সাধারণ মানুষের আস্থা, ভালোবাসা ও বিশ্বাসের ভরসাস্থল জিয়া পরিবার

সাধারণ মানুষের আস্থা, ভালোবাসা ও বিশ্বাসের ভরসাস্থল জিয়া পরিবার

কামাল হাসান জুয়েল

স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারের প্রতি মানুষের কেন এত আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসা তার বহুবিধ কারণ রয়েছে। জিয়াউর রহমানের মত মানুষ বছরে বছরে কিংবা যুগে যুগে জন্মায় না। জাতির এমন একজন ক্ষণজন্মা পুরুষের জন্য অপেক্ষা করতে হয় শতাব্দীর পর শতাব্দী। তাইতো জিয়া শতাব্দীর মহানায়ক। এমন রত্নাগর্ভা সন্তান শতাব্দীর বিস্ময়। জিয়াউর রহমানের দেশপ্রেমকে ইতিহাস কুর্নিশ করে। জাতি ও দেশ কৃতজ্ঞতা চিত্তে স্মরণ করে। আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি জিয়াউর রহমান ছিলেন জাতির দিশারী ও আলোকবর্তিকা। জিয়া দেশ প্রেম ও সততার প্রতিশব্দ। দেশপ্রেম, সৎ সাহস, সততা আর দায়িত্বশীলতার মানদন্ডে তিনি ছিলেন অনন্য একজন।

কিংবদন্তি উপন্যাসিক প্রয়াত হুমায়ূন আহমদ তার লেখা শেষ উপন্যাস 'দেয়ালে' রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সম্পর্কে লিখেছেন, জিয়াউর রহমানের পাঁচ বছরের শাসনে প্রতি মাঘের শেষে বর্ষণ হয়েছিল কিনা তা কেউ হিসাব রাখেনি, তবে এই পাঁচ বছরে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়নি‌। অতি বর্ষণের বন্যা নয়, খরা নয়, জলোচ্ছাসও নয়। দেশে কাপড়ের চাহিদা কিছুটা দূর হলো, দ্রব্যমূল্য লাগামছাড়া হলো না। বাংলাদেশের নদীতে প্রচুর ইলিশ মাছ ধরা পড়তে লাগলো। বাংলাদেশের মানুষ মনে করতে লাগলো অনেকদিন পর তারা এমন একজন রাষ্ট্রপ্রধান পেয়েছে যিনি সৎ। নিজের জন্য বা নিজের আত্মীয় স্বজনের জন্য টাকা পয়সা লুটপাটের চিন্তা তার মাথায় নেই‌। বরং তার মাথায় আছে দেশের জন্য চিন্তা‌। তিনি খাল কেটে দেশ বদলাতে চান। জিয়া মানুষটা সৎ ছিলেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। লোক দেখানো সৎ না, আসলেই সৎ। তার মৃত্যুর পর দেখা গেল জিয়া পরিবারের কোনো সঞ্চয় নেই।(দেয়াল, পৃষ্ঠা- ১৯৩)।

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সম্পর্কে মাওলানা ভাসানীকে একবার অধ্যাপক আব্দুল গফুর প্রশ্ন করেছিলেন, আপনি জিয়াউর রহমানকে কেন সমর্থন দিচ্ছেন? জিয়ার প্রতি কেন আপনার এই দুর্বলতা? প্রতিউত্তরের মাওলানা ভাসানী বললেন, আব্দুল গফুর আমি তোমার বাবার বয়সী। আমি আমার জীবনে তোমার চেয়ে বেশি সরকার ও বেশি নেতাদের দেখেছি। ব্রিটিশ আমলে দেখেছি, পাকিস্তান আমলে দেখেছি। তুমি আমাকে একটা এক্সাম্পল দেখাও, 'কোন রাজনৈতিক নেতা কম বেশি দুর্নীতি করে নাই বা দুর্নীতির প্রশ্রয় দেয় নাই এবং কোন নেতা স্বজনপ্রীতি করে নাই'। অধ্যাপক গফুর চুপ করে রইলেন।

মাওলানা বললেন,'এখন পর্যন্ত জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত দুর্নীতির কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নাই। কোনরকম স্বজন প্রীতি ও তার মধ্যে নাই। তার আত্মীয়-স্বজনকে কেউ চিনে না। তাঁদেরকে সে কোন সুযোগ-সুবিধা দেয় না। ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্টে এ ধরনের শাসককে মানুষ পছন্দ করে। একজন সৎ শাসকের তো প্রশংসাই প্রাপ্য'।(সৈয়দ আবুল মকসুদ/ ভাসানী কাহিনী, আগামী প্রকাশনী নভেম্বর ২০১২, পৃষ্ঠা ৪৭-৪৮)।

জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বরণের পর বাংলাদেশের ইতিহাসে ফিনিক্স পাখির মতো ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তার অধিকারী হয়ে আবির্ভূত হোন তাঁহার সহধর্মিণী, সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাঁর রাজনৈতিক জীবনে তিনি দেশ ও জাতির জন্য যা করেছেন, যতটা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সেজন্য তিনি দেশের ইতিহাসে মহীয়সী নারী হিসাবে নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছেন। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব থেকে শুরু করে মানুষের মুক্তির সংগ্রামে তাঁহার ভূমিকা অতুলনীয়। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বেগম খালেদা জিয়ার দূরদর্শিতা, গণতন্ত্র মুক্তির সংগ্রামের সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে তিনি ছিলেন প্রতিবাদের অগ্নিমশাল। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতির কল্যাণে তাঁহার আপোসহীন নীতি ইতিহাস কৃতজ্ঞতার সাথে সারা জীবন স্মরণ রাখবে।'মাদার অফ ডেমোক্রেসি' খ্যাত বেগম খালেদা জিয়া একজন সত্যিকারের বাংলা মা হিসাবে জাতির হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন যা তার জনপ্রিয়তার অন্যতম নিদর্শন। বাংলাদেশের ইতিহাসে বেগম খালেদা জিয়ার বড় অর্জন এই মাতৃমূর্তি। ইতিহাস থেকে এমন একজন অনন্যা মানুষকে কখনো মুছে ফেলা যায় না। ৫৬ হাজার বর্গ মাইলের বাংলাদেশের হৃদয় জুড়ে যার উপস্থিতি, তাকে কখনো কি বন্দী করে জনপ্রিয়তা ম্লান করা যায়? বাংলাদেশকে বন্দী করে রাখা যায় না। হিংসায় বশীভূত হয়ে রাতের ভোটের সরকার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে বন্দী রেখে তাঁহার জনপ্রিয়তা ও মর্যাদা আরও দ্বিগুণ বৃদ্ধি করেছে। আর তিনি ইতিহাসের পাতায় হয়েছেন মহিমান্বিত। জিয়াউর রহমান যদি বাংলাদেশী জাতীয়তা বাদের সমার্থক হোন তবে বেগম জিয়া তাহার সার্থকতা। বেগম জিয়ার তিনটি ঐতিহাসিক বাক্যই তার দেশ প্রেমের জ্বলন্ত উদাহরণ বহন করে।

'দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও ''ওদের হাতে গোলামির জিঞ্জির আর আমাদের হাতের স্বাধীনতার পতাকা''বিদেশে আমাদের বন্ধু আছে, কোন প্রভু নেই'।

সীমাহীন দুঃখ কষ্ট জেল-জুলুম ও ধ্বংস্তুপের মাঝে দাঁড়িয়ে এদেশের মানুষ আজও স্বপ্ন দেখে বেগম খালেদা জিয়া আছেন বলেই। বেগম জিয়া এখনো আছেন মানুষের আশার আলো হয়ে, মুক্তিকামী জনতার স্বপ্নের তরি হয়ে। এদেশের মানুষ প্রাণপণে এই মাতৃতূল্য নেত্রীর সুস্থতা ও স্থায়ী মুক্তি চায়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও নিন্দুকেরা বেগম জিয়ার সমালোচনা করতে পারে কিন্তু ঘৃণা করতে পারবে না কেননা তিনি এদেশের নারী নেতৃত্বের অপ্রতিদ্বন্দ্বী মডেল। খালেদা জিয়া শুধু ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্যতম অধিকারিনী।

বর্তমান রাজনৈতিক পটভূমিতে বেগম জিয়ার অনুপস্থিতিতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার জ্যেষ্টপুত্র, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান তরুণ প্রজন্মের আইকন ও মুক্তিকামী জনতার প্রেরণার বাতিঘর। তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমান ২১ শতকের বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক উদীয়মান উজ্জ্বল নক্ষত্র। জাতীয়তাবাদী দলের ভবিষ্যৎ কান্ডারী তারেক রহমান যেন শহীদ জিয়ার হুবহু প্রতিচ্ছবি। রাজনীতিতে প্রবেশের স্বল্পতম সময়ের মধ্যে তরুণ তারেক রহমান যে সাংগঠনিক প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন, সততা ও ন্যায়পরায়নতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তৃণমূল জনগোষ্ঠীর দোড়গড়ায় গিয়ে তাদের অন্তর জয় করে, শহীদ জিয়ার স্বপ্নের স্বর্নিভর বাংলাদেশ গড়তে যে অবদান রেখেছেন, তাতেই তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষ শিখরে পৌঁছে যান। তারেক রহমানের চমকপ্রদ উত্থান বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য ছিল অপরিহার্য। তারেক রহমানের দেশ প্রেম ও গণমানুষের প্রতি ভালোবাসা প্রশ্নাতীত। তাঁর আধুনিক চিন্তা, মেধা, মনন, প্রজ্ঞা ও শ্রম বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে। আগামী দিনে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও দেশের স্বার্থ তার নেতৃত্বে অটুট থাকবে বলে সাধারণ মানুষ মনে করে। তারেক রহমান তার রাজনৈতিক গুণাবলী দিয়ে আপামর জনসাধারণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। শহীদ জিয়ার মতো প্রগাঢ় ব্যক্তিত্ব, বিত্ত-নির্মোহতা, সততা ও সাহসিকতা তাঁকে গণ মানুষের নেতা ও মুক্তিকামী মানুষের মুক্তির সোপান হিসেবে পরিণত করেছে। তাইতো দেশের মানুষ আশায় বুক বেঁধে আছে তারেক রহমানের নেতৃত্বে এদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে এবং দেশের মানুষ তার মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার,ভোটাধিকার ফিরে পাবে এবং জুলুম নির্যাতনের যাঁতাকল থেকে দেশ মুক্তি পেয়ে নতুন সূর্যোদয় হবে। স্বপ্নপূরণ ও জয় হোক মুক্তিকামী জনতার। বাংলার জমিনে অমর হোক জিয়া পরিবার।

কামাল হাসান জুয়েল, সাবেক সহ শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল 

এখানে প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্ত নিজস্ব, জাস্ট নিউজের সম্পাদকীয় বিভাগের আওতাভুক্ত নয়।