নির্বাচনের পূর্বে তারা সবকিছু শেষ করতে চায় : মির্জা আলমগীর

নির্বাচনের পূর্বে তারা সবকিছু শেষ করতে চায় : মির্জা আলমগীর

ঢাকা, ৫ অক্টোবর (জাস্ট নিউজ) : সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শুধু রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর নির্ভর করে দেশ চালাচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনের আগেই সরকার দলের শীর্ষ নেতাদের মামলা দ্রুততার সাথে শেষ করার ষড়যন্ত্র করছে।

শুক্রবার বিকালে পেশাজীবীদের এক সমাবেশে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, দেশে এখন কোনো আইনের শাসন নেই।

ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) মামলায় দেখছেন যে, কী ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে তার সাথে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাহেব মামলাগুলোও একই ঘটনা ঘটছে। আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে আগে যেসব মামলা ছিলো সেই মামলাগুলোর এখন সপ্তাহে তিনদিন তারিখ দিচ্ছে। অর্থাৎ দ্রুততার সঙ্গে নির্বাচনের পূর্বে তারা সবকিছু শেষ করতে চায়। বিএনপিকে এতো ভয় কেনো? জনগণকে এতো ভয় কেনো? কেনো একটা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে চান না? কারণ আপনি জেনে গেছেন যে, জনপ্রিয়তা এখন আপনার শূন্যের কোঠায় এসে গেছে।

শুক্রবার বিকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দোতলায় শহীদ একেএম সিদ্দিক হলে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলার প্রতিবাদে এই পেশাজীবী সমাবেশ হয়।

সংগঠনের সহসভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব এজেডএম জাহিদ হোসেনের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তৃতা করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, শওকত মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন খান, ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডী, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক আবদুল মান্নান মিয়া, অধ্যাপক মোস্তাক রহিম স্বপন, অধ্যাপক এসএম রফিকুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের শামীমুর রহমান শামীম, ছড়াকার আবু ছালেহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে পেশাজীবী নেতাদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের মহাসচিব রফিকুল ইসলামও বক্তব্য দেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে মির্জা আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ এখন দেউলিয়া হয়ে গেছে। তাদের কোনো রাজনীতি নেই। ভাবতেই অবাক লাগে আওয়ামী লীগের মতো দীর্ঘকাল রাজনৈতিক সংগ্রাম করা দল তারা আজকে সম্পূর্ণভাবে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শুধু রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর নির্ভর করে দেশ চালাচ্ছে। আবার গর্ব করে বলেন বিশ্বনেতারা সব আমাকে চাচ্ছে, আমাদেরকে চাচ্ছে। যে দেশের জনগণ চায় না, বিশ্বনেতারা চাইলে কী ক্ষমতায় টিকে থাকা যায়। আমাদের নেতা শওকত মাহমুদ বললেন চসেস্কুর কথা। চসেস্কুকে তো খুঁজে পাওয়া যায়নি। আন্ডার গ্রাউন্ডে গিয়েও সে রক্ষা পায়নি। শেষ পর্যন্ত ফায়ারিং স্কোয়াডে তাকে পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে।

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি যে কথাটা বলতে চাই, জনগণের আশ-আকাংখা বাদ দিয়ে তাকে এড়িয়ে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। এখানে অবশ্যই জনগণ যা চায় সেভাবে কাজ করতে হবে। আমি বলব, অনেক হয়েছে। এনাফ ইজ এনাফ। এখন দয়া করে মাথার মধ্যে একটু শুভ বুদ্ধি নিয়ে আসুন, নিয়ে এসে একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দিন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। উনাকে মুক্তি না দিলে আপনাদেরও মুক্তি নাই, আপনারাও মুক্তি পাবেন না। উনিই শেষ ভরসা যাকে মুক্তি করলে আপনারা মুক্ত থাকতে পারবেন। একথাটা আমি সিরিয়াসলি বলছি- উনিই শেষ ভরসা, উনিই গণতন্ত্রের প্রতীক। তিনিই পারবেন একটা গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে। তাকে বের করে নিয়ে আসুন। অন্যথা এই দেশে যে সঙ্কট তৈরি হবে সেই সঙ্কট মোকাবিলা করতে আপনারা ব্যর্থ হবেন।

জাতীয় ঐক্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এই ঐক্যের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন ঘটানো যাবে। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি এই অবস্থার অবসান করতে হবে। দেশনেত্রী বেগম বেগম খালেদা জিয়া বলে গেছেন যে, আমাদেরকে একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে, জাতীয় ঐক্যের মধ্য দিয়ে এই যে ভয়ঙ্কর ফ্যাসিস্ট এক নায়কতান্ত্রিক একটা দল, যে দল একদলীয় শাসন নিয়ে আসতে চায় তাদেরকে সরাতে হবে। তাদেরকে না সরাতে পারলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব যেটা পর্যন্ত পন্ন হয়ে যাবে। সেই লক্ষ্যে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই পেশাজীবী বলুন, রাজনীতিবিদ বলুন সবাই আসুন নিজ নিজ অবস্থান থেকে আমরা আন্দোলন শুরু করি।

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার প্রসঙ্গে মির্জা আলমগীর বলেন, ২১ আগস্টের মামলা সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, আবদুস সালাম পিন্টুকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আমাদের নেতাদেরকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। দেখেন এসব করে কী করা হয়েছে? মামলার সুষ্ঠু তদন্তটা করা হয়নি। মূল যে বিষয়টা- অপরাধীদের খুঁজে বের করা সেটা তারা বের করেনি। তারা কিন্তু গোপনে আড়ালে থেকেই গেছে।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন বলেন, এই সরকার মামলাবাজ, হামলাবাজ। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে সাজা দেয়ার জন্য ২১ আগস্টের মামলায় তাকে সম্পৃক্ত করেছে তারা। তাকে মামলায় জড়িত করার জন্য মুফতি হান্নানকে গ্রেফতার করে ৪১০ দিন রিমান্ডে রেখে তাকে দিয়ে একটা স্বীকারোক্তি করিয়েছে। তারপরে কী মামলার কিছু থাকে? ওটা র মধ্যে যা কিছু এনেছে ওইটা আর টিকে না। আমাদের বক্তব্য হলো ২১ আগস্টে রায়ের আগেই রায় ঘোষণা হয়ে গেছে।

এই যোগাযোগমন্ত্রী মুখে বলেছেন যে, রায়ের পরে নাকী বিএনপির অনেক নাকী অসুবিধা সৃষ্টি হবে। রায়ের আগে যখন রায় হয়ে যায় তখন সে দেশের মানুষ বিচার ব্যবস্থার ওপর আর আস্থা থাকে না। আমি সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সভাপতি হিসেবে আজকে বলতে চাই, বিচারকবৃন্দ আপনারা নির্ভিগ্নে রায় দেবেন। আমরা পেশাজীবীরা আইনজীবীরা দরকার হলে আপনাদের পাশেই দাঁড়াবো ইনশাল্লাহ।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ বলেন, দেশে যে অবস্থা চলছে এ থেকে জনগণ পরিত্রাণ চায়। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। বাস্তব সত্য হলো বিশ্ব নেতারা এখন বেগম খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায়। এই কারণে যে, বেগম জিয়া রাজনীতিতে এমন একটা ভেজাল সৃষ্টি করে গেছেন যার জন্যে তাকে জেল খাটতে হচ্ছে- তিনি একটা ইনক্লুলসিভ ইলেকশন চান। সব বিদেশীরা এখন ইনক্লুসিভ ইলেকশন চান। শেখ হাসিনার কথা হচ্ছে একক নির্বাচন। আর বেগম জিয়ার দাবি হচ্ছে সব দল নিয়ে নির্বাচন। এটাতে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।

(জাস্ট নিউজ/একে/২০৫৭ঘ.)