হারিস চৌধুরী-এক মুক্তিযোদ্ধাকে যেমন দেখেছি

হারিস চৌধুরী-এক মুক্তিযোদ্ধাকে যেমন দেখেছি

আবু সাঈদ আনসারী

২০০১ সাল, সিলেট জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে এলিটদের নিয়ে এক মত বিনিময় সভা হলো। হারিস চৌধুরী সবেমাত্র প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হয়েছেন। তিনিই এ সভার আয়োজন করলেন। আমি তখন সিলেট সরকারী আলিয়া মাদ্রাসার কামিল শেষ বর্ষের ছাত্র এবং রেডিওতে সংবাদ পাঠক ও ঘোষক হিসেবে কর্মরত, আমাকে তিনি কোরআন তিলাওয়াহ করতে বললেন। আমার ভাই তৎকালিন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব মুশফিকুল ফজল আনসারীর সঞ্চালনায় সভা অনুষ্ঠিত হলো। হারিস ভাই দরাজ কন্ঠে বক্তব্য দিলেন।

আমি তাঁকে বড় ভাই হিসেবে সম্মান করতাম। তিনিও আমাদেরকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। পড়া লেখার ব্যাপারে তাগিদ দিতেন। আমি মাদ্রাসার পাশাপাশি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্সে পড়ছি জেনে আমাকে নিয়ে Proud feel করতেন।

সিলেটের কানাইঘাটে, চা বাগানে, ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাঁর পাশে অনেক সময় কাটানোর সৌভাগ্য হয়েছে। আসলেই তিনি খুবই অমায়িক ছিলেন। তিনি নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন। তখন ‘বাংলা ভাইদের’ নিয়ে উত্তাল ছিলো দেশ। প্রায়ই তাঁকে বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকাতে কথা বলতে হতো। খুব সুন্দর করে তিনি মিডিয়া ফেইস করতে পারতেন।

দোষে গুনে মানুষ। আমি দেখেছি তাঁর চিত্ত- বিত্ত দুটিই ছিলো। তিনি খুবই মেধাবী মানুষ ছিলেন, নটোরডেম কলেজ থেকে এইচ এস সি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং লোক প্রশাসনে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

একবার আমি খুবই অসুস্হ হয়ে সিলেট এম এ জি ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি হই। তিনি বাইরে থাকায় আসতে পারেন নি তাই সিলেটের তৎকালিন ডিআইজি হানিফ সাহেবকে আমাকে দেখতে পাঠান। তাঁর বাড়িতে যতো দিন গিয়েছি, তিনি নিজে আমাদেরকে আপ্যায়ন করেছেন। ‘ব্যাবহারে বংশের পরিচয়!’ তা তাঁকে দেখলে উপলব্ধি করা যেতো। কোন দল তিনি করতেন? সেটা বিবেচ্য নয়, একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তিনি ছিলেন, দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের মানুষ তিনি ছিলেন। তাঁর যেভাবে দেশে নীরবে নিভৃতে করুণ মৃত্যু হলো, তা আমাকে খুব ভাবায়। আমি আতঙ্কিত। শোকাহত।

গত সেপ্টেম্বর মাসের ৩ তারিখে ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি ইন্তিকাল করেন বলে আমার ভাই মুশফিকুল ফজল আনসারী নিশ্চিত করেছেন তার কন্যা ব্যারিস্টার সামীরা তানজীন চৌধুরীর সাথে কথা বলে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

আমি রাজনীতি ততোটা বুঝি না। তবে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর প্রাপ্য ছিলো তিনি গার্ড অব অনারের মাধ্যমে শায়িত হবেন। কিন্তু তা তাঁর ভাগ্যে হলো না। এমন কি একজন সাধারণ মানুষের মর্যাদায় তাঁকে দাফন করা গেলো না। হায় রে স্বদেশ! জীবন বাজি রেখে অস্ত্র হাতে যারা যুদ্ধ করলো, হায় আল্লাহ! তাঁদের আজ এই পরিনতি!

জীবনের শেষ মূহুর্ত যে তাঁর অমানিশায় ঢাকা, তা কে জানতো? তবে শুনেছি তিনি শেষ বয়সে এসে দাওয়াতী কাজ করেছেন। হে আল্লাহ, তাঁর ভালো কাজগুলোকে কবুল করুন, তাঁকে ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাতবাসী করুন।

আমিন।

 

লেখক

আবু সাঈদ আনসারী

জানুয়ারী ১৫, ২০২২, পশ্চিম লন্ডন, ইংল্যান্ড।

এখানে প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্ত নিজস্ব, জাস্ট নিউজ বিডি ডটকম’র সম্পাদকীয় বিভাগের আওতাভুক্ত নয়।