকল প্রতিরোধ এবং শিক্ষার সুযোগ সবার জন্য অবারিতকরণে বিএনপির ভূমিকা ছিল মুখ্য। তেমনি আগামী দিনগুলোতেও বিএনপি দেশ ও জাতির কল্যাণে শিক্ষাক্ষেত্রে তার যুগোপযোগী ভূমিকা অব্যাহত রাখবে এটাই বাংলাদেশের মুক্তিকামী জাতীয়তাবাদী জনতার প্রত্যাশা।

পরিশেষে, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কতখানি জনগণের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন তা বোঝা যায় তাঁর মর্মন্তুদ জীবনাবসানের দিনের ঢাকার দৃশ্য থেকে। তাঁর দেহাবশিষ্ট শেষবারের মতো একবার দেখার জন্য অগণিত মানুষের সেদিন ঢল নেমেছিল বিমানবন্দরে। এ প্রসঙ্গে পার্লামেন্টে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছিলেন, ৩০ মে থেকে ৩ জুন লাখ লাখ জনতা শুধু ঢাকা নয় সারাদেশে অনুভূতি প্রকাশ করেছে, প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশের মানুষের কত কাছাকাছি এবং প্রাণপ্রিয় ছিলেন। তাঁর সততার প্রতি অভিনন্দন ও শ্রদ্ধা জানাতে তিনি বলেন আমরা যে গণতন্ত্রের কথা বলি তা জিয়ার মাধ্যমে সংবিধানে গৃহীত হয়েছে। আমি নিজে যে পার্লামেন্টে এসেছি তাও জিয়ার জন্য। শহীদ জিয়ার প্রতি মানুষের যে এত ভালবাসা, এত শ্রদ্ধা, এত ভক্তি ও এত অনুভূতি ছিল তা সেদিন প্রমাণ করেছে। আমরা এমন ক্ষণজন্মা মহাপুরুষের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

-অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মোহাঃ শামীম ও অধ্যাপক ড. মোঃ মোর্শেদ হাসান খান